সাত গোলের আগুনের পর এক গোলের জল

গোলের পর ফিল ফডেন। ছবি: এএফপি
গোলের পর ফিল ফডেন। ছবি: এএফপি
>ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে আজ টটেনহামকে ১-০ গোলে হারিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠল ম্যানচেস্টার সিটি

নাহ, যতটা আগুনে লড়াই হওয়ার কথা ছিল, ততোটা হয়নি। উত্তাপ ছিল, আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে বেশ ভালোই ব্যতিব্যস্ত ছিল দুই দল। কিন্তু দুদিন আগে ইতিহাদে সেই পাগলাটে ম্যাচের ধারেকাছেও থাকবে না এই লড়াই। বরং ম্যানচেস্টার সিটির কাছে টটেনহাম হটস্পার্সের ১-০ গোলের হারে বজায় থাকল সেই ইঁদুর দৌড়-ই—লিগ টেবিলে কাল লিভারপুল শীর্ষে তো আজ সিটি শীর্ষে। আজ যেমন জয় তুলে নিয়ে ১ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে শীর্ষে উঠল সিটি।

চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল ফিরতি লেগের সেই ম্যাচের ২১ মিনিটের মধ্যে ৫ গোল করেছিল সিটি-টটেনহাম। টুর্নামেন্টটির ইতিহাসে এত অল্প সময়ের মধ্যে ৫ গোল আগে কেউ কখনো দেখেনি। সে ম্যাচে সিটি ৪-৩ গোলে জিতলেও ‘অ্যাওয়ে গোল’ নিয়মে টটেনহামই উঠে যায় সেমিফাইনালে। সিটি সমর্থকেরা তাই ভেবে নিয়েছিলেন, আজ লিগ ম্যাচে ওই বিদায়ের শোধ তুলবেন কোচ পেপ গার্দিওলা। সিটি যেভাবে জিতেছে, তাকে ঠিক ‘প্রতিশোধ’ বলা না গেলেও এক গোল পুঁজি করে শক্ত রক্ষণে তুলে নেওয়া হিসেবি জয় তো বলাই যায়।

ম্যাচের ৫ মিনিটে ১৮ বছর বয়সী উইঙ্গার ফিল ফডেনের গোলে এগিয়ে যায় সিটি। বাকি সময় সেই গোল পুঁজি করেই এসেছে জয়। প্রথমার্ধে গোলের দারুণ দুটি সুযোগ পেয়েছিল টটেনহাম। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ৩ মিনিট আগে ওয়ান-ওয়ান পরিস্থিতি থেকে গোল করতে পারেননি টটেনহামের দক্ষিণ কোরিয়ান তারকা হিউং মিন-সন। তার আগে ডেলে আলী আর রহিম স্টালিংও গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন। সুযোগ পেয়েছিল সিটিও। বিশেষ করে কেভিন ডি ব্রুইনা ও বের্নাদো সিলভা টটেনহামের রক্ষণে ভালোই ত্রাস ছড়ান।

সিটির জয়সূচক গোলের পেছনের কারিগরও এই সিলভাই। ডান প্রান্ত দিয়ে ঢুকে ক্রস করেছিলেন এই পর্তুগিজ মিডফিল্ডার। হেডে বলটা ফডেনকে দেন সার্জিও আগুয়েরো। ডাইভ দিয়ে হেড করে বলটা জালে পাঠাতে ভুল করেননি ‘স্টকপোর্টের ইনিয়েস্তা’খ্যাত এই মিডফিল্ডার। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এটাই তাঁর প্রথম গোল। সিটির জার্সি গায়ে ২০০০-এ এই দশকে জন্মানো প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে গোল করলেন ফডেন।

৩৭ মিনিটে চোটের কারণে ব্রুইনা উঠে যাওয়ার পর ধার কমে সিটির আক্রমণভাগের। বিরতির পর অবশ্য দুই দলই গা ঝাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে। তাতে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠে খেলা। ৭৩ মিনিটে টটেনহামকে সমতায় ফেরানোর দারুণ সুযোগ নষ্ট করেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার লুকাস মউরা। বক্সের মধ্যে তাঁর টোকা কোনোমতে পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন সিটি গোলরক্ষক এডেরসন।

প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট টেবিলে গত কয়েক রাউন্ড ধরেই সিটি-লিভারপুলের ইঁদুর দৌড় জমে উঠেছে। এই ম্যাচ খেলতে নামার আগে যেমন ৩৪ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ছিল লিভারপুল। আজ জিতে তাদের সমান ম্যাচে সিটির পয়েন্টসংখ্যা দাঁড়াল ৮৬। দুই দলের হাতেই রয়েছে আর ৪টি করে ম্যাচ। নিজেদের এই চার ম্যাচে দুই দলই যে জয় পেতে মরিয়া থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। কেননা লিগের এই শেষ পর্বে পা হড়কানো মানে শিরোপাও হারানো।

টটেনহামের ওপর শিরোপা জয়ের চাপ নেই। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগের আগামী মৌসুমে জায়গা করে নেওয়ার চাপ তো আছেই। আজ জিতলে শীর্ষ চারে থেকে মৌসুম শেষের সমীকরণ অনেকটাই সহজ করে ফেলত মাউরিসিও পচেত্তিনোর দল। তা না হলেও ৩৪ ম্যাচে ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিনে থাকল দলটি। কিন্তু তাঁদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলা আর্সেনাল ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে টটেনহামের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে। আর পাঁচে থাকা চেলসির সংগ্রহও ৩৪ ম্যাচে ৬৬।