'হেটার্স'দেরও ধন্যবাদ দিলেন ইমরুল

এখনই অবসর নিচ্ছেন না ইমরুল। ফাইল ছবি
এখনই অবসর নিচ্ছেন না ইমরুল। ফাইল ছবি
>

বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়েছেন ইমরুল কায়েস। এখন তিনি ক্ষোভ ও হতাশা থেকে অবসর নিয়ে নিতে পারেন—এমন গুঞ্জন ডালপালা মেলেছিল সামাজিক মাধ্যমে। কিন্তু সে গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছেন কায়েস নিজেই। কেবল তা-ই নয়, এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে ভক্তদের সঙ্গে নিন্দুকদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন এই ওপেনিং ব্যাটসম্যান।

বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়েছেন। এ নিয়ে ইমরুল কায়েসের কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। কিন্তু গুজব ডালপালা মেলছিল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। ক্ষোভ আর হতাশায় তিনি নিয়ে নিতে পারেন অবসর। নির্বাচকেরা অবশ্য ইমরুলের বাদ পড়ার কারণটা বলেছেন। ওপেনিংয়ে বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান বেশি হয়ে যাচ্ছিল। সে হিসেবে ইমরুল কিছুটা দুর্ভাগাও। কোপ পড়ল তাঁর ওপরই। তবে অবসর নেওয়ার গুঞ্জনটা ইমরুল নিজেই উড়িয়েছেন সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসে। প্রত্যয় জানিয়েছেন নিজের পারফরম্যান্স দিয়েই আবারও জাতীয় দলে ফেরার। ভক্তদের ধন্যবাদ তো জানিয়েছেনই, একই সঙ্গে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়েছেন তাঁর নিন্দুকদেরও।

ফেসবুকে ইমরুল লিখেছেন, ‘আমি একটা জিনিস কয়দিন যাবৎ লক্ষ্য করছি, আমাকে নিয়ে অনেকে পোস্ট করছেন আমি নাকি ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি! এটা সত্যি আমার জন্য অনেক দুঃখজনক এই খবরগুলো। আমার ১১ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আমি সব সময় দেশ ও দেশের মানুষকে ভালো কিছু দেওয়ার চেষ্টা করছি! কখনো আল্লাহর রহমতে সফল হয়েছি আবার ব্যর্থ ও হয়েছি। তবে যদি বাংলাদেশ ক্রিকেটে এক শতাংশও দিতে পেরে থাকি, তাহলে আমি নিজেকে সার্থক মনে করি। ক্রিকেট আমার ভালোবাসা,আমি বিশ্বকাপ ২০১৯ স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েছি তার মানে এই না যে ক্রিকেট ছেড়ে দেব। আমার সামনে যখনই সুযোগ আসবে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কিছু দেওয়ার আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব। সবাই আমার পাশে থাকবেন এবং আমার জন্য দোয়া করবেন।ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার সকল ভক্ত ও হেটার্সদের!!’

ইমরুল প্রায়ই নিজেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ‘দুর্ভাগা’ ক্রিকেটার হিসেবে দাবি করেন! তাঁর এ দাবি উড়িয়ে দেওয়ার উপায়ও নেই। গত দুই বছরে দেখুন, কতবার তাঁকে ফেরার লড়াই করতে হয়েছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে দুঃস্বপ্নের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে রান পেয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম আর ইমরুলই। সেই ইমরুল ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে পরের ওয়ানডে সিরিজটাই (ত্রিদেশীয়) খেলতে পারলেন না। সুযোগ পেলেন না সর্বশেষ এশিয়া কাপের দলেও। টুর্নামেন্টের মাঝপথে হঠাৎ কয়েক ঘণ্টার নোটিশে তাঁকে উড়িয়ে নেওয়া হলো। ভ্রমণক্লান্তি আর আবুধাবির তীব্র গরমে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে খেললেন অপরাজিত ৭২ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস। এশিয়া কাপে ভালো খেলার পুরস্কার হিসেবে গত অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে রাখা হলো। তবে জানা যায়, সিরিজের প্রথম ম্যাচে তাঁকে খেলানো নিয়ে ভীষণ সংশয়ে ছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। দলের দু-একজন সিনিয়র ক্রিকেটারের জোর দাবিতে তিনি একাদশে থাকলেন এবং ১৪০ রান করলেন। সিরিজটা এত দুর্দান্ত খেললেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে তাঁকে বাদ দেওয়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু সব সময়ই তো আর একজন ক্রিকেটার ভালো করবেন না। ক্যারিবীয় বিপক্ষে দুটি ম্যাচে করলেন ৪ ও ০। ব্যস, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে বাদই দিয়ে দেওয়া হলো তাঁকে।

এবার নিউজিল্যান্ড সফরে ইমরুলকে বাদ দেওয়া নিয়ে বেশ হইচই হলে একবার শোনা গেল, ১৬ জনের স্কোয়াড করে তাঁকে নেওয়া হবে। পরে নেওয়া হলো না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১১ বছর কাটিয়ে দেওয়া আর কোনো ক্রিকেটারের এমন উত্থান-পতন আছে কি না, সন্দেহ! বারবার এভাবে ধাক্কা খেতে খেতে ইমরুল ভীষণ ক্লান্ত। গত কিছু দিনে তাঁর বেশ কয়েকবার মনে হয়েছে, এভাবে না খেলে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দেওয়াই ভালো!
কিন্তু না, বিদায় নিচ্ছেন না ইমরুল। আটঘাট বেঁধে আরও একবার নিজেকে প্রমাণ করার লড়াইয়ে নেমেছেন এই ব্যাটসম্যান।