ম্যারাডোনার শত্রু ক্লাবে ম্যারাডোনারই নাতি!

ম্যারাডোনার ভাগনে ড্যানিয়েল লোপেজের ছেলে এই হার্নান লোপেজ। ফাইল ছবি
ম্যারাডোনার ভাগনে ড্যানিয়েল লোপেজের ছেলে এই হার্নান লোপেজ। ফাইল ছবি

৫৮ বছরের এই জীবনে ডিয়েগো ম্যারাডোনা বন্ধু কম বানাননি, শত্রুও না। তবে তাঁর সেই বন্ধুত্ব, শত্রুতা এবং সম্পর্ক কিছুই যেন ধ্রুব নয়। আজ যিনি ম্যারাডোনার বন্ধু, কালই তিনি শত্রু হয়েছেন। আবার শত্রু থেকে বন্ধু হয়েছেন, এমন উদাহরণও কম নয়। খুব কাছের যেই সম্পর্ক, সেই স্ত্রী ও কন্যাদের সঙ্গেও তো ম্যারাডোনার মুখ দেখাদেখি বন্ধ এখন। এমন অননুমেয় ও উত্থান-পতনে ভরা জীবনে শুধু একটা জায়াগাতেই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি খুবই নিষ্ঠাবান ও আন্তরিক থেকেছেন। বোকা জুনিয়র্সের প্রতি তাঁর ভালোবাসার জায়গায়। এ নিয়ে কোনো দিন কোনো প্রশ্ন ওঠেনি।

তো বোকা জুনিয়র্সের বন্ধু মানে তো রিভার প্লেটের শত্রু। আর্জেন্টাইন ফুটবলের এটাই বাস্তবতা। বোকা-রিভার লড়াই বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল দ্বৈরথগুলোর একটি। এই তো কিছুদিন আগে কোপা লিবার্তাদোরেসের ফাইনালে বোকা-রিভার ম্যাচ নিয়ে কত কাণ্ড! মারামারি, সমর্থকদের উগ্র আচরণের কারণে শেষ পর্যন্ত ফাইনালের ফিরতি লেগের ম্যাচটা বুয়েনস এইরেস থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছে মাদ্রিদে। এক ক্লাবের সঙ্গে অন্য ক্লাবের এমনই শত্রুতা! বোকার সাবেক খেলোয়াড় এবং আজীবন সমর্থক হিসেবে তাই ম্যারাডোনাও রিভার প্লেটের শত্রু। সেই ম্যারাডোনার নাতি হয়ে কিনা হার্নান লোপেজ খেলছেন রিভার প্লেটের হয়ে!

এটুকু পড়ে অবশ্য কিছুটা খটকা লাগতে পারে। ম্যারাডোনার নাতি বলতে তো কন্যা জিয়ান্নিনার গর্ভে সার্জিও আগুয়েরোর সন্তান বেনজামিন আগুয়েরো ম্যারাডোনাকেই চেনে সবাই। তার বয়স মাত্র ১০ বছর হলো। এখনই তো বেনজামিনের পেশাদার ফুটবলে আসার সময় হয়নি! সত্যি কথা। আসলে এই নাতি ম্যারাডোনার দুই কন্যাদের কারও সন্তান নয়। ম্যারাডোনার ভাগনে ড্যানিয়েল লোপেজের ছেলে এই হার্নান লোপেজ। বোন আনার সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ম্যারাডোনার, সেই সুবাদে ভাগনে ড্যানিয়েলকেও বেশ পছন্দ করেন। আর সেই ভাগনের ছেলে হওয়ায় হার্নানও ম্যারাডোনার স্নেহভাজন। এক অর্থে তাই হার্নান লোপেজকে ম্যারাডোনার পরিবারের অংশই বলা যায়। আর ম্যারাডোনার পরিবারের একজন হয়ে হার্নানের রিভার প্লেটে খেলাটা তাই আলোচিত হচ্ছে বেশ।

এত আলোচনা অবশ্য আসতই না যদি লোপেজ নজর কাড়তে না পারতেন। কিন্তু গত রোববার রিভার প্লেটের হয়ে অভিষেক ম্যাচে বদলি নেমেই দুর্দান্ত এক গোল করেছেন, প্রায় আধা ঘণ্টা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন মাঝমাঠ। শেষ পর্যন্ত তাইগ্রের বিপক্ষে ম্যাচটা রিভার হেরেছে ৩-২ গোলে, কিন্তু সেই হারের হতাশা ছাপিয়ে ১৮ বছর বয়সী লোপেজকে নিয়ে মুগ্ধতাই বেশি সমর্থকদের। রিভার প্লেটের বয়সভিত্তিক দল থেকে উঠে আসা লোপেজের মধ্যে এরই মধ্যে তাঁর বিখ্যাত নানার ছায়াও দেখতে শুরু করেছেন অনেকে।

মিল কিছুটা আছেও। নানার মতোই লোপেজ খেলেন মাঝমাঠে, তরুণ ম্যারাডোনার মতো তাঁরও দারুণ গতি, দুর্দান্ত ড্রিবলিং। যে আধা ঘণ্টা মাঠে ছিলেন, তাঁকে থামাতে বেশ কয়েকবার ফাউল করতে হয় তাইগ্রের খেলোয়াড়দের। এর মধ্যেই করে বসেছেন একটা গোলও।

সবকিছুর পরও এখনই লোপেজকে কারও সঙ্গে তুলনা করাটা বাড়াবাড়ি, ম্যারাডোনার সঙ্গে তো অবশ্যই। কিন্তু ম্যারাডোনা নিজেই যে দারুণ আগ্রহী লোপেজকে নিয়ে! নইলে কি আর বেলারুশের ক্লাব ডায়নামো ব্রেস্টের কোচ থাকার সময় নাতিকে সেখানে নিয়ে যেতে চান বিদেশি খেলোয়াড়ের কোটায়! শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি, বেলারুশ ছেড়ে মেক্সিকান ক্লাব দেরাদোসের কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন ম্যারাডোনা। তবে লোপেজের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আছে ভালোই। লোপেজের বাবা ড্যানিয়েলই বললেন, ‘ডিয়েগো সব সময় হার্নানের খোঁজ নেয়, ওর ভিডিও দেখে। হার্নানের গায়ের জার্সিটা তিনি পছন্দ করেন না, কিন্তু ওর খেলা পছন্দ করেন।’

রিভার প্লেটে খেলে ম্যারাডোনার পছন্দের তালিকায় থাকা, এটাও কি কম কথা!