'মাশরাফির যন্ত্রণা' অপেক্ষা করছে তাসকিনের জন্য!

চোট পাওয়ার পর তাসকিন কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুলের সামনে। ছবি: প্রথম আলো
চোট পাওয়ার পর তাসকিন কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুলের সামনে। ছবি: প্রথম আলো
>২০১৫ বিশ্বকাপে উইকেট শিকারে (৯টি) বাংলাদেশের সেরা বোলার ছিলেন তাসকিন। কিন্তু এ বিশ্বকাপে তাঁর দলে থাকাটা নিয়ে আছে অনিশ্চয়তা। গত বিপিএলে দুর্দান্ত ছন্দে থাকার পরও সব এলোমেলো হয়ে গেছে চোট পাওয়ায়। চোট কাটিয়ে ফিরেছেন, কিন্তু নির্বাচকদের চোখে এখনো তাসকিন বিশ্বকাপ খেলার মতো ফিট নন

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোরের বাইরের উইকেটে মাহমুদউল্লাহকে আজ টানা ৪ ওভার বোলিং করলেন তাসকিন আহমেদ। দুজন অনুশীলন করছেন এক ভাবনায়—বিশ্বকাপ খেলা স্বপ্নটা বাঁচিয়ে রাখা। কাঁধের চোট নিয়ে সংশয় বাদ দিলে মাহমুদউল্লাহর জায়গা শুধু বিশ্বকাপ দলেই নয়, তাঁর একাদশে থাকাও নিশ্চিত। কিন্তু তাসকিনের যে বিশ্বকাপ দলে ঠাঁই পাওয়া নিয়ে আছে চরম অনিশ্চয়তা। মাহমুদউল্লাহর জন্য শেষ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করবে দল, কিন্তু তাসকিনের কি সেই সৌভাগ্য হবে?

মাশরাফি বিন মুর্তজা তাঁর আদর্শ। নিজের জার্সি নাম্বার কেন ‘৩’, সেটির ব্যাখ্যায় তাসকিন একবার বলেছিলেন, ‘গুরুর পর শিষ্য। গুরু পরেন ২ নম্বর জার্সি। আমি ৩।’ এখন ‘গুরু’ মাশরাফির মতো তাঁকেও কি একই দুঃখ পেতে পেতে হবে? বিশ্বকাপের দল ঘোষণার সময় যত এগিয়ে আসছে, ততই মনে হচ্ছে মাশরাফির মতো ধাক্কা খেতে হবে তাসকিনকেও। ২০১১ বিশ্বকাপের তিন মাস আগে প্রিমিয়ার লিগ খেলতে গিয়ে হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন মাশরাফি।

চোট থেকে ফিরে বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেতে ভীষণ চেষ্টাও করেছিলেন। ৭০-৮০ ভাগ ফিট থাকার পরও তাঁকে নেওয়া হয়নি। বিশ্বকাপের দল ঘোষণা যেদিন হলো, মিরপুরের সে বিকেলটা বিষাদময় হয়ে উঠেছিল মাশরাফির কান্নায়। ২০১১ বিশ্বকাপ দলে না থাকার দুঃখ তিনি আজও ভুলতে পারেন না। এখনো বুক চিরে তাঁর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে, মাশরাফি আফসোস করেন, ‘আহ, ঘরের মাঠে বিশ্বকাপটা খেলতে পারলাম না!’

মাশরাফির সঙ্গে তাসকিনের তুলনা হয় না কিছুতেই। তবে প্রেক্ষাপট অনেকটাই এক। ৯ মাস জাতীয় দলের বাইরে থাকার পর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে (বিপিএল) বেছে নিয়েছিলেন ফেরার মঞ্চ হিসেবে। টুর্নামেন্টজুড়ে করেছিলেন দুর্দান্ত বোলিং। ২২ উইকেট নিয়ে ছিলেন সেরা দুইয়ে। সেরা বোলার সাকিব ২৩ উইকেট নিয়েছিলেন তাসকিনের চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে এবং টেস্ট—দুই সিরিজেই তাসকিনকে দলে রাখতে দুবার ভাবেননি নির্বাচকেরা। সব এলোমেলো হয়ে গেল নিউজিল্যান্ড সফরের পাঁচ দিন আগে পাওয়া অ্যাঙ্কলের চোটে।

তাসকিনের বিশ্বকাপ-স্বপ্ন আসলেই শেষ কি না, সেটি বলার সময় হয়নি এখনো। তবে বিসিবির দুই নির্বাচকের সঙ্গে কথা বলে যা বোঝা গেল, তাঁদের ভাবনায় ২৪ বছর বয়সী এই পেসার সেভাবে নেই। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন কাল যেমন বললেন, ‘সে তো কোনো খেলাতেই নেই। স্কিল, ফিটনেস না দেখে কীভাবে এত বড় টুর্নামেন্টে তাকে নিয়ে নেব? চোট থেকে ফিরেই তো একজন ক্রিকেটার বিশ্বকাপ খেলে ফেলতে পারে না!’ আরেক নির্বাচক হাবিবুল অবশ্য তাসকিনের সম্ভাবনা এখনই শেষ বলতে রাজি নন, ‘এখনো তো সময় আছে। দেখা যাক।’

নির্বাচকেরা ম্যাচ ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তাসকিন প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজেকে ফিট প্রমাণ করতে। নেটে বোলিং শুরু করেছেন দুদিন হলো। ফিল্ডিং-ব্যাটিং তো আছেই। কী মিল, এই চেষ্টাটা মাশরাফিও করেছিলেন ২০১১ বিশ্বকাপের আগে। নিজেকে ফিট প্রমাণ করতে প্রিমিয়ার লিগ খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাসকিন। প্রিমিয়ার লিগ শুরু হয়ে গেছে অনেক দিন হলো। তাসকিনকে খেলোয়াড় বাছাইয়ে কেউ নেয়নি, নামের পাশে ‘১ এপ্রিলের পর থেকে পাওয়া যাবে’ লেখা থাকায় কোনো দল উৎসাহী হয়নি। তবে বাইলজ অনুযায়ী তাসকিনকে এখনো নিতে পারে যেকোনো দল।

প্রিমিয়ার লিগের প্লেয়ার্স ড্রাফটে তাসকিন ছিলেন ‘বি প্লাস’ শ্রেণিতে । সিসিডিএমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদ মাহমুদ বলেন, ‘তাসকিন ফ্রি প্লেয়ার। যেকোনো দল তাকে নিতে পারে। ড্রাফটে বলা ছিল, ১ এপ্রিলের পর থেকে তাসকিনকে পাওয়া যাবে। এখন সে যদি ম্যাচ খেলার মতো ফিট থাকে, প্রিমিয়ার লিগ খেলতে ওর বাধা নেই।’

রাতে তাসকিন জানালেন, তিনি প্রিমিয়ার লিগ খেলবেন লিজেন্ডস অব রূপগগঞ্জের হয়ে। কাল সকালে দলের অনুশীলনে যোগ দেওয়ার কথা তাঁর।