তরুণেরা হাসি ফোটালেন জার্মানির মুখে

জার্মানির জয়ের সারথি তরুণেরাই। ছবি: এএফপি
জার্মানির জয়ের সারথি তরুণেরাই। ছবি: এএফপি
>২০২০ ইউরোর বাছাইপর্বের ম্যাচে কাল জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে জার্মানি, বেলজিয়াম, ওয়েলস ও রাশিয়ার মতো দল। ওদিকে হোঁচট খেয়েছে বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়া।

গতকাল চেলসির উইঙ্গার এডেন হ্যাজার্ডের জন্য বিশেষ এক দিন ছিল। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে শততম ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন তিনি! সে উপলক্ষকে হ্যাজার্ড স্মরণীয় করে রেখেছেন গোল করে। হ্যাজার্ডের দল বেলজিয়ামও ইউরো ২০২০-এর বাছাইপর্বে শুভসূচনা করেছে জয় দিয়ে।

সাইপ্রাসের বিপক্ষে ম্যাচটা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্টদের জন্য তেমন কঠিন কোনো কিছু ছিল না। ম্যাচের শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল সেটি। ম্যাচের দশ মিনিটে ক্রিস্টাল প্যালেসের স্ট্রাইকার মিচি বাতশুয়াইর পাস থেকে দুর্দান্ত এক বাঁকানো শটে গোল করেন হ্যাজার্ড। তার ঠিক আট মিনিট পর বাতশুয়াই নিজেই বেলজিয়ামের ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। বাতশুয়াইর খেলার যে অনেক উন্নতি হয়েছে, আর এর শতভাগ কৃতিত্ব সাবেক ফরাসি স্ট্রাইকার থিয়েরি অঁরির। সদ্য মোনাকো থেকে ছাঁটাই হওয়া অঁরি মোনাকোর দায়িত্ব নেওয়ার আগে ছিলেন বেলজিয়ামের সহকারী কোচ। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই স্ট্রাইকারের সাহচর্যে এসে অনেক কিছুই শিখেছেন বাতশুয়াই-লুকাকুরা। সেটির প্রতিফলন কালকে আবারও দেখা গেল বাতশুয়াইর খেলার মধ্যে। তা ছাড়া কালকে বেলজিয়ামের খেলার মধ্যে আরেকটা ইতিবাচক দেখা গিয়েছে, সেটা হলো একজন আদর্শ রাইট উইংব্যাকের উপস্থিতি। সব পজিশনে বেলজিয়াম দলে আদর্শ খেলোয়াড় থাকলেও ফুলব্যাকের জায়গায় খেলানোর মতো আদর্শ কাউকে পেত না বেলজিয়াম। এদিন আটালান্টার রাইট উইংব্যাক টিমোথি ক্যাসতানিয়ে দারুণ খেলে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই জায়গায় পিএসজির টমাস মুনিয়ের ছাড়াও দরকার হলে তাঁর ওপর ভরসা রাখতে পারেন কোচ রবার্তো মার্টিনেজ।

কাল হ্যাজার্ডের শততম ম্যাচ খেলার দিন হলেও তর্কাতীতভাবে দিনের সবচেয়ে বড় ম্যাচ ছিল নেদারল্যান্ডস ও জার্মানির মধ্যকার ম্যাচটা। বিশ্বকাপ না খেলতে পারা নেদারল্যান্ডস তো বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর থেকেই উড়ছে। উয়েফা নেশনস কাপের সেমিফাইনালে উঠেছে জার্মানির মতো দলকে টপকে। ইউরোর বাছাইপর্বেও এই দুই দল একই গ্রুপে। ওদিকে বিশ্বকাপ থেকেই জার্মানির অবস্থা বেশ খারাপ। বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়ার পাশাপাশি দলের ভেতরে-বাইরে বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে তারা। দলের কোচ জোয়াকিম লো এত দিন অভিজ্ঞ সেনানীদের ওপর আস্থা রাখলেও উয়েফা নেশনস কাপে ধাক্কা খাওয়ার পর বুঝেছেন, নতুনদের জায়গা দেওয়ার সময় এসেছে। ফলে বেশ কয়েক দিন আগে ম্যাটস হামেলস, জেরোমে বোয়াটেং ও টমাস মুলারের মতো খেলোয়াড়দের জানিয়ে দিয়েছিলেন, জাতীয় দলে আর ডাকা হবে না তাদের। গতকাল ম্যাচ শুরুর আগে জার্মানির একাদশ দেখেও সেটিই মনে হলো, অবশেষে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লো-ও আধুনিক হতে প্রস্তুত, দলে তরুণ খেলোয়াড় খেলাতে প্রস্তুত। জার্মানি দলের মূল স্ট্রাইকার এখন আরবি লাইপজিগের টিমো ভার্নার, যিনি এখন তেমন ফর্মে নেই। তিনি যেহেতু ফর্মে নেই, তাই শুধুমাত্র খেলানোর জন্যই তাঁকে খেলাননি লো। ফলে স্ট্রাইকারহীন একটা একাদশ সাজিয়েছিল জার্মানি। ওদিকে স্ট্রাইকার সমস্যায় ভুগছে নেদারল্যান্ডসও। ফলে তারাও বেশ কয়েক দিন ধরে স্ট্রাইকার ছাড়াই খেলে যাচ্ছে। মেমফিস ডিপাই, রায়ান বাবেল, স্টিফেন বার্গউইন ও কুইন্সি প্রমেসের মধ্যে কেউই প্রথাগত স্ট্রাইকার না হলেও তাদের ‘ফলস নাইন’ হিসেবে খেলিয়ে যাচ্ছেন ডাচ কোচ রোনাল্ড কোম্যান। আর সেটার সুফলও পাচ্ছেন তিনি। তাই দেখেই বোধ হয় আগ্রহী হয়েছিলেন লো। ৩-৫-২ ছকে বায়ার্ন মিউনিখের রাইটব্যাক জোশুয়া কিমিখকে বলা হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদের টনি ক্রুসের সঙ্গে জার্মান মিডফিল্ডের হাল ধরতে। বায়ার্নের কোচ থাকার সময় পেপ গার্দিওলা এই কিমিখকে অনেকবার সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে খেলিয়েছিলেন, বল পায়ে কিমিখের স্বাচ্ছন্দ্য দেখে। একই কাজ কাল করেছেন লো। গোলবারে অভিজ্ঞ ম্যানুয়েল নয়্যার থাকলেও, সেই নয়্যার আর ক্রুস ছাড়া বলতে গেলে বাকি সবাই-ই আনকোরা ছিলেন। রক্ষণভাগে পিএসজির থিলো কেহরার, লেফট উইংব্যাক হিসেবে হফেনহেইমের নিকো শুলজ, মিডফিল্ডে বায়ার্নের লেওন গোরেতজকা ও আক্রমণে সার্জ গেন্যাব্রি স্ট্রাইকারহীন একদম নতুন এক জার্মানিকে দেখেছে কাল বিশ্ব। এবং এই আনকোরা খেলোয়াড়েরাই কালকে হাসি ফুটিয়েছেন লো এর মুখে। প্রথাগত কোনো স্ট্রাইকার না থাকার কারণে গেন্যাব্রি, লিরয় সানে ও নিকো শুলজদের ক্রমাগত অবস্থান পরিবর্তন বেশ ভুগিয়েছে নেদারল্যান্ডসের শক্তিশালী রক্ষণভাগকে। ফলে প্রথমার্ধেই সানে ও গেন্যাব্রির গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় তারা।

কিন্তু নেদারল্যান্ডসও হাল ছাড়ার পাত্র নয়। বিশ্বকাপের পর থেকেই তারাও যে সেজেছে নতুন করে। তার প্রতিফলনই দেখা গেল কালকে আবারও। দ্বিতীয়ার্ধে উদ্যমী ডাচরা উইঙ্গার মেমফিস ডিপাই ও ডিফেন্ডার ম্যাথিস ডি লিটের গোলে সমতা ফেরায়। তবে শেষ হাসি হাসে জার্মানরাই। পুরো ম্যাচে লেফট উইংব্যাক থেকে ডাচদের তটস্থ রাখা নিকো শুলজ ম্যাচটা আরও স্মরণীয় করে রাখেন একদম শেষ মুহূর্তে গোল করে দলকে জিতিয়ে। এই গ্রুপের আরেক ম্যাচে জনি এভান্স ও জশ ম্যাগেনিসের গোলে বেলারুশকে ২-১ গোলে হারিয়েছে উত্তর আয়ারল্যান্ড।

এদিকে ক্রোয়েশিয়াকে বিশ্বকাপের ফাইনালে নিয়ে যাওয়া মদরিচ, রাকিতিচ, পেরিসিচ, রেবিচ, লভরেন, ব্রোজোভিচ, ভিদা রা খেলেও জেতাতে পারেননি ক্রোয়েশিয়াকে। ম্যাচের শুরুতে রেবিচের গোলে ক্রোয়েশিয়া এগিয়ে গেলেও পুসকাস, ককসিস, জিবোর, হিদেকুটি ও কুবালার দেশ হাঙ্গেরি পরে দুই গোল দিয়ে ম্যাচটা জিতে গিয়ে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে তাদের অতীত ঐতিহ্যকে। এদিকে এই গ্রুপের আরেক ম্যাচে স্লোভাকিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়েছে ওয়েলস। গ্যারেথ বেল, জো অ্যালেন বা হ্যারি উইলসন নন, এই ম্যাচে ওয়েলসের নায়ক ছিলেন প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা, সোয়ানসির তরুণ উইঙ্গার ড্যানিয়েল জেমস।

দুর্দান্ত ফর্মে আছে পোল্যান্ড। হঠাৎ করে রবার্ট লেফান্ডোফস্কি ছাড়াও ক্রিস্তফ পিওন্তেক ও আরকাদিউশ মিলিকের মতো দুজন তুখোড় ফর্মে থাকা স্ট্রাইকার পেয়ে গেছে তারা। ফলে সেটার সুফলও পাচ্ছে বেশ। কালকে লাটভিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়েছে তারা। এই গ্রুপের আরেক ম্যাচে স্লোভেনিয়া ও উত্তর মেসেডোনিয়া।

বিশ্বকাপের দুর্দান্ত ফর্ম বাছাইপর্বেও বজায় রেখেছে রাশিয়া। রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক উইঙ্গার ডেনিস চেরিশেভের জোড়া গোলে কাল কাজাখস্তানকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে তারা। চীনা ক্লাব গুয়াংজু রেনহেতে খেলা এক ইসরায়েলি স্ট্রাইকারের আলোয় ঝলসে গেছে অস্ট্রিয়া। এরান জাহাভির হ্যাটট্রিকে অস্ট্রিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়েছে ইসরায়েল, দুই গোল করেও দলকে বাঁচাতে পারেননি ওয়েস্ট হ্যামের স্ট্রাইকার মার্কো আরনটোভিচ।