কী বলে রিয়ালের ঘুম ভাঙালেন জিদান?

কাল দুই অর্ধেই দুই রিয়াল মাদ্রিদের দেখা মিলেছে। এর পেছনে জিদানের জ্বালাময়ী এক বক্তব্যের অবদান আছে। ছবি: এএফপি
কাল দুই অর্ধেই দুই রিয়াল মাদ্রিদের দেখা মিলেছে। এর পেছনে জিদানের জ্বালাময়ী এক বক্তব্যের অবদান আছে। ছবি: এএফপি

দৃশ্যটা এ মৌসুমে নিয়মিত হয়ে গেছে। রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়েরা মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ছেন, সঙ্গে গায়ে মেখে নিচ্ছেন দর্শকের দুয়ো। তবে একটি ব্যতিক্রম ছিল, এত দিন দৃশ্যটা দেখা গেছে হুলেন লোপেতেগি ও সান্তিয়াগো সোলারির দলকে। গতকাল প্রথমার্ধের বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে ডাগআউটে চলে গেছেন, তবু দুয়োর ভাগ তো কিছুটা হলেও পেয়েছেন জিনেদিন জিদান! ক্লাব কিংবদন্তি হয়ে সমর্থকের এমন আচরণ ভালো লাগার কথা নয় জিদানের।

নির্মম বাস্তবতা হলো, এই দুয়ো মেনে নিতে হচ্ছে জিদানকে। কাল এইবারের বিপক্ষে প্রথমার্ধে ১-০ গোলে পিছিয়ে ছিল রিয়াল। এমন নয় যে খেলার ধারার বিপরীতে গোল করে এগিয়ে গেছে অতিথিরা। যে দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে, তাতে এগিয়ে থাকাটা প্রাপ্য ছিল তাদের। বার্নাব্যুতে এসে হাই প্রেসিং ফুটবল খেলেছে তারা, বল পজেশনে এগিয়ে ছিল এবং ডিফেন্সের চারজনকে অনেক ওপরে রেখেই খেলার সাহস দেখিয়েছে। এত ওপরের রক্ষণ লাইন ভাঙতে একটা ভালো প্রতি–আক্রমণই যথেষ্ট, কিন্তু দুর্দান্ত গতি থাকার পরও গ্যারেথ বেল সে রক্ষণ ভাঙতে পারেননি বরং বারবার অফসাইডের ফাঁদে পড়েছিলেন। বেল তো বহুদিন ধরেই রিয়াল সমর্থকদের চোখের বালি। তবে গতকাল প্রথমার্ধ শেষে দায় এড়াতে পারার মতো কেউই মাঠে ছিলেন না। ভালো খেলতে না পারলেও দর্শক খেলোয়াড়দের মাঝে চেষ্টা দেখার আশা করেন কিন্তু এই মৌসুমে রিয়ালের খেলোয়াড়েরা যে সে চেষ্টাও হারিয়ে বসেছেন!

দ্বিতীয়ার্ধেই ভোজবাজির মতো পাল্টে গেল সব! প্রাণহীন দলটিই প্রাণ খুঁজে পেল। একের পর এক আক্রমণ করল। সবচেয়ে বড় ব্যাপার জানপ্রাণ দিয়ে লড়ার চেষ্টা দেখা গেল। ধারাভাষ্যকারেরা তখনই বলে বসেছেন, নির্ঘাত ড্রেসিংরুমে জিদান কিছু বলেছেন। দলকে উজ্জীবিত করার মন্ত্র যে জিদানের জানা আছে, সেটা তো টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ই জানাচ্ছে। কিন্তু ২-১ ব্যবধানের জয়ের পর জিদানকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করতেই জিদান কোনো পরিষ্কার জবাব দিলেন না। সাংবাদিকদের প্রশ্ন কাটিয়ে উত্তর দিলেন, ‘আমি তো আপনাদের সেটা বলব না।’

দলের লেফটব্যাক সার্জিও রেগুইলন একটু দয়া দেখিয়েছেন। বলেছেন, ‘জিদান আমাদের পরিষ্কারভাবে চারটি জিনিস বলেছেন।’ কিন্তু সে চারটি জিনিস কী? ড্রেসিংরুম থেকে পাওয়া এক সূত্র জানাচ্ছে, জিদান রিয়াল খেলোয়াড়দের অহংবোধ জাগিয়ে তুলেছিলেন। খেলোয়াড়দের মাঝে লুকিয়ে থাকা আত্মগৌরবে খোঁচা দিয়েছেন আর তাতেই আহত বাঘের মতো খেপে মাঠে নেমেছিল রিয়াল। ১৯৫৬ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগের এক ম্যাচে তৎকালীন রিয়াল সভাপতি সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর বিখ্যাত জ্বালাময়ী বক্তব্যের সুরে জিদান নাকি বলেছেন, ‘একসময় আমরা গর্ব করার মতো দল ছিলাম।’ ইঙ্গিতটা পরিষ্কার, বর্তমান দল নিয়ে গর্ব করা যায় না। তারা সমর্থকদের ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়।

পাঁচ বছরে চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা দলের অহংবোধ জাগাতে নাকি জিদানকে আর বাড়তি কিছু করতে হয়নি!