আগের মতো মুক্তমনে খেলা হবে না সৌম্যর

এবার প্রিমিয়ার লিগে এখনো দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলা হয়নি সৌম্যর। ছবি: প্রথম আলো
এবার প্রিমিয়ার লিগে এখনো দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলা হয়নি সৌম্যর। ছবি: প্রথম আলো
২০১৫ বিশ্বকাপ খেলেছিলেন, যখন দেশেরই খুব বেশি মানুষ তাঁকে চিনত না। এবারের ছবিটা হবে অন্য রকম। বিশ্বকাপে গেলে সৌম্যের ওপর থাকবে অনেকের চোখ। দুই বিশ্বকাপের মধ্যে তাই পার্থক্য দেখছেন এই ব্যাটসম্যান


ভালো শুরু করছেন। থিতু হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ইনিংসটা লম্বা করতে পারছেন না। সৌম্য সরকার এ সমস্যায় অনেকবারই পড়েছেন। কখনো সমস্যার সমাধান করতে পেরেছেন, কখনো পারছেন না। এবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও একই সমস্যায় পড়েছেন। আবাহনীর হয়ে যে তিনটি ম্যাচ খেলেছেন, ৩০-৪০ রানে ফিরেছেন ড্রেসিংরুমে। এটি বেশ ভাবাচ্ছে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে।


ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে কে কেমন খেলল, সেটির সঙ্গে বিশ্বকাপের কোনো যোগ নেই। প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত খেলেও বিশ্বকাপ দলে হুট করে ঠাঁই পাওয়া যে কঠিন, দুদিন আগে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেই দিয়েছেন। কিন্তু এই লিগে জাতীয় দলের নিয়মিত ক্রিকেটারদের যাঁরা খেলছেন, তাঁদের পারফরম্যান্স কীভাবে দেখা হবে? টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা নির্বাচকেরা অবশ্য এটা নিয়েও খুব একটা ভাবিত না। কিন্তু সৌম্য চিন্তিত। ঢাকার লিগের পারফরম্যান্সের সঙ্গে বিশ্বকাপের কোনো যোগ না থাকলেও মানসিক তৃপ্তি বা আত্মবিশ্বাস বলে তো কিছু আছে। ক্রিকেট যেহেতু স্কিলের পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিক খেলা, কোনো ম্যাচে ভালো করলে মানসিকভাবে অনেক চাঙা থাকা যায়। আত্মবিশ্বাসী হওয়া যায়।

সৌম্য আত্মবিশ্বাসী হতে পারছেন না। প্রিমিয়ার লিগে তাঁর রান আটকে আছে ৩০-৪০ রানে। তবে তিনি আশাবাদী এই চক্র থেকে শিগগির বের হতে পারবেন, ‘৩০ বা ৪০ করার পর আউট হয়ে যাচ্ছি এ জায়গা থেকে কীভাবে বের হওয়া যায়, সেটা নিয়ে ভাবছি। ওই জায়গায় যদি একটু অন্যভাবে পরিকল্পনা করি, পরিকল্পনা বদলে এখান থেকে কীভাবে বের হওয়া যায় সেটা ভাবছি। হয়তো বা হচ্ছে না, তবে এর মধ্যেও অনেক কিছু শেখার ছিল । গত তিন ম্যাচে ৩৩, ৩৬ ও ৪৩ রান করে আউট হয়ে গিয়েছি। আমার খেলার ধরন নিয়ে খুশি। আউটও হয়েছি ভালো বলে। দিনটি আমার ছিল না আসলে। যেভাবে খেলেছি, সেটি যদি ধরে রাখতে পারি তাহলে লম্বা ইনিংস খেলতে পারব।’

মাত্র ১ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে সৌম্যর সুযোগ হয়েছিল ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলার। তিন অঙ্ক ছোঁয়া হয়নি টুর্নামেন্টের এক ম্যাচেও, তবে বাঁহাতি ওপেনার ভালোভাবেই জানান দিতে পেরেছিলেন নিজের আগমনী বার্তা। আরও একটি বিশ্বকাপ যখন সামনে, চার বছরের পার্থক্যটা সৌম্য বিশ্লেষণ করলেন এভাবে, ‘ওই বিশ্বকাপে একেবারেই নতুন ছিলাম। এবার যদি সুযোগ পাই, পরিকল্পনা একটু ভিন্ন থাকবে। তখন জুনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে যেভাবে মুক্ত মনে খেলেছি, এখন হয়তো অতটা মুক্তভাবে খেলা যাবে না। একটু চাপ থাকবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যতটুকু অভিজ্ঞতা হয়েছে বিশ্বকাপে সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। যে বিশ্বকাপ বা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলেছি, ওখানে যে সাহস নিয়ে খেলেছি, সেটা ধরে রাখার চেষ্টা থাকবে।’

এখন সৌম্যর সবচেয়ে বড় উপলব্ধিটা হচ্ছে, থিতু হয়ে আউট হয়ে যাবে না। একজন টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান থিতু হয়ে লম্বা ইনিংস না খেলে আউট হলে দলকে কতটা মূল্য দিতে হয় সেটি তাঁর ভালো করেই জানা, ‘খেলার পরিস্থিতি অনুযায়ী গেম প্ল্যান কেমন হবে, সেটি নিয়ে বেশি কাজ করছি। এখানে খেলার সময় ভাবছি এ পরিস্থিতিতে ওখানে খেললে কেমন হবে বা এখন আমি যদি আউট হয়ে যাই দল কেমন চাপে পড়বে। সবকিছু ভেবেই এগোচ্ছি।’

সৌম্যর ভাবনাজুড়ে একটা বিষয়ই ঘুরপাক খাচ্ছে, ইনিংস লম্বা করতে হবে। শুধু ভাবনায় রাখলে হবে না, সেটি তাঁকে বাস্তবায়নও করতে হবে।