এবার ঝামেলা নো বল নিয়ে, আবার আইন নিয়ে হাজির এমসিসি

নো বল ডাকা এবং তা ফিরিয়ে নেওয়া নিয়ে আইপিএলে দেখা দিয়েছে নতুন বিতর্ক। ফাইল ছবি
নো বল ডাকা এবং তা ফিরিয়ে নেওয়া নিয়ে আইপিএলে দেখা দিয়েছে নতুন বিতর্ক। ফাইল ছবি
>আইপিএলে চেন্নাই বনাম রাজস্থান রয়্যালসের গত ম্যাচে ঘটেছিল ঘটনাটি। বোলারের প্রান্তে থাকা আম্পায়ার উলহাস গান্ধে হাত উঁচিয়ে নো বল ডাকেন। কিন্তু লেগ আম্পায়ার ব্রুস অক্সেনফোর্ড জানিয়ে দেন, বলটি নো ছিল না। এ নিয়ে দেখা দেয় বিতর্ক। এ ব্যাপারে আইনের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে এমসিসি

এমসিসিকে তাদের কেতাব নিয়ে দুদিন পরপর দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে। সেটিও কিনা আইপিএল নিয়ে! কদিন আগে মানকাড আউট নিয়ে এমসিসিকে দুই দফায় বক্তব্য দিতে হয়েছিল, দিতে হয়েছিল আইনের ব্যাখ্যা। এবার ক্রিকেটের আইনপ্রণেতা হিসেবে সুখ্যাত মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব ব্যাখ্যা দিল নো বল বিতর্ক নিয়ে।

আইপিএলে চেন্নাই বনাম রাজস্থান রয়্যালসের গত ম্যাচে ঘটেছিল ঘটনাটি। ৩ বলে ৮ রান লাগে—এমন সমীকরণ নিয়ে ব্যাট করছিল চেন্নাই। এ সময় বেন স্টোকসের একটি বিমার ছুটে এলে বোলারের প্রান্তে থাকা আম্পায়ার উলহাস গান্ধে হাত উঁচিয়ে নো বল ডাকেন। কিন্তু লেগ আম্পায়ার ব্রুস অক্সেনফোর্ড জানিয়ে দেন, বলটা নিচু হয়ে আসছিল, এর আগেই ব্যাটসম্যান বলটা খেলেছেন। লেগ আম্পায়ারের মনে হয়েছে, বলটা কোমরসমান উচ্চতার নিচে নেমে যেত। মূল আম্পায়ার নো ডেকেছেন, লেগ আম্পায়ার বলছেন নো নয়—আসল সিদ্ধান্ত কী? লেগ আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই শেষে বহাল থাকে। এ নিয়ে খেপে গিয়ে সাইডলাইন থেকে ধোনি মাঠের ভেতরে চলে আসেন। আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক করে ম্যাচ ফির ৫০ শতাংশ জরিমানাও গোনেন।

এমসিসির আইন বলছে, নো বল ডাকা কিংবা সেটি ভুল প্রতীয়মান হলে লেগ আম্পায়ারের সঙ্গে আলোচনা করে ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকার ননস্ট্রাইকিং প্রান্তের আম্পায়ারের আছে। তবে মূল সিদ্ধান্ত ননস্ট্রাইকিং প্রান্তের আম্পায়ারকে নিতে হবে, স্কয়ার লেগের আম্পায়ার নন। লর্ডস থেকে এমসিসির ক্রিকেট একাডেমি ম্যানেজার ফ্রেজার স্টুয়ার্ট বলেছেন, নো বল ‘৪১ নম্বর আইনের ৭ ধারার ১ উপধারা অনুযায়ী, যেকোনো ডেলিভারি, যেটা মাটিতে না পড়ে সরাসরি সোজাসুজি দাঁড়িয়ে থাকা স্ট্রাইকারের কোমরের বেশি উচ্চতা দিয়ে পার হয় কিংবা পার হতো বলে প্রতীয়মান হয়, সেই ডেলিভারিটি অবৈধ। এই ডেলিভারিতে আম্পায়ার নো বলের সংকেত দেবেন।’

ইংরেজিতে লেখা আইনটিতে আম্পায়ারকে লেখা হয়েছে ‘দ্য আম্পায়ার’। ক্রিকেটীয় আইনের পরিশিষ্টতে (এ ৫.১) ‘দ্য আম্পায়ার’ বা মূল আম্পায়ার বলতে বোলার প্রান্তের আম্পায়ারকে বোঝানো হয়েছে। স্টুয়ার্ট তাই বলছেন, ৪১.৭ নম্বর আইন অনুযায়ী নো বল ডাকার এখতিয়ার তাই ননস্ট্রাইকিং প্রান্তের আম্পায়ারেরই। তবে কোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত থাকলে আম্পায়ারদের পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে বলা হয়েছে।

আম্পায়ার একবার সিদ্ধান্ত দিয়ে ফেললে সেটি ফিরিয়ে নেওয়ারও সুযোগ আছে। এরপর তৃতীয় আম্পায়ার, রিভিউ—এসব তো আছেই। রিভিউ ছাড়াও আম্পায়াররা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিতে পারেন। এমসিসির আইন আরও ভালো করে বোঝার জন্য টম স্মিথের একটি বই আছে—‘ক্রিকেট আম্পায়ারিং অ্যান্ড স্কোরিং’। সেই বইয়ে স্মিথ লিখেছেন, ‘আলাপ-আলোচনা করা আম্পায়ারদের দুর্বলতা নয়, বরং সিদ্ধান্ত যথাসম্ভব সঠিকভাবে নেওয়ার জন্য আলোচনা করা জরুরি। আলোচনা সাপেক্ষে আম্পায়ার সিদ্ধান্ত বদলাতেও পারেন। আলোচনা করাটাকে বরং সব সময় উৎসাহিত করা হয়েছে।’

তবে সিদ্ধান্ত বদলানোর মূল দায়িত্বটা বোলার প্রান্তের আম্পায়ারকেই নিতে হবে। সেটাই বলছেন এমসিসির স্টুয়ার্ট। চেন্নাই-রাজস্থান ম্যাচের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, ‘আম্পায়ার তাঁর সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেন। কিন্তু সেটা বদলাতে হবে সঙ্গে সঙ্গে (আইন ২.১২)। তা না হলে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। এখানে সঙ্গে সঙ্গে বলতে বোঝানো হয়েছে পরের বলটা শুরুর আগে। এ ক্ষেত্রে সেদিন ম্যাচে যা ঘটেছে, তারা আইন মেনেই করেছেন বলে মনে হয়েছে।’