চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী দল চাইলেই কেনা যায় না

আরও একবার চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে হতাশা নিয়ে ফিরলেন গার্দিওলা। ছবি: এএফপি
আরও একবার চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে হতাশা নিয়ে ফিরলেন গার্দিওলা। ছবি: এএফপি
>ম্যানচেস্টার সিটি চ্যাম্পিয়নস লিগে আবারও ব্যর্থ। কেবল তারাই নয়, জুভেন্টাস কিংবা পিএসজির মতো দল যারা কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে ইউরোপ-সেরা হওয়ার লক্ষ্যে দল গড়ছে, তারাও ব্যর্থ হয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে টাকা খরচ করে এই ট্রফি জেতার দল কেনা যায় না

দৃশ্যটা নিয়মিত হয়ে যাচ্ছে। ঘরের মাঠে ইংলিশ প্রতিপক্ষকে কদিন আগেই গুঁড়িয়ে দিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্ব এলে সেই একই প্রতিপক্ষকেই সামলাতে পারছে না তারা। গত মৌসুমে লিভারপুলের সঙ্গে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ছিটকে পরেছিল পেপ গার্দিওলার দল। এবার টটেনহাম হটস্পারের সঙ্গেও তাই। চ্যাম্পিয়নস লিগে পেপ গার্দিওলার আরেকটি হারের পর তাই প্রশ্ন উঠেই যাচ্ছে, আসলেই কি বিপুল টাকা-পয়সা খরচ করে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারে এমন দল কেনা সম্ভব? 

এ প্রজন্মের সেরা কোচ গার্দিওলা। ১১ বছরেই তাঁর জীবন বৃত্তান্তে যত ট্রফি জমেছে তাতে অনেক ক্লাবের ইতিহাসেও নেই। চ্যাম্পিয়নস লিগ, প্রিমিয়ার লিগ, বুন্দেসলিগা, লা লিগা, স্প্যানিশ কাপ, লিগ কাপ, বিশ্ব ক্লাব কাপ, উয়েফা সুপার কাপ—নেই কোনটি? কিন্তু আরও একবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ব্যর্থতা গার্দিওলাকে নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ক্যারিয়ারে প্রথম তিন বছরেই দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে চমক জাগিয়েছিলেন গার্দিওলা। সে কীর্তি শুধু জিনেদিন জিদানই টপকাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রথম তিন বছরে পাওয়া ওই দুই শিরোপা নিয়েই যে গার্দিওলাকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে সেটা কে জানত?

বার্সেলোনার পর বায়ার্ন মিউনিখ, এরপর ম্যানচেস্টার সিটি—সবখানেই সেরা দল গড়েছেন গার্দিওলা। কিন্তু ২০১০/১১ মৌসুমের পর থেকেই চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ওঠা হচ্ছে না গার্দিওলার। ২০১১ সালে ১২ গোল করে তাঁকে শিরোপা এনে দিয়েছিলেন মেসি। এর পর ৮ বছরে গার্দিওলার ভাগ্যে ইউরোপ সেরার পুরস্কার জোটেনি। গতকাল ৯৩ মিনিটে বাতিল হওয়া এক গোলে আবারও চ্যাম্পিয়নস লিগ স্বপ্নটা শেষ হয়েছে গার্দিওলার। এ নিয়ে সিটির হয়ে টানা তিন বছরে সেমিফাইনালের আগেই বাদ পড়লেন গার্দিওলা। টটেনহাম ও লিভারপুলের আগে মোনাকোর কাছে শেষ ষোলোতে হেরে বাদ পড়েছিল সিটি।

রুদ খুলিতের মতো কিংবদন্তি তাই মনে করেন, গার্দিওলার পক্ষে সিটিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো হয়তো সম্ভব নয়। বার্সেলোনায় মেসিদের প্রজন্ম পেয়েছিলে গার্দিওলা, অমন দল অর্থ খরচ করেও বানানো যায় না, ‘ওর কষ্ট টের পাওয়া যায়। আমি জানি এটা ওর জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ। সে এটা জিততে চায়। বার্সেলোনার সঙ্গে সে অবিশ্বাস্য এক দল পেয়েছিল রাইকার্ডের কাছ থেকে। যেখানে মেসির অভিষেক অনেক আগেই হয়ে গেছে এবং সে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। সে যখন বার্সেলোনায় ছিল তখন অনেক ম্যাচেই মেসি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখানে (সিটিতে) তিন বছরের আগে বায়ার্নের তিন বছরও দেখাচ্ছে, চাইলেই আপনি দল কিনতে পারেন না যারা চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতবে। এটাই সত্য। আমার ওর জন্য কষ্ট হচ্ছে, কারণ ওর আবেগটা আমি দেখেছি। আমি জানি ওকে অনুপ্রেরণা দেয় কী এবং এটা এ দলের জন্য বড় ধাক্কা।’

রুদ খুলিতের কথাই সম্ভবত সত্য। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পেছনে ৩০০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি বিনিয়োগ করেও কোয়ার্টার ফাইনালে বাদ পড়েছে জুভেন্টাস। পিএসজি তো চেক বই থেকে এক একটি পাতা ছিঁড়ছে আর এমবাপ্পে, নেইমারদের মতো তারকা কিনছে। অবশ্য এত তারকা কিনেও কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারছে না পিএসজি।

সিটিও হয়তো সে পথেই হাঁটছে। তিন মৌসুমে ৫২৫ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করেছেন গার্দিওলা। এতে যে দল হয়েছে তাতে গত মৌসুমেই সব রেকর্ড ভেঙে প্রিমিয়ার লিগ জিতেছে। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগ এলেই গার্দিওলার দল ভেঙে পড়ছে কোনো এক অদ্ভুত কারণে। বায়ার্নে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী এক দল পেয়েছিলেন। সে দলে থিয়াগো, লেভোনডোফস্কি, ভিদাল, বেনেতিয়ার মতো খেলোয়াড় যোগ করেও ফাইনালে ওঠা হয়নি তাঁর।

এবার গার্দিওলার বিদায়টা বেশ নিষ্ঠুর হয়েছে। একে তো অ্যাওয়ে গোলে বিদায়, দ্বিতীয়ত সে গোল ভিএআর দিয়ে সঠিক প্রমাণিত হলেও ইয়োরন্তের হাতের ছোঁয়া যে ছিল সেটা দেখা গেছে। কিন্তু পর পর দুই মৌসুমে ইংলিশ প্রতিপক্ষ যাদের লিগে অনায়াসে নিজেদের মাঠে হারিয়েছে সিটি, তাদের কাছে হেরে যাওয়া প্রমাণ করে দিচ্ছে চ্যাম্পিয়নস লিগ রহস্য ভেদ থেকে এখনো বহুদূরে আছে সিটি।