এই আউটের নাম কেন ক্রিকেটারের নামে?

এ কী করলেন অশ্বিন! ছবি ভিডিও থেকে
এ কী করলেন অশ্বিন! ছবি ভিডিও থেকে
রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সৌজন্যে আবার আলোচনায় ক্রিকেটের অদ্ভুত এক আউট। যে আউটের নাম মানকাড। অশ্বিনের দেশেরই সাবেক ক্রিকেটার ভিনু মানকড়ের নামে নামকরণ হয়েছে এই আউটের। কেন?


প্রকৃতি অনেক সময়ই বড্ড খেয়ালি হয়ে ওঠে কারও কারও প্রতি। কখনো নিষ্ঠুর, কখনো কৌতুকপ্রিয়। তাই তো অর্থনীতির সংস্কারক একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হলেও মানুষ বিল ক্লিনটনকে বরং মনে রাখে মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে, জিনেদিন জিদানের কথা মনে করলে প্রথমেই মনে করে মাতেরাজ্জিকে ঢুস মারার কথা, ব্র্যাডম্যানের হাজারো প্রাপ্তির ভিড়েও শেষ ইনিংসে ৪ রানের আফসোসটিই অনেক বড় মনে হয়, হ্যান্সি ক্রনিয়ের অবদান লোকে ভুলে যায় প্রতারণার কথা মনে করে।

ভেঙে যাওয়ার আগে অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে টিকে থাকা পঙ্কজ রায়ের সঙ্গে করা ৪১৩ রানের রেকর্ড ওপেনিং জুটি, টেস্ট ক্রিকেটে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত প্রতিটি পজিশনে ব্যাট করা মাত্র তিনজন ক্রিকেটারের একজন, একই টেস্টে শত রান এবং পাঁচ উইকেট শিকার করা প্রথম ভারতীয়, অ-ইংরেজ হিসেবে লর্ডসে ব্যাটিং এবং বোলিং উভয় অনার্স বোর্ডে নাম ওঠা তিনজন খেলোয়াড়ের একজন, দুই ইনিংস মিলিয়ে ১২ উইকেট নিয়ে ভারতের প্রথম টেস্ট ম্যাচ জয়ে অসামান্য অবদান, সুনীল গাভাস্কার ভেঙে দেওয়ার আগ পর্যন্ত ২৭ বছর টিকে থাকা কোনো ভারতীয় ব্যাটসমানের ২৩১ রানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড—এত এত সব চমকপ্রদ অর্জন। তা-ও বোধ হয় যথেষ্ট ছিল না। বরাবরই নতুন কিছু করার প্রবণতা থেকেই হয়তো মুলবান্ত্রাই হিম্মতলাল মানকড় ওরফে ভিনু মানকড় গড়েছেন অনেক কীর্তিই। আর এই একটা ‘নতুন কিছু’ই বাকি সব অর্জনকে পাশ কাটিয়ে মানকড়কে অমর করে দিল ক্রিকেট বিশ্বে।

ক্রিকেট খেলার কোনো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দুই ব্যাটসম্যানই যখন রানের জন্য মরিয়া, বোলার বল করার আগেই ননস্ট্রাইকার ব্যাটসম্যান পপিং ক্রিজ ছেড়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকেন দৌড়ে ক্রিজ কভার করতে একটু সুবিধা পাওয়ার আশায়। বোলার বল ছোড়ার আগেই ব্যাটসম্যান বেরিয়ে গেছেন ক্রিজ থেকে, সেই সুযোগে বল না ছুড়ে বোলার ফেলে দিলেন বেল। হয়ে গেল রানআউট—এটিকেই বলে মানকাড আউট।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি প্রথম ঘটেছিল ১৯৪৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়া-ভারত ম্যাচে। মানকড় অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার বিল ব্রাউনকে এভাবে আউট করেছিলেন বলে তাঁর নামে এই আউটের নামকরণ হয়ে যায়। ব্রাউনকেই মানকড় একই সফরে একটা গা-গরম করা ম্যাচেও একইভাবে আউট করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়ায় মানকড়ের এই ‘অখেলোয়াড়সুলভ’ আচরণের জন্য সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এবং এই ঘটনার পর থেকে এই ধরনের আউটকে রানআউটের চেয়ে বরং বলা হয় ‘মানকাড আউট’। মানকড়ের নামের বানান ইংরেজিতে লেখা হয় Mankad। এ কারণে এই আউটকে বলা হয় মানকাডেড বা মানকাডিং।

পরে আইসিসি এই মানকাড আউটের প্রবণতা কমাতে আইন কিছুটা পরিবর্তন করলেও ক্রিকেট আইনের ৪২.১৫ ধারা অনুযায়ী মানকাডিং এখনো বৈধ আউট। এই আউট না থাকলে বোলার বল করার আগেই ননস্ট্রাইকার যে উইকেটের মাঝপথে গিয়ে বসে থাকত!

অনেক ক্রিকেটবোদ্ধাই একে অখেলোয়াড়সুলভ বললেও অনেকেই আবার এর পক্ষেও বলেছেন, যাঁদের মধ্যে আছেন স্বয়ং স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, যিনি ১৯৪৭-এর সেই টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কও ছিলেন। মানকড়ের খেলোয়াড়ি মনোভাব নিয়ে গণমাধ্যমের প্রশ্ন তোলাটাকেই বরং অন্যায় বলেছিলেন তিনি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোট ১০ বার ঘটেছে এই মানকাড আউট। এই বিতর্কিত সুবিধা নিয়েছেন কপিল দেব, গ্রেগ চ্যাপেলের মতো খেলোয়াড়েরা।
জস বাটলার ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে দুবার মানকাডেড হলেন। ২০১৪ সালে ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার সচিত্র সেনানায়ক তাঁকে এভাবে আউট করেছিলেন। অশ্বিন প্রথম খেলোয়াড় যিনি দুবার মানকাডিং করলেন। ২০১২ সালের সিবি সিরিজে শ্রীলঙ্কার লাহিরু থিরিমান্নেকে মানকাড করেন অশ্বিন। তবে আম্পায়ারের অনুরোধে ক্রিকেটীয় চেতনার প্রতি সম্মান দেখিয়ে থিরিমান্নেকে ফিরিয়ে আনেন ওই ম্যাচের অধিনায়ক বীরেন্দর শেবাগ।

বাংলাদেশে মানকাডিংয়ের ঘটনা ঘটেছে দুবার! দুবারের কোনোবারই অবশ্য বাংলাদেশ দল তাতে জড়িত ছিল না। ২০১৬ এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টির বাছাইপর্বে হংকং-ওমান ম্যাচে এই ঘটনা ঘটে। ওই বছরই যুব বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মানকাডিং করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

টেস্টে

কে কাকে

ম্যাচ

কোথায়, কবে

বিল ব্রাউনকে ভিনু মানকড়

অস্ট্রেলিয়া-ভারত

সিডনি, ১৯৪৭-৪৮

ইয়ান রেডপাথকে চার্লি গ্রিফিথ

অস্ট্রেলিয়া-উইন্ডিজ

অ্যাডিলেড, ১৯৬৮-৬৯

ডেরেক র‍্যানডালকে এওয়েন চ্যাটফিল্ড

ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড

ক্রাইস্টচার্চ, ১৯৭৭-৭৮

সিকান্দার বখতকে অ্যালান হার্স্ট

পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া

পার্থ, ১৯৭৮-৭৯

ওয়ানডেতে

ব্রায়ান লাকহার্স্টকে গ্রেগ চ্যাপেল

ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া

মেলবোর্ন, ১৯৭৪-৭৫

গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ারকে দীপক প্যাটেল

জিম্বাবুয়ে-নিউজিল্যান্ড

হারারে, ১৯৯২-৯৩

পিটার কারস্টেনকে কপিল দেব

দ.আফ্রিকা-ভারত

পোর্ট এলিজাবেথ, ১৯৯২-৯৩

জস বাটলারকে সচিত্র সেনানায়ক

ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা

বার্মিংহাম

টি-টোয়েন্টিতে

মার্ক চ্যাপম্যানকে আমির কালিম

হংকং-ওমান

ফতুল্লা, ২০১৬