কতটুকু তৃপ্তি নিয়ে কোপায় যাবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা?

কোপা আমেরিকার আগে সর্বশেষ ম্যাচে চেক প্রজাতন্ত্রকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে ব্রাজিল। ছবি: এএফপি
কোপা আমেরিকার আগে সর্বশেষ ম্যাচে চেক প্রজাতন্ত্রকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে ব্রাজিল। ছবি: এএফপি

আগের ম্যাচের ফল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দুই দলকেই রেখেছিল অস্বস্তিতে। গত শনিবার ব্রাজিল ১-১ গোলে ড্র করেছিল পুঁচকে পানামার সঙ্গে, তার আগের রাতে মেসির ‘স্বেচ্ছানির্বাসন’ কাটিয়ে ফেরার ম্যাচে আর্জেন্টিনা ৩-১ গোলে হেরেছে ভেনেজুয়েলার কাছে।

শুধু সেই ম্যাচগুলোর সঙ্গে তুলনায় গেলে পরশুর দুটি ম্যাচ দুই দক্ষিণ আমেরিকান পরাশক্তির অস্বস্তি একটু কমারই কথা। প্রাগে পিছিয়ে পড়েও চেক প্রজাতন্ত্রকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে ব্রাজিল, তাঞ্জিয়ারে ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে লড়ে মরক্কোকে ১-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। ১৪ জুন ব্রাজিলে শুরু হতে যাওয়া কোপা আমেরিকার আগে ম্যাচ আর নেই, জয় নিয়েই তাই টুর্নামেন্টে যাচ্ছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা—ভালোই তো!

কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপের পরের পথটুকুতে দৃষ্টিটা ফেললে তা আর মনে হবে না। দেশ দুটির সংবাদমাধ্যমেরও মনে হচ্ছে না। দলের কোপা আমেরিকার প্রস্তুতির বিশ্লেষণে আর্জেন্টিনার টিওয়াইসি স্পোর্টস লিখেছে, সর্বশেষ এই দুই প্রীতি ম্যাচ ‘যত উত্তর দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি প্রশ্ন তুলেছে।’ আর ব্রাজিলের ও গ্লোবোর চোখে, ‘দলে বারবার অদল-বদল’ই তিতের দলের পারফরম্যান্সে এত ওঠা-নামার কারণ।

আর্জেন্টিনাকে নিয়েই অবশ্য প্রশ্ন বেশি। মেসিকে কীভাবে খেলাবেন, সেই প্রশ্ন তো আছেই, লিওনেল স্কালোনির অধীনে ৮ ম্যাচেও আর্জেন্টিনার খেলার ধাঁচটা অস্পষ্ট। বল দখলে রেখে খেলবে নাকি তারুণ্যের গতিতে ভর করে পাল্টা আক্রমণনির্ভর কৌশলে যাবে, ছক কী হবে—কিছুই স্পষ্ট নয়। পরশুর ম্যাচ যেটির সর্বশেষ প্রমাণ। এতে তাঞ্জিয়ারের ৪৭ কিলোমিটার গতির ঝোড়ো বাতাসের প্রভাব একটু আছে। চোটে পড়া মেসির বদলে ম্যাচে আর্জেন্টিনার আক্রমণ সামলানো পাওলো দিবালা বলেছেন, ‘বাতাস বারবার দিক বদল করছিল।’ কিন্তু বাতাসের তোড়ে কি খেলোয়াড়দের মেজাজও উড়ে গিয়েছিল? মাঝেমধ্যে তো ফুটবলের বদলে ‘ইউএফসি ফাইট’ হয়েছে! ম্যাচজুড়ে ৪৯টি ফাউল, প্রথমার্ধেই ২৬টি। ম্যাচে ‘ফুটবল’ বলতে ৮৩ মিনিটে দারুণ ফিনিশিংয়ে অ্যাঙ্গেল কোরেয়ার গোলের মুহূর্তটাই।

আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে জিতেছে মরক্কোয়। ছবি: এএফপি
আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে জিতেছে মরক্কোয়। ছবি: এএফপি

এমন জয়েও অবশ্য ইতিবাচক দিক খুঁজে নিচ্ছেন দিবালা-স্কালোনিরা। দিবালা বলছেন, ‘অজুহাত দেওয়ার ইচ্ছে নেই, তবে মনে রাখতে হবে দল জিতেছে, সবকিছু নিংড়ে দিয়েছে।’ খেলোয়াড়দের ‘মনোভাব, আত্মনিবেদনের’ প্রশংসা করেছেন স্কালোনিও, এরপর আর্জেন্টিনার প্রস্তুতি ঘিরে থাকা যত প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, কোপার জন্য ‘৭০ শতাংশ খেলোয়াড়ই ঠিক করে রেখেছেন।’ কোপার প্রস্তুতি তাঁর চোখে এমন, ‘ভেনেজুয়েলা ম্যাচটাকে হিসাবের বাইরে রাখলে প্রস্তুতিটা ভালোই মনে হবে। কোপা আমেরিকায় আমরা কঠিন লড়াই-ই করব।’

ঘরের মাটির কোপায় ব্রাজিলকে শুধু ‘লড়াইয়ের’ প্রতিশ্রুতি দিলেই চলবে না। টুর্নামেন্টের বাকি দলগুলোতে যত কোচ বদল হয়েছে, তাতে কোপা আমেরিকা ব্রাজিলের হাতেই দেখেন অনেকে। এই দুই ম্যাচেই শুরু হয়েছে বলিভিয়া, কলম্বিয়া আর প্যারাগুয়ের নতুন কোচের যাত্রা। বিশ্বকাপের পর কোচ বদলেছে আর্জেন্টিনা-ইকুয়েডরের। রাশিয়ায় যেতে না পেরে চিলি কোচ বদলেছে বিশ্বকাপের আগে। পুরোনো কোচ শুধু পেরু, উরুগুয়ে আর ব্রাজিলের। পেরু অবশ্য কোপা আমেরিকায় ফেবারিট নয়, সুয়ারেজ-কাভানি-গোডিনসহ ত্রিশোর্ধ্বদের নিয়ে উরুগুয়ের পারফরম্যান্স অধারাবাহিক। আর ব্রাজিল? দলের মূল খেলোয়াড়দের বয়স ২৫-এর আশপাশে, তিতে ডাগআউটে প্রায় তিন বছর ধরে।

কিন্তু কোপা আমেরিকার আগে ব্রাজিলও যেন দিশেহারা! কুতিনহোর ফর্ম নেই, ফিরমিনো-রিচার্লিসনের সেরা পজিশন খুঁজে পাননি তিতে। পরশুর আগে চার ম্যাচে ব্রাজিল গোল করেছে মাত্র চারটি, পরশু চেক প্রজাতন্ত্রের বিপক্ষেও প্রথমার্ধে গোলে শট মাত্র একটি। ৩৭ মিনিটে দাভিদ পাভেলকার গোলে চেক প্রজাতন্ত্র এগিয়েও গিয়েছিল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে তিতে দুই গতিশীল উইঙ্গার এভারটন ও দাভিদ নেরেসকে নামিয়ে ব্রাজিলকে ‘ব্রাজিল’ মনে করিয়েছেন। ৪৯ মিনিটে ফিরমিনোর গোলে সমতা, শেষ দশ মিনিটে জেসুসের জোড়া গোলে এসেছে দারুণ জয়।

দ্বিতীয়ার্ধের পারফরম্যান্সই ব্রাজিলকে স্বপ্ন দেখায়। তিতের কণ্ঠেও দ্বিতীয়ার্ধ নিয়ে মুগ্ধতা, ‘প্রথমার্ধে চেকরাই বেশি সৃষ্টিশীল ছিল। আমাদের পাসিং নিয়ে আমি সন্তুষ্ট ছিলাম না। দ্বিতীয়ার্ধে বদলিগুলোর পর আমরা ভালো খেলেছি।’ প্রশংসা করেছেন তাঁর একসময়ের ‘বিশ্বস্ত সেনা’ জেসুসেরও, ‘খুশি লাগছে যে দ্বিতীয়ার্ধে ওকে সুযোগ দিয়েছি।’

জেসুসের ফর্মে ফেরা, আর চোট কাটিয়ে নেইমারের ফেরাই কোপার আগে ব্রাজিলকে দিতে পারে স্বস্তি।