জিতলেন অশ্বিন, হারল ক্রিকেট

এই সেই মুহূর্ত। সংগৃহীত ছবি
এই সেই মুহূর্ত। সংগৃহীত ছবি
রাজস্থান রয়্যালসকে ১৪ রানে হারিয়েছে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব


১৩তম ওভারের শেষ বল। জয় থেকে ৭৭ রান দূরে রাজস্থান রয়্যালস। বল করতে যাচ্ছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। বল করতে গিয়ে দেখলেন, উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে আছেন ননস্ট্রাইকে থাকা বাটলার। বল না করে স্টাম্প ভেঙে দিলেন। হতভম্ব বাটলারের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে আম্পায়ার–তৃতীয় আম্পায়ারের সহযোগিতা চাইলেন। আউট! ব্যস, জমে উঠল বিতর্ক।

‘মানকাড়’ আউট ইদানীং আর খুব একটা বিরল দৃশ্য নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনূর্ধ্ব-১৯ দল ২০১৬ বিশ্বকাপেই এমন কাণ্ড করেছিল। সেবার যে কারণে আলোচনা হয়েছিল, এবারও সে কারণেই আলোচনা। সাধারণত, এভাবে কাউকে আউট করার আগে ব্যাটসম্যানকে সতর্ক করে দেওয়ার ভদ্রতা দেখানো হয়। কিন্তু অশ্বিন প্রথমবারেই এ কাজ করেছেন। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, বাটলার যে রান নেওয়ার জন্য উইকেট ছেড়ে বেরিয়েছিলেন, তা–ও নয়।

মানকাড় আউটের ক্ষেত্রে যে যুক্তি ব্যবহার করা হয়, সেটা হলো ব্যাটসম্যান আগে বের হয়ে রান নেওয়ার ক্ষেত্রে অবৈধ সুবিধা নেন। কিন্তু অশ্বিন বল ছোড়ার ভঙ্গি করার সময়ও বাটলার ক্রিজে ছিলেন। অশ্বিন হঠাৎ করে থেমে যান, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর স্টাম্প ভেঙেছেন। সেদিকে বাটলারের নজর দেওয়া সম্ভব হয়নি। বাটলার এ ক্ষেত্রে স্বভাবজাত ভঙ্গিতে বোলারের ফলোথ্রু অনুসরণ করছিলেন। ফলে, অবচেতনভাবে দাগ থেকে বের হয়ে গিয়েছিল তাঁর ব্যাট।

এমন ক্ষেত্রে আম্পায়ারের করার কিছু থাকে না। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থে ও ভদ্রতার খেলা বলে ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে আনলে আলাদা কথা। কিন্তু অশ্বিন নিজেই যে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের অধিনায়ক। ক্ষুব্ধ বাটলার প্রশ্ন ছুড়ে দিলেও অশ্বিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভদ্রতা কিংবা ক্রিকেটীয় চেতনা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই তাঁর। ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁকে অধিনায়ক বানিয়েছে দল জেতানোর জন্য।

জস বাটলারকে এ ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে হয়তো আউট করতে পারত না পাঞ্জাব। প্রথম ইনিংসে ক্রিস গেইলের ৪৭ বলের ৭৯ রানের ঝড়ও যে ভুলিয়ে দিচ্ছিলেন বাটলার। গেইল ও সরফরাজ খানের (৪৬*) সুবাদে ১৮৪ রান তোলা পাঞ্জাব তখন পরাজয়ের ক্ষণ গুনছিল। কারণ, অজিঙ্কা রাহানেকে (২৭) নিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ৭৮ রান এনে দিয়েছেন বাটলার, সেটাও মাত্র ৮ ওভারেই। ম্যাচটা বাটলার নিজেই শেষ করে আসার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু অশ্বিনের ওই কাণ্ডে তা আর হলো না। ৪৩ বলে ৬৯ রানে ফিরতে হলো বাটলারকে। ওই ওভারেই কোটা পূরণ করে ফেলা অশ্বিন মাত্র ২০ রান দিয়ে নিজের দায়িত্ব সম্পন্ন করলেন।

শেষ ৪ ওভারে ৩৯ রান দরকার ছিল। এমন সময় আবার নাটক জমে উঠল। স্যাম কুরানের প্রথম তিন বলে মাত্র ২ রান এল। চতুর্থ বলে একস্ট্রা কভার দিয়ে উড়িয়ে মেরেছিলেন স্মিথ। অনেক দূর থেকে দৌড়ে এসে বাতাসে ভেসে বলটা বুঝে নিলেন লোকেশ রাহুল। ২০ রানে থামল স্মিথের আইপিএল প্রত্যাবর্তন ইনিংস। ষষ্ঠ বলেই আউট স্যামসনও (৩০)! মাত্র ৪ রানে দুই উইকেট দিয়ে ম্যাচটা নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে দিলেন কুরান।

পরের ওভারে এক ছক্কা মেরেই আউট বেন স্টোকস। মাত্র ৬ বলে ৩ উইকেট হারাল রাজস্থান। সেটা ৯ বলে ৪ উইকেট হয়ে গেল ১৮তম ওভারের শেষ বলেই। ৯ বলে ১০ রান তুলতেই রাজস্থানের মিডলঅর্ডার ধসে পড়ল! সব কটি উইকেটই একই ভঙ্গিতে, ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন সবাই।

শেষ ২ ওভারে ৪ উইকেটে ২৭ রান দরকার ছিল রাজস্থানের। ৩ উইকেট হারিয়ে শুধু ১২ রানই তুলতে পেরেছে তারা।