আইপিএলে ক্যারিবীয় ছাড়া দলগুলোর চলে না

রাসেল-আলোয় আলোকিত কলকাতা। ছবি: এএফপি
রাসেল-আলোয় আলোকিত কলকাতা। ছবি: এএফপি
>

হিসাব করলে এবারের আইপিএলের তিন ভাগের এক ভাগ শেষ হয়ে গিয়েছে। আর এই কয়েক ম্যাচেই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছে, এবার দলগুলো ক্যারিবীয় তারকাদের ওপর কতটা নির্ভরশীল

শুধু আইপিএল নয়; বিপিএল থেকে শুরু করে পিএসএল, সিপিএল থেকে শুরু করে বিগ ব্যাশ লিগ, বিশ্বের সব টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে ক্যারিবীয় তারকাদের নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। টি-টোয়েন্টি মানেই ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেট, মাঠে ঝড় তোলার জন্য বর্তমানে ক্যারিবীয়দের বিকল্প খুব কমই আছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে দলগুলো তাই চেষ্টা করে নিজেদের শিবিরে অন্তত একজন ক্যারিবীয় হলেও রাখতে। আইপিএলের দলগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। আর ক্যারিবীয়দের ওপর ভর করে এই মৌসুমে আইপিএলের দলগুলোও উতরে যাচ্ছে।

এক হায়দরাবাদ ছাড়া প্রতিটি দলেই কোনো না কোনো উইন্ডিজ তারকা রয়েছেন। কলকাতায় আছেন আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইন ও কার্লোস ব্রাফেট। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসে আছেন ডোয়াইন ব্রাভো। দিল্লি ডেয়ারডেভিলস থেকে দিল্লি ক্যাপিটালস হওয়া ফ্র্যাঞ্চাইজিটি দলে রেখেছে কিমো পল ও শেরফানে রাদারফোর্ডকে। পাঞ্জাবে আছেন ক্রিস গেইল ও নিকোলাস পুরান। মুম্বাই আলো করে আছেন কাইরন পোলার্ড, আলজারি জোসেফ ও এভিন লুইস। রাজস্থান এনেছে ওশানে থমাসকে। বেঙ্গালুরুতে আছেন শিমরন হেটমায়ার। মোটামুটি প্রতিটি দলের ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছে এসব ক্যারিবীয় তারকার পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে।

এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ কলকাতা নাইট রাইডার্স। আন্দ্রে রাসেল ছাড়া এবার কলকাতায় তেমন জনপ্রিয় কোনো বিদেশি তারকা নেই। ফলে, রাসেলের কাঁধেই পড়েছে এই কলকাতাকে টেনে তোলার দায়িত্ব। কী অসাধারণভাবেই না সেই দায়িত্ব পালন করছেন তিনি! এ পর্যন্ত চারটা ম্যাচ খেলেছে কলকাতা। চার ম্যাচেই ঝলসে উঠেছে রাসেলের ব্যাট। এই চার ম্যাচে রাসেল ৫টি উইকেট পেয়েছেন। কিন্তু ওসব মনে রাখার সুযোগ নেই।

ব্যাটিং দেখুন—প্রথম ম্যাচে করলেন ১৯ বলে ৪৯। যে কারণে হারল সানরাইজার্স। পরের ম্যাচে পাঞ্জাবের বিপক্ষে আগে ব্যাট করা কলকাতা দুই শ টপকে যায় রাসেলের ১৭ বলে ৪৮-এর তোড়ে। যথারীতি কলকাতা ম্যাচটি জিতেছে। এরপর প্রতিপক্ষ দিল্লি ক্যাপিটালস। তাদের বিপক্ষে রাসেল কয়েকটি বল বেশি খেলতে পেরেছিলেন। মানে ২০ বলের ওপাশে—২৮। রানসংখ্যাও ষাটের ওপাশে—৬২। কলকাতার দুর্ভাগ্য সুপার ওভারে গিয়ে ম্যাচটা জিততে পারেনি। ওপেন করতে নেমে সুনীল নারাইনও মাঝে এক ম্যাচে ঝড় তুলেছিলেন। সঙ্গে তাঁর কার্যকর স্পিন বোলিং তো আছেই। এবার চোট বেশ যন্ত্রণা দিচ্ছে নারাইনকে, না হয় রাসেলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারাইনও ঘাম ছুটিয়ে দিতেন প্রতিপক্ষ বোলারদের!

মুম্বাইকে দেখুন। কাল ফর্মে থাকা সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে হারিয়ে তারা পয়েন্ট তালিকার চারে উঠে এসেছে। হায়দরাবাদ যেমন ফর্মে ছিল, মুম্বাই কালকে হারতেই পারত। আর হারলে আইপিএল স্বপ্ন অনেকটাই ফিকে হয়ে যেত দলটির। কিন্তু ফিকে হতে দেননি আলজারি জোসেফ। কিউই পেসার অ্যাডাম মিলনের বিকল্প হিসেবে শেষ মুহূর্তে দলে আসা অ্যান্টিগার এই তরুণ কাল আইপিএল অভিষেকেই বাজিমাত করেছেন। আইপিএলের সেরা বোলিং ফিগার এখন জোসেফের। ৩.৪ ওভার বল করে ১২ রানে ৬ উইকেট নিয়ে মুম্বাইয়ের শিরোপাস্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছেন এই ক্যারিবিয়ান।

জোসেফের আগে মুম্বাইকে ভালো সংগ্রহ এনে দিয়েছেন আরেক ক্যারিবীয় তারকা পোলার্ড। ২৬ বলে ৪৬ রান করে মুম্বাইকে এনে দিয়েছেন ভদ্রস্থ সংগ্রহ। বলা যায়, পোলার্ড-জোসেফে ভর করেই এখনো টিকে আছে মুম্বাই। ৪ ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে চেন্নাইয়ের আস্থার ভালো প্রতিদান দিচ্ছেন ডোয়াইন ব্রাভোও। আর ক্রিস গেইলকে নিয়ে তো নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রথম ম্যাচে ৪৭ বলে ৭৯ করে রাজস্থানের বিপক্ষে পাঞ্জাবকে জেতাতে সাহায্য করেছেন ‘ইউনিভার্স বস’।

মোট কথা, এখন পর্যন্ত আইপিএলের সবচেয়ে বড় তারকা যে ক্যারিবীয়রা, তা বলা যেতেই পারে।