সৌম্য-মোসাদ্দেকদের ব্যাটে ধারাবাহিকতা নেই এ কারণে?

সৌম্যর টেকনিক নিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ আছে আবাহনী কোচ খালেদ মাহমুদের। ছবি: প্রথম আলো
সৌম্যর টেকনিক নিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ আছে আবাহনী কোচ খালেদ মাহমুদের। ছবি: প্রথম আলো
>সৌম্য সরকার, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মোসাদ্দেক হোসেন, সাব্বির রহমানদের মতো তরুণ ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে প্রায়ই। বাংলাদেশ দলের তরুণ ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক না হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ খুঁজে পেয়েছেন খালেদ মাহমুদ

বাংলাদেশ দলের তরুণ ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিকতা নিয়ে সব সময়ই ভাবতে হয় টিম ম্যানেজমেন্টকে। সৌম্য সরকার, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মোসাদ্দেক হোসেন, সাব্বির রহমানদের মতো তরুণদের ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে প্রায়ই। তবে এ প্রশ্ন এখন শুনতে হয় না তামিম-সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা। এক-দুই ম্যাচ খারাপ করলে তৃতীয় কিংবা চতুর্থ ম্যাচে ঠিকই জ্বলে উঠবেন—এমন একটা ভরসার জায়গা তৈরি করে ফেলেছেন সিনিয়র ব্যাটসম্যানরা।

কিন্তু তরুণ ব্যাটসম্যানদের ওপর এ ভরসা কেন রাখা যায় না? লিটন যেমন গত এশিয়া কাপের ফাইনালে যে দুর্দান্ত ইনিংসটা খেললেন, অমন একটা ইনিংস আবার কবে দেখা যাবে, সেটির কোনো নিশ্চয়তা নেই। সৌম্য সরকার গত অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে যে অসাধারণ সেঞ্চুরি করলেন, তেমন কিছু আবার কবে দেখা যাবে তাঁর ব্যাটে? সাব্বির রহমান নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরিটা করতে সময় নিয়েছেন পাঁচ বছর। নাজমুল হোসেন শান্ত, মোসাদ্দেক হোসেন জাতীয় দলে পা রেখেও ধরে রাখতে পারেননি জায়গা। তরুণেরা কেন ধারাবাহিক নন, সেটির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ খুঁজে পেয়েছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক ও আবাহনী কোচ খালেদ মাহমুদ।

মাহমুদ মনে করেন, টেকনিকে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে গিয়ে অনেক তরুণ ব্যাটসম্যান খেই হারিয়ে ফেলছেন, ‘অনেক দিন পর এবার সৌম্যকে পেলাম আবাহনীতে। নেটে কাজ করার সময় আমি ওদের অনুমতি নিয়ে নিই। যেহেতু জাতীয় দলে খেলে। সেখানে উন্নত কোচিং স্টাফ আছে। আমি কিছু বললে সেটি নেবে কি না, তাদের ব্যাপার। তবে আমার চোখে ভুল ধরা পড়লে বলি, তোর এখানে সমস্যা হচ্ছে। ব্যাট পেছনে থেকে যাচ্ছে, একটু দেরিতে ব্যাট আসছে, এ কারণে সৌম্যর দেখা গেল আগের মতো টাইমিংয়ে সমস্যা হচ্ছে। তামিম, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ কেন ধারাবাহিক? কত কোচ ওদের জীবনে এসেছে, কিন্তু একটা টেকনিকই ধরে রেখেছে। নিজেদের টেকনিক নিয়ে খুব একটা ঘাঁটাঘাঁটি করেনি। পরামর্শ নিলে ওরা একটা কোচের কাছ থেকে ধারাবাহিক পরামর্শ নেয়, তার কথা শোনে। একবার জেমি সিডন্স হাই ব্যাক লিফটে ব্যাটিং করার পরামর্শ দিল। রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) সেটি করতে চায়নি। নিজের টেকনিকেই অটল থেকেছে। থেকেছে বলেই আজ সে এ পর্যায়ে এসেছে। আমরা যে বলি আমাদের ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিকতা নেই, এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ।’

টেকনিক বদলাতে গিয়ে কীভাবে খেই হারিয়ে ফেলেন, কাল সেটির আরও বিশদ ব্যাখ্যা দিলেন মাহমুদ, ‘এটা ঠিক, একেক কোচের একেক চিন্তা, একেক দর্শন। যখন আমাদের ক্রিকেটাররা বিপিএল বা এমন চাপের ম্যাচ খেলে, বিদেশি কোচদের অধীনে কাজ করে, তখন তাদের পরামর্শ মেনে হয়তো টেকনিক বদলাতে চায়। ছোটখাটো টেকনিক বদলে যখন রান পায় না, তখন চাপে পড়ে যায়। ছন্দ হারিয়ে ফেলে। বয়সে জুনিয়র হলেও ওদের কথা বলতে হবে। কোচকে বলতে হবে, এই টেকনিকে আমি স্বচ্ছন্দ নই। আমি যে টেকনিকে রান করি, সেটাতেই থাকতে চাই। টেকনিকের যেখানে ভুল থাকে, যদি সেটা নিয়মিত বদলাতে শুরু করেন, তখন ব্যাটিংয়ে অনেক প্রভাব পড়ে।’

একজন কোচ হিসেবে মাহমুদ সব সময়ই মনে করেন কোচরা তাঁর ছাত্রের ভালোর জন্যই টেকনিক বদলে পরামর্শ দেন। কিন্তু সেটি নিজের জন্য কতটা লাগসই, এ বিবেচনা করতে হবে খেলোয়াড়কেই। এ ক্ষেত্রে কোচের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা বা উচ্চবাচ্য নয়, বিনয়ের সঙ্গেই নিজের স্বচ্ছন্দের কথা বলার পরামর্শ মাহমুদের।