৪ গোল খেয়েও উন্নতি মোহামেডানের!

গোলের পর ভিনিসিয়ুসের উচ্ছ্বাস। ছবি: বাফুফে
গোলের পর ভিনিসিয়ুসের উচ্ছ্বাস। ছবি: বাফুফে
>বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলে বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে ৪-১ গোলে হেরেছে মোহামেডান স্পোর্টিং লিমিটেড।

৪-১ গোলে হার। তবু উন্নতি হয়েছে পরাজিত দল মোহামেডানের। কীভাবে?

ফেডারেশন কাপে মোহামেডানকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বসুন্ধরা কিংস। পাঁচ মাস পরে এসে প্রিমিয়ার লিগে বসুন্ধরার বিপক্ষে মোহামেডান আজ ৪-১ ব্যবধানে। এক গোল কম খাওয়াকে তো উন্নতি বলাই যায়! মোহামেডানের অতি ইতিবাচক মানসিকতার সমর্থকেরা এই পরাজয় থেকে উন্নতি চাইলেই তাই খুঁজে নিতে পারেন।

লিগে টানা ব্যর্থ হওয়ায় তিন দিন আগে অস্ট্রেলিয়া থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে কোচ সিন লেনকে। দুই সেশন অনুশীলন করিয়ে দল বদলে দেবে—এ আশা করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। দেখার বিষয় ছিল বরং ভঙ্গুর দলটাকে কীভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে মাঠে পাঠান ৫৫ বছর বয়সী কোচ। প্রথম ম্যাচেই ৪-১-৪-১ ফরমেশনে প্রথাগত স্ট্রাইকার জাহিদ হাসান এমেলিকে হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলিয়ে দিলেন বড় এক চমক। শুধু তা–ই নয়, এবারের লিগে এমেলি প্রথমবারের মতো খেললেন পুরো ম্যাচও। কয়েক বছর আগেরও দেশ সেরা স্ট্রাইকারের মধ্যমাঠের পারফরম্যান্স বিচার করলে খেলেছেন ভালোই। ফিটনেসে ঘাটতি থাকলেও তাঁর বলের আদান–প্রদানের দক্ষতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু মোহামেডান দলটাই এখন অতীতের ‘কঙ্কাল’। মাঠে নামার আগেই এ দলের পরাজয় ধরে নিতে হয় এখন, অন্তত বড় দলগুলোর বিপক্ষে।

৯ ম্যাচ খেলে একটিতেও না হেরে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা বসুন্ধরার সামনে মোহামেডান উড়ে যাবে এটা অনুমেয়ই ছিল। দেখার বিষয় ছিল ফেডারেশন কাপের তুলনায় মোহামেডান আজ হারের ব্যবধান কমাতে পারে কি না! তিন হলুদ কার্ডের খড়্গে পড়ে কোস্টারিকার জার্সিতে রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা দানিয়েল কলিনদ্রেস না থাকায় বসুন্ধরারও আজ পুরোপুরি ভয়ংকর রূপ দেখা যায়নি। তবু কম হলো কোথায়?

১৯ মিনিটেই ব্রাজিলিয়ান মার্কোস ভিনিসিয়ুসের গোলে এগিয়ে যায় বসুন্ধরা। বাঁ প্রান্ত দিয়ে ঝড়ের গতিতে ওঠে ক্রস করেন ইব্রাহিম। গোলমুখ থেকে দেখে–শুনে প্লেসিং করেছেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার। কিন্তু এগিয়ে গিয়ে বসুন্ধরা গোলরক্ষক আনিসুর রহমান করলেন বড় এক ভুল। শট নিতে গিয়ে প্রতিপক্ষের কোনো রকম চাপ ছাড়াই বল তুলে দিলেন ডি বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মোহামেডানের ফরোয়ার্ড ল্যান্ডিং ডার্বোর পায়ে। ২১ মিনিটে ল্যান্ডিংয়ের গোলে জিকুর ভুলের খেসারত দিতেই হলো বসুন্ধরাকে (১-১)।

এর পরের গল্পটা শুধুই বসুন্ধরার। এদের মধ্যেও সবাইকে ছাপিয়ে গেলেন মতিন মিয়া। নিজে গোল করে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন, আবার ভিনিসিয়ুসকে দিয়ে গোল করিয়ে বাড়িয়েছেন ব্যবধান। তরুণ মতিন যেন প্রতি ম্যাচে ছাপিয়ে যাচ্ছেন নিজেকে। তাঁর গতি ও বলের নিয়ন্ত্রণে মাঠের মধ্যে খাবি খাচ্ছে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা। আবার ছোটখাটো গড়নের মতিন সুযোগসন্ধানীও। ৩৭ মিনিটে দলকে এগিয়ে নেওয়ার গোলটাই তাঁর প্রমাণ। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে গোলমুখে জটলা থেকে টোকা দিয়ে ২-১ করেছেন মতিন। লিগে এটি তাঁর পঞ্চম গোল। বিরতিতে যাওয়ার আগে এবার গোল করিয়ে মতিনের ঝলক। কিরগিজস্তানের মিডফিল্ডার বখতিয়ার দুশবেকভের নেওয়া ফ্রি কিক দুর্দান্তভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পোস্টে শট নিয়েছিলেন মতিন। গোলরক্ষক ঠেকালে ফিরতি বলে ব্রাজিলিয়ান ভিনিসিয়ুসের পায়ে লেগে জালে, ৩-১।

একটি দল প্রথমার্ধেই ৩-১ গোলে এগিয়ে গেলে ম্যাচের আর খুব বেশি বাকি থাকে না। বসুন্ধরা ব্যবধান বাড়িয়ে নিল ৮৩ মিনিটে। শেষ গোলটি করেছেন কিরগিজ মিডফিল্ডার বখতিয়ার। এই জয়ে ১০ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে বসুন্ধরা। সমান ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে ১১তম স্থানে মোহামেডান।