আমিরের তাহলে এবারও খেলা হবে না বিশ্বকাপ?

মোহাম্মদ আমির। ফাইল ছবি
মোহাম্মদ আমির। ফাইল ছবি
>পাকিস্তানের বিশ্বকাপ দলে মোহাম্মদ আমিরের জায়গা নিয়ে সন্দিহান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর আবির্ভাব উল্কার মতো। ওয়াসিম আকরামের উত্তরসূরি হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন অনেকেই। তেমন কিছু হোক বা না হোক, ভয়ংকর পেসার হওয়ার মতো সব রসদই মজুত ছিল মোহাম্মদ আমিরের মধ্যে। ‘ছিল’—কথাটা বলতে হচ্ছে। কারণ, স্পট ফিক্সিংয়ের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ার আগের আমির আর বর্তমানের আমির এক নয়। তা ছাড়া স্বয়ং পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদও একসময়ের তুরুপের তাসের সামর্থ্য নিয়ে সন্দিহান। আমির নাকি উইকেট নিতে ভুলে গেছেন!

২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত আমির শুরুর দিনগুলোয় গতি আর সুইংয়ের মিশেল ব্যাটসম্যানদের জেরবার করে ছেড়েছেন। মাঝে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরলেন ২০১৬ সালে। তখনো আমিরের বোলিংয়ে ভালোই ধার ছিল। পরের বছর চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফাইনালে তাঁর ম্যাচ জেতানো স্পেল (৩-১৬) এখনো ক্রিকেটপ্রেমীদের আলোচনার খোরাক। কিন্তু তারপর? সরফরাজ কিন্তু দুই বছর আগের সেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পরের আমিরকে নিয়েই সন্দিহান।

এক টিভি চ্যানেলকে পাকিস্তান অধিনায়ক বলেন, ‘যখন আপনার প্রধান বোলার নিয়মিত উইকেট নিতে পারবে না, তখন অধিনায়কের জন্য তা অবশ্যই চিন্তার বিষয়।’ পাকিস্তানের হয়ে আমির সবশেষ খেলেছেন গত মাসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে। ৯ ওভারে ৫৯ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। পরের চার ম্যাচে আর দলে সুযোগ পাননি।

আমিরের আগুন নিভে যাওয়ার আরেকটু ব্যাখ্যা করা যায়। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর এই দুই বছরে খেলা ১৪ ওয়ানডেতে আমির কোনো ম্যাচেই একটির বেশি উইকেট নিতে পারেননি। এর মধ্যে আবার ৯ ম্যাচ ছিলেন উইকেটশূন্য। সব মিলিয়ে এই ১৪ ম্যাচে তাঁর শিকার ৫ উইকেট, ইনিংসে সেরা বোলিং ১/১৮, স্ট্রাইক রেট ১২১.২, গড় ৯২.৬০!

এদিকে দুয়ারে কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ। চূড়ান্ত প্রস্তুতির জন্য দুই মাসেরও কম সময় পাচ্ছে পাকিস্তান। এর মধ্যে দলের ‘প্রধান’ পেসারের এই হাল হলে কোন অধিনায়কের কপাল সমান থাকে! দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়াই স্বাভাবিক। ১৮ এপ্রিল বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করবে পাকিস্তান। সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ১৭ থেকে ১৮ সদস্যের দল নিয়ে ২৩ এপ্রিল ইংল্যান্ডের উদ্দেশে উড়াল দেবে সরফরাজের দল। সেখানে স্বাগতিকদের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলে নেওয়া হবে ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের চূড়ান্ত প্রস্তুতি। পাকিস্তানের নির্বাচকেরা নাকি এই সিরিজে আমিরকে শেষবারের মতো পরখ করে দেখতে চান।

পিটিআইকে এক সূত্র জানিয়েছে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ছাড়াও কাউন্টি দলগুলোর বিপক্ষেও কিছু ম্যাচ খেলবে পাকিস্তান। আর ২৩ মের মধ্যে সব দলই তো দল নিয়ে ঘষামাজা শেষ করে ফেলবে। আর তাই নির্বাচকেরাও আমিরকে দেখে তখন সিদ্ধান্ত নিতে চান বিশ্বকাপে খেলানো হবে কি না?

আমিরকে নিয়ে সরফরাজের বড় দুশ্চিন্তার জায়গাটি হলো গতি। গতি বেশ কমে গেছে এই পেসারের। সংবাদ সংস্থাটিকে সেই সূত্র আরও জানিয়েছে, শুধু সরফরাজ নন, কোচ মিকি আর্থার ও বোলিং কোচ আজহার মেহমুদেরও নাকি আস্থা উঠে গেছে আমিরের ওপর থেকে। ‘আর্থার সব সময়ই আমিরকে সমর্থন দিয়ে এসেছেন। কিন্তু এই বড় টুর্নামেন্টে (বিশ্বকাপ) তাঁকে খেলাতে আর্থারকে দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে।’

আমির নিশ্চয়ই টের পাচ্ছেন, বিশ্বকাপ আর তাঁর মধ্যে অদৃশ্য একটা খড়্গ নেমে আসছে। ১০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথম বিশ্বকাপ (২০১৫) খেলতে পারলেন না নিষেধাজ্ঞার জন্য। পরেরটি কি তাহলে বোলিং ভুলে যাওয়ার জন্য? সরফরাজ নিজেও এ প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি। শুধু বলেছেন, ‘আমির বিশ্বকাপে থাকবে কি না, তা আমি জানি না।’