নিজের সেই কীর্তির কথা মনে পড়ে রফিকের

আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবীর মতো বাংলাদেশের মোহাম্মদ রফিকও ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই নিজ দেশের প্রথম জয়ের সাক্ষী। ফাইল ছবি
আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবীর মতো বাংলাদেশের মোহাম্মদ রফিকও ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই নিজ দেশের প্রথম জয়ের সাক্ষী। ফাইল ছবি
>

দেরাদুনে কাল ‘ট্রেবল’ হয়েছে মোহাম্মদ নবীর। ক্রিকেটের তিন সংস্করণে আফগানদের প্রথম জয়ে দলের অংশ হলেন নবী। নবীর এ রেকর্ড অনেক আগেই করেছেন বাংলাদেশের রফিক। নবীর অর্জন দেখে রফিকের মনে পড়ে গেল তাঁর ট্রেবলের কথা

দেরাদুন টেস্ট কাল একসূত্রে গেঁথে দিল বাংলাদেশের মোহাম্মদ রফিক ও আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবীকে। ক্রিকেট ইতিহাসে তাঁরা দুজনই তিন সংস্করণের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই নিজ নিজ দেশের প্রথম জয়ের ম্যাচে ছিলেন।

এ রেকর্ডে এত দিনে একজন সঙ্গী পাওয়া রফিক অভিনন্দন জানালেন নবীকে, ‘এটা নবীর জন্য অনেক বড় গর্বের বিষয়। একটা খেলোয়াড় এত দিন ধরে খেলেছে, সে মাঠে থেকে দেখেছে আফগানিস্তান তিন সংস্করণেই কীভাবে জিতেছে। অনেক বড় ব্যাপার। ওদের যত খেলোয়াড় আসুক, বলতেই হবে নবী আফগানদের হয়ে একটা ইতিহাস লিখেছে।’

ইতিহাস লিখেছেন রফিকও। আগেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রথম তিন জয়ের সাক্ষী তিনি মাঠে থেকেই। তিন প্রথমের অনেক স্মৃতিই মনে পড়ে রফিকের। নবীর ‘ট্রেবল’ হওয়ার দিনে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা বাঁহাতি স্পিনার রোমন্থন করলেন সে সব স্মৃতি—

প্রথম ওয়ানডে জয়, ১৭ মে ১৯৯৮

হায়দরাবাদে কেনিয়ার বিপক্ষে সঙ্গে ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ এক পরিবর্তন আসে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে। কেনিয়ার দেওয়া ২৩৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে আতহার আলী খানের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামানো হয় রফিককে। বাকিটা ইতিহাস। ৮৭ বলে ৭৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম জয়ে রফিক রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বাংলাদেশ ম্যাচটা জেতে ৬ উইকেটে।

সেদিন হুট করে ওপেনিংয়ে নেমে কীভাবে সফল হয়েছেন, সেটি বলছিলেন রফিক, ‘৭৭ রান করেছি, বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডে জিতেছে, এটা একটা ইতিহাস। বাংলাদেশ যদি ১০০ বছর ক্রিকেট খেলে, মনে রাখতেই হবে প্রথম জয়ের কথা। আর তাতে আমার নামটা ভালোভাবেই আসবে। অবশ্য আমার নাম পরে, বাংলাদেশ প্রথম জিতেছে, সেটি আগে বলতে হবে। দেশের অর্জন অবশ্যই আগে। গর্ডন গ্রিনিজের পরিকল্পনা ছিল আমাকে শুরুতে নামানোর। আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে হেরেছিলাম। হায়দরাবাদে কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে বুলবুলকে (আমিনুল ইসলাম) সঙ্গে নিয়ে গর্ডন আমাকে বলল, তুই নাম। যেভাবে খেলিস, সেভাবেই খেলবি। আমি রাজি হয়ে গেলাম। আর এভাবেই ইতিহাস হয়ে গেল!’

প্রথম টেস্ট জয়, জানুয়ারি ২০০৫

কবে প্রথম টেস্ট জিতবে, চার বছর ধরে শুনতে থাকা প্রশ্নটার উত্তর বাংলাদেশ দেওয়ার সুযোগ পেল ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে, চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে। অভিষেকের ৩৪ টেস্টের অপেক্ষা শেষে জিম্বাবুয়েকে ২২৬ রানে হারিয়ে বাংলাদেশ পেল প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা এনামুল হক জুনিয়র হলেও প্রথম টেস্ট জয়ে রফিকের অবদানও মনে রাখতে হবে সমানভাবে। প্রথম ইনিংসে আটে নেমে করেন ৬৯ রান। আর বোলিংয়ে নেন ৫ উইকেট।

এত ভালো খেলার পরও ছোট্ট একটা আফসোস যেন থেকে গেছে রফিকের, ‘প্রথম ইনিংসে ফিফটি করলাম, ৫ উইকেটও। ব্যাটিংয়ে দুটি ভালো জুটি গড়লাম মাশরাফি আর পাইলটের সঙ্গে। পরে হ্যামস্ট্রিং চোটে পড়লাম। বোলিং আর করতে পারলাম না। স্বচ্ছন্দে বোলিং করতে পারলে সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হওয়ার সুযোগ ছিল। চট্টগ্রামে চোট নিয়েই ফিল্ডিং করছিলাম। পরে সবাই বলল খারাপ অনুভব করলে মাঠের বাইরে চলে যেতে। আমি চলে এলাম। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ে অবদান রাখতে পেরেছিলাম, এতেই অনেক খুশি। এসব তো ইতিহাস।’

প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়, ২৮ নভেম্বর ২০০৬

খেলাটা তখন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে খুব একটা পরিচিত নয়। ২০ ওভারের ক্রিকেট বিশ্বেই চালু হয়েছে বেশি দিন হয়নি। খুলনায় বাংলাদেশের অভিষেক টি-টোয়েন্টি আয়োজনও হয় খুব সাদামাটাভাবে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের একাদশ সাজানো হয় বেশির ভাগ তরুণ খেলোয়াড় দিয়ে। এ তরুণদের মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ছিলেন রফিক। ব্যাটিংয়ে ৫ বলে ১৩ রানের পর বোলিংয়ে ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে পেলেন ১ উইকেট। বাংলাদেশ ম্যাচটা জিতল ৪৩ রানে।

ওটাই হয়ে থাকল রফিকের প্রথম ও শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। রফিকের কোনো আফসোস নেই, এক ম্যাচ খেলেই যে ইতিহাস লেখা হয়ে গেছে তাঁর, ‘তখন খেলাটা অচেনা ছিল আমাদের কাছে। অবশ্য আমার একটু অভিজ্ঞতা ছিল। কলকাতা লিগে চার দিনের ম্যাচের সঙ্গে কিছু সংক্ষিপ্ততম সংস্করণের ম্যাচ খেলতাম। তবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তেমন অভিজ্ঞতা ছিল না আমাদের কারও। ওই প্রথম খেললাম। ঠিকমতো নিয়মকানুনই জানা ছিল না! খেলে দেখি কী হয়, এভাবেই খেলা। ওই ম্যাচটাই আমার প্রথম ও শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। আরও কিছুদিন খেলতে পারতাম। ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফির আগে যে গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছিলাম, ওটার ব্যথা মাঝেমধ্যে ফিরে আসত। এ কারণে টি-টোয়েন্টি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। আর নতুনদেরও সুযোগ করে দিতে চেয়েছি।’