ভারতের পর পকিস্তান জয় করল অস্ট্রেলিয়া

জয়ের পর অস্ট্রেলিয়ার উল্লাস। ছবি: এএফপি
জয়ের পর অস্ট্রেলিয়ার উল্লাস। ছবি: এএফপি
>

পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে ৮০ রানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে সর্বোচ্চ ৯০ রান করেন অধিনায়ক ফিঞ্চ। পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন ইমাম–উল–হক।

স্টিভ স্মিথ-ডেভিড ওয়ার্নারদের ছাড়াই ভারতের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়, এরপর আরব আমিরাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয়। অজিদের বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটা হচ্ছে দুর্দান্ত।


অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ২৬৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৮৬ রানেই ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ। প্যাট কামিন্স ও জাম্পার বোলিংয়ের সামনে ৪৪ দশমিক ৪ ওভারেই পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা আত্মসমর্পণ করেন। টানা তিন ম্যাচ জিতে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই ৩-০–তে এগিয়ে থেকে সিরিজ নিজেদের করে নিল অস্ট্রেলিয়া।

২৬৭ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই কামিন্সের তোপের মুখে পড়ে পাকিস্তান। মাত্র ১৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান শিবির তখন কাঁপছে। শান মাসুদ (২), হারিস সোহেল (১) ও মোহাম্মদ রিজওয়ানকে (৯) ফিরিয়ে দেন কামিন্স। এক প্রান্তে অন্যদের আসা-যাওয়ার মধ্যে একাই প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা চালান ওপেনার ইমাম-উল-হক। পাকিস্তান ইনিংসের সর্বোচ্চ রানও এসেছে এই ওপেনারের ব্যাট থেকে। ম্যাক্সওয়েলের বলে ফেরার আগে ৭২ বলে ৪৬ রানের ইনিংস খেলেন ইমাম–উল–হক।
এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পাকিস্তান। নিয়মিত বিরতি দিয়ে এক এক করে সাজঘরে ফেরেন সব ব্যাটসম্যান। তবে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ইমাদ ওয়াসিম (৪৩), উমর আকমল (৩৬) ও শোয়েব মালিকেরা (৩২) ছোট ছোট ইনিংসগুলো খেলেন। এই ইনিংসগুলোর দু-একটি লম্বা করতে পারলে হয়তো অন্য কোনো ফলাফল হতে পারত।


অস্ট্রেলিয়ানদের হয়ে ক্যারিয়ারসেরা ৪৩ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন জাম্পা। তবে ৮ ওভার বল করে ২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন প্যাট কামিন্স।

আজ সিরিজ জয়ের লড়াইয়ে আগে ব্যাট করে ভালো সংগ্রহ পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ৬ উইকেটে ২৬৬ রান তুলেছে অ্যারন ফিঞ্চের দল। এ স্কোরকে ‘ভালো’ বলার কারণ, আবুধাবিতে আবু জায়েদ স্টেডিয়ামের মন্থর উইকেট। যেখানে গত পাঁচ ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করা দলের গড় সংগ্রহ ২৪৪। এখানে সাধারণত আড়াই শ রানের ওপাশে গেলেই জয়ের পুঁজি পেয়ে যান বোলাররা।

বৃষ্টি হানা দেওয়ায় খেলা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে শুরু হয়। ফিঞ্চও আড়মোড়া ভাঙার চেষ্টা করেন দেরি করে। আগের দুই ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করা অস্ট্রেলিয়ার এ অধিনায়ক প্রথম অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে এই সংস্করণে তুলে নিতে পারতেন টানা তিন সেঞ্চুরি। কিন্তু উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অনেক ধৈর্য দেখানোর পর ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছে বড় অসময়ে। ১২২ বলে ৮২ রান করতে ৬৮টি ডেলিভারি ‘ডট’ খেলেছিলেন ফিঞ্চ। এরপর খেললেন আরও ১৪ বল, যোগ করতে পারলেন ৮ রান।
৪২তম ওভারে ইয়াসির শাহকে তুলে মারতে গিয়ে তালুবন্দী হওয়া ফিঞ্চ বঞ্চিত করেন অস্ট্রেলিয়াকে টানা তিন সেঞ্চুরির তালিকায় নাম লেখানো দেশগুলোর পাশে বসা থেকে। শেষ পর্যন্ত ১৩৬ বলে ৯০ রান করে থামতে হয় অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ককে। তাঁর ফেরার ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ১৮৯। ১ ছক্কা ও ৫ চারে সাজানো ফিঞ্চের এই ইনিংস যদি হয় ‘কচ্ছপগতি’র ম্যাক্সওয়েল তাহলে খরগোশের মতো দৌড়েছেন।

উইকেট শিকারের পর প্যাট কামিন্সকে ঘিরে সতীর্থদের উদ্‌যাপন। ছবি: এএফপি
উইকেট শিকারের পর প্যাট কামিন্সকে ঘিরে সতীর্থদের উদ্‌যাপন। ছবি: এএফপি

অ্যালেক্স ক্যারিকে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ৩৮ বলে ৬১ রানের জুটি গড়েন ম্যাক্সওয়েল। ৪৪তম ওভারে ম্যাক্সওয়েলের ক্যাচ ফেলার খেসারত দিয়েছে পাকিস্তান। ইমাম-উল-হক পয়েন্টে ক্যাচ ফেলার সময় ম্যাক্সওয়েলের সংগ্রহ ছিল ২৮। ‘জীবন’ পেয়ে আড়মোড়া ভাঙা ম্যাক্সওয়েল পরের দুই ওভারের মধ্যে তুলে নেন ফিফটি। ৪২ বলে ফিফটি পাওয়ার পর তাঁর ব্যাটে অস্ট্রেলিয়া ২৮০ ছুঁই ছুঁই স্কোরের স্বপ্নও দেখেছিল।

৪৬তম ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ২৩৩। ম্যাক্সওয়েলের সংগ্রহ তখন ৪৫ বলে ৫৭। তাঁর মতো মারকুটে ব্যাটসম্যান এখান থেকে দুর্দান্ত ‘ফিনিশ’ করতে পারতেন। কিন্তু ৪৮তম ওভারে ম্যাক্সওয়েল রানআউট হওয়ায় অস্ট্রেলিয়া শেষ দুই ওভারে প্রত্যাশামতো রান তুলতে পারেনি। ১ ছক্কা আর ৮ চারে ৫৫ বলে ৭১ রান করে থামতে হয় ম্যাক্সওয়েলকে। শেষ পাঁচ ওভারে ৫০ রান তুলেছে অস্ট্রেলিয়া, এর মধ্যে ম্যাক্সওয়েলের একার অবদানই ৩০। সেটিও শেষ দুই ওভারের আগে।

সিরিজে টিকে থাকার ম্যাচে পাকিস্তানি বোলাররা অবশ্য শুরুটা ভালোই এনে দিয়েছিলেন। ফর্মের তুঙ্গে থাকা উসমান খাজাকে রানের খাতা খুলতেই দেননি পেসার উসমান শেনওয়ারি। তিনে ব্যাট করা শন মার্শও (১৪) থাকতে পারেননি বেশিক্ষণ। তৃতীয় উইকেটে পিটার হ্যান্ডসকম্ব-ফিঞ্চের ১০৫ বলে ৮৪ রানের জুটিতে ভিত গড়েছে অস্ট্রেলিয়া। হ্যান্ডসকম্ব হারিস সোহেলের স্পিনে বোকা বনে ফিরেছেন ফিফটির সুবাস (৪৭) পেয়ে। এরপরই ফিঞ্চ-ম্যাক্সওয়েলের খেল শুরু।