কত দিন পর নাসির!

ব্যাটে-বলে দুটিতেই দ্যুতি ছড়িয়েছেন নাসির। ছবি: প্রথম আলো
ব্যাটে-বলে দুটিতেই দ্যুতি ছড়িয়েছেন নাসির। ছবি: প্রথম আলো
>বিকেএসপিতে আজ আবাহনীকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। এই হারে সুপার লিগে ওঠার আগে আরও দুটি পয়েন্ট খোয়াল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ব্যাটিং-বোলিংয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্সে ম্যাচসেরা নাসির। তবে তীব্র চাপে মনে রাখার মতোই এক ইনিংস খেলেছেন আবাহনী অধিনায়ক মোসাদ্দেক

আজ দুপুরেও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনের কাছে এক সাংবাদিক জানতে চাইলেন, ‘নাসির হোসেন কি সত্যি হারিয়ে গেল?’ গত বছর হাঁটুর চোটে পড়ে লম্বা সময় থাকলেন মাঠের বাইরে। গত জানুয়ারিতে বিপিএলে ফেরাটা ভালো হয়নি। এই প্রিমিয়ার লিগেও নাসিরের পারফরম্যান্স বলার মতো নেই। সময়ের স্রোতে তবে কি বাংলাদেশের ক্রিকেটে আরেকটি নক্ষত্র পতন? প্রশ্নটা জোরালো হওয়ার আগেই জেগে উঠলেন নাসির। আজ শক্তিশালী আবাহনীর বিপক্ষে হলেন ম্যাচের নায়ক।

আজ শুরু থেকেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে আবাহনী, ৮৮ রানে হারিয়ে বসে ৬ উইকেট। আবাহনীর ১০০ রান করাই যেখানে কঠিন, সেখানে সেঞ্চুরি করলেন দলের অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন। ছয়ে নেমে তীব্র চাপে কী ইনিংসটাই না খেললেন তিনি। মোসাদ্দেকের এই প্রাণপণ চেষ্টা দেখে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা আর আবদুল্লাহ আল মামুন। মোসাদ্দেক-মাশরাফির সপ্তম উইকেট জুটি যোগ করল ৫০ রান। নিচের দিকে নেমে সাধারণত স্লগ করে অভ্যস্ত মাশরাফি আজ হাঁটলেন স্বভাববিরুদ্ধ মন্থর গতিতে। জিয়াউর রহমানের বলে আউট হওয়ার আগে ৩৩ বলে করলেন ২০ রান। মাশরাফি আউট হওয়ার পর মোসাদ্দেক সঙ্গী হিসেবে পেলেন মামুনকে। দুজনের অষ্টম উইকেট জুটি যোগ করল ৫৭ রান।

অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করেছেন মোসাদ্দেক। ছবি: প্রথম আলো
অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করেছেন মোসাদ্দেক। ছবি: প্রথম আলো

২৬ রানে মামুন রানআউট হলেও মোসাদ্দেক এগিয়েছেন দলকে সম্মানজনক স্কোর এনে দিতে। এগিয়েছেন নিজের সেঞ্চুরির দিকে। শেষ ওভারে তাঁর সামনে ছিল দুটি সমীকরণ—হাতে ২ উইকেট, সেঞ্চুরি করতে হলে তাঁকে করতে হবে ৫ রান। ৫০তম ওভারের তৃতীয় বলে সালাউদ্দীন শাকিল রানআউট হয়ে যেতেই মোসাদ্দেকের সামনে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে যায়। তখন যে তিনি ৯৮ রানে অপরাজিত। শেষ পর্যন্ত চ্যালেঞ্জ উতরে যেতে পেরেছেন মোসাদ্দেক, অপরাজিত ছিলেন ১০১ রানে। আবাহনী পেল ৯ উইকেটে ২১১ রানের লড়াইয়ের স্কোর। ইনিংস বিরতিতে কেউ যদি বলে থাকেন, মোসাদ্দেক আজ যে ইনিংসটা খেলেছেন, ম্যাচসেরার পুরস্কার আবাহনী অধিনায়কের হাতেই ওঠা উচিত—কথাটা ভুল বলার উপায় নেই। তখন কে জানত, দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দিয়ে মোসাদ্দেককে ছাপিয়ে যাবেন নাসির।

নাসিরের অসাধারণ বোলিংয়েই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে আবাহনী। ১৪ রানে যে ৪ উইকেট পড়েছে, তিনটিই নাসিরের। ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে জাহিদ জাভেদ, তৃতীয় বলে সৌম্য সরকার আর পঞ্চম বলে আউট করেছেন নাজমুল হোসেন শান্তকে—মাঝের একটি বলে মিঠুন কোনোভাবে ঠেকিয়েছেন নাসিরের হ্যাটট্রিক! ১০ ওভারে ২ মেডেন দিয়ে ২৪ রানে ৩ উইকেটের পর নাসির গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন ব্যাটিংয়েও। ২১২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৮১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে শেখ জামাল যখন কাঁপছে, তখনই ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত নাসির। ছয়ে নেমে করেছেন ৪৫ রান। সেটির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুস্তাপ মজুমদারের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে গড়েছেন ৬০ রানের জুটি। এই জুটি শেখ জামালের জয়ের আশা উজ্জ্বল করে। ম্যাচের নায়ক তাই মোসাদ্দেক নন, নাসির—এক বছর পর যাঁর হাতে উঠল ম্যাচসেরার পুরস্কার।