প্রবাসী বাঙালিরা হারিয়ে দিলেন ঢাকার দর্শকদের!
বাহরাইনে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব ২৩ বাছাই পর্বে খেলতে গিয়ে দারুণ সমর্থন পাচ্ছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ২৩ ফুটবল দল।
‘সকাল থেকে মনটা ছটফট করতেছিল বিকালে খেলা দেখতে যেতে পারব কি না! অফিস ফাঁকি দিয়ে চলে গেলাম। ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট ড্রাইভ করে গিয়ে ৩০ মিনিট খেলা দেখে মনের তৃপ্তি মেটালাম।’
ক্যাপশনটির সঙ্গে গ্যালারিতে দাঁড়ানো নিজের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন মুসাফির জাকারিয়া। বাহরাইনে অবস্থানরত প্রবাসী এই বাঙালির ছোট ক্যাপশনেই ফুটে উঠেছে নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশের খেলা দেখার আকুলতা ও শেষ পর্যন্ত উপভোগ করতে পারার আনন্দ।
হাজার হাজার প্রবাসী বাঙালি নিজের দেশকে সমর্থন দেওয়ার জন্য গতকাল হাজির হয়েছিল বাহরাইনের খলিফা স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ থেকে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার দূরে লাল-সবুজ পতাকার দখলে যেন হয়ে উঠেছিল দেশের কোনো স্টেডিয়াম। যে মাঠে বাংলাদেশের ফুটবলারদের পায়ে বল গেলেই গ্যালারি থেকে রব উঠে ‘বাংলাদেশ...বাংলাদেশ’। মাহবুবুর রহমান সুফিল, মতিন মিয়াদের প্রতিটি মুভে গলা ফাটিয়েছেন তাঁরা। শক্তিশালী ফিলিস্তিনির বিপক্ষে ১-০ গোলে হারলেও প্রিয় দলের লড়াই প্রাণভরে উপভোগ করেছেন গ্যালারিতে বসে। বিদেশের মাঠে গ্যালারি থেকে এমন অনুপ্রেরণা পেয়ে রোমাঞ্চিত খেলোয়াড়েরাও।
তবে গতকালের ম্যাচটি স্থানীয় সময়ে বিকেলে অনুষ্ঠিত হওয়ায় দর্শক সমাগম ছিল তুলনামূলক কম। আগের ম্যাচটি স্থানীয় সময়ে রাতে অনুষ্ঠিত হওয়ায় কাজকর্ম শেষে গ্যালারিতে নেমেছিল প্রবাসী বাঙালির ঢল। স্বাগতিকদের বিপক্ষে গ্যালারির প্রায় ৯৫ ভাগ দর্শকই গলা ফাটিয়েছে বাংলাদেশের জন্য। ভাবা যায়! পরপর দুই ম্যাচে দর্শকদের দৃশ্য জোড়া লাগালে একটি প্রশ্ন উঠেই যায়, বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে ঘরের বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এমন সমর্থন কি পায় বাংলাদেশ?
উত্তরটা অবশ্যই না। ফলে বাহরাইনের প্রবাসীদের কাছে ঢাকার দর্শকদের একটা পরাজয়ের বার্তাই ফুটে উঠেছে। দেশের প্রতি ভালোবাসায় প্রবাসীরা অবশ্য অনেক সময়ই এভাবে বাংলাদেশে বসবাসকারীদের হারিয়ে দেয়!
ভরা গ্যালারিতে গলা ফাটানো সমর্থন পেলে ফুটবলাররাও কতটা উজ্জীবিত হন, তার প্রমাণ মিলেছে এই দুই ম্যাচে। বিদেশ বিভুঁইয়েও দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ। হেরেছে, তবে এই পরাজয়েও ক্লেদ নেই, থাকতে পারে গর্ব; ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদ।
এই দর্শকদের কী সার্টিফিকেট দিয়েছেন বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে, তা ইংলিশ কোচের নিজের মুখ থেকেই শুনুন, ‘প্রবাসীদের কাছ থেকে দারুণ সমর্থন পেয়েছি, যা খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করেছে। মনে হচ্ছিল দেশের মাটিতে খেলছে বাংলাদেশ। এমন সমর্থনের জবাবে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের পক্ষ থেকে তাদের শুধুই ধন্যবাদ জানালে কম হবে।’
প্রবাসীদের এমন সমর্থন দেখে অবাক হয়েছেন বাংলাদেশ দলের সহকারী কোচ স্টুয়ার্ট ওয়াটকিসিও। ইংলিশ এই কোচ এতটাই আপ্লুত হয়েছেন, বাহরাইনের বিপক্ষে ম্যাচের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দর্শকদের একটি ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, ‘বাহরাইনে অনূর্ধ্ব-২৩ দলের জন্য অবিশ্বাস্য সমর্থন। মোহনীয় পরিবেশে পরিপূর্ণ স্টেডিয়াম। শক্তিশালী বাহরাইনের বিপক্ষে হারলেও আমরা তাদের দুর্দান্ত পারফরমেন্স উপহার দিয়েছি।’
প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় সার্টিফিকেট দিয়েছেন দলের অন্যতম সহকারী কোচ মাসুদ কায়সার, ‘আমি আমার জীবনে অতিথি দলের এমন সমর্থন পাওয়া আগে কখনোই দেখিনি।’
এই পরাজয়ে উজ্জীবিত হয়ে এবার ঢাকার দশর্কও গা–ঢাকা থেকে বের হয়ে এলেই হয়! খেলাটা ফুটবল বলেই গ্যালারিতে সমর্থন আরও বেশি জরুরি। সমর্থকেরাই যে দলের দ্বাদশ খেলোয়াড়!