ধোনির আরেকটি 'মাস্টারক্লাস' কিন্তু শেষ হাসি কোহলির

দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেও দলকে জেতাতে পারেননি ধোনি। ছবি: এএফপি
দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেও দলকে জেতাতে পারেননি ধোনি। ছবি: এএফপি
আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসকে ১ রানে হারিয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেও দলকে জেতাতে পারেননি ধোনি


নয় বছর পর এবার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (আরসিবি) হয়ে আইপিএলে মাঠে নেমেছেন ডেল স্টেইন। আগের ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে ৩ ওভার বল নিয়েছিলেন ২ উইকেট। কলকাতার বিপক্ষে সেই ম্যাচে জয়ও তুলে নিয়েছিল আরসিবিই। আজও দলটির ৭ উইকেটে ১৬১ রানের পুঁজি রক্ষা করতে গিয়ে শুরুতেই গর্জে উঠল ‘স্টেইন গান’। চেন্নাই সুপার কিংসের ইনিংসে প্রথম ওভারেই প্রোটিয়া পেসার পরপর দুই বলে তুলে নেন ২ উইকেট। না, ডেল স্টেইন হ্যাটট্রিকের দেখা পাননি, তবে ধোনির দুর্দান্ত ইনিংসের পরও আরসিবি জয়ের দেখা পেয়েছে ম্যাচের শেষ বলে।

সুরেশ রায়না ও শেন ওয়াটসনকে তুলে নেন ডেল স্টেইন। পাওয়ার প্লের মধ্যে ফাফ ডু প্লেসি আর কেদার যাদবকেও হারায় চেন্নাই। তাঁদের তুলে নেন আরসিবির আরেক পেসার উমেশ যাদব। ৬ ওভারের মধ্যে ৩২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চেন্নাই তখন ভীষণ চাপে। ছয়ে নামা মহেন্দ্র সিং ধোনি এসে আম্বাতি রাইড়ুকে নিয়ে শুরু করেন স্রোতের বিপরীতে লড়াই। ১৪তম ওভারে রাইড়ু (২৯ বলে ২৯) চাহালের শিকার হওয়ার আগে দুজনের ৪৪ বলে ৫৫ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল চেন্নাই। জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে ৭০ রান দরকার ছিল দলটির। উইকেটে ধোনি থাকায় আরসিবির সামনে হারের চোখ রাঙানিটা ছিল।

যুজবেন্দ্র চাহালের করা ১৬তম ওভার থেকে ১৩ রান তুলে নেন ধোনি-জাদেজা। এতে লক্ষ্য নেমে আসে ২৪ বলে ৫৭ রানে। পরের ওভারে ধোনির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হন জাদেজা। শেষ ১৮ বলে ৪৯ রানের কঠিন সমীকরণে পরে যায় চেন্নাই। ধোনি তখন ৩৩ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত। অন্য প্রান্তে ডোয়াইন ব্রাভো। তাঁদের জুটির ওপরই নির্ভর করছিল চেন্নাইয়ের হার-জিত। ১৮তম ওভারে আরসিবি অধিনায়ক বল তুলে দেন দলের সেরা ‘অস্ত্র’ ডেল স্টেইনের হাতে। ওই ওভারে ডেল স্টেইনের কাছ থেকে ছক্কা আদায় করে ফিফটির মুখ দেখেন ধোনি। মোট ১৩ রান তুলে শেষ দুই ওভারে জয়ের সমীকরণ নামিয়ে আনেন ১২ বলে ৩৬ রানে।

শেষ ওভারে অনেক রান তাড়া না করার চাপ এড়াতে চাইলে ১৯তম ওভারে যতটা বেশি সম্ভব রান তুলতে হতো চেন্নাইকে। ধোনি এ হিসেব করেই সাইনির করা ওই ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নেননি। ব্রাভো তখন মাত্র ৩ বল খেলায় চাপটা নিজের ওপর তুলে নেন ধোনি। পরের বলে রান না পেলেও তৃতীয় বলে গিয়ে মেরে দেন ছক্কা। ওটা আবার ‘নো বল’ও ছিল। সব মিলিয়ে ওই ওভারে মাত্র ১০ রান তোলার পাশাপাশি ব্রাভোর উইকেট হারায় চেন্নাই। এতে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ২৬ রানের ভীষণ কঠিন সমীকরণে পরে যায় ধোনির দল।

উমেশ যাদবের করা শেষ ওভারের প্রথম বলেই চার মেরে দারুণ সূচনা করেন ধোনি। পরের বলে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা! প্রথম দুই বলেই আসে ১০ রান। অর্থাৎ বাকি ৪ বলে দরকার ১৬। তৃতীয় বলেও স্ট্রেট অঞ্চল দিয়ে ছক্কা মারেন ধোনি। পরের বলে নিয়েছেন ২ রান। এতে শেষ ২ বলে দরকার ছিল ৮ রানের। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের গ্যালারি তখন দমবন্ধ উত্তেজনায় বুঁদ। ওদিকে ধোনির মাথা যথারীতি ঠান্ডাই ছিল। ভীষণ মার খেয়ে লাইন-লেংথ ভুলে যাওয়া যাদব পঞ্চম বলটি ফুল টস দেওয়ায় মিড উইকেট দিয়ে আবারও ছক্কা হাঁকান ধোনি। শেষ বলে দরকার পরে ২ রানের। অবিশ্বাস্য ব্যাপার, যাদবের শেষ বলটা ধোনি ব্যাটেই লাগাতে পারলেন না!

কিন্তু রানের জন্য পড়িমড়ি করে দৌড়েছেন ধোনি-শার্দুল ঠাকুর দুজনেই। শেষ রক্ষা হয়নি। ৮ উইকেটে ১৬০ রানেই থেমেছে চেন্নাইয়ের ইনিংস। ঠাকুর রানআউট হওয়ায় ১ রানের দুর্দান্ত জয় তুলে নেয় আরসিবি। অন্যদিকে, ৭ ছক্কা ও ৫ চারে সাজানো ৪৮ বলে ৮৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেও হারের মুখ দেখতে হয় ধোনিকে। তবে হারলেও ১০ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে রইল চেন্নাই। অন্যদিকে, ১০ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে আরসিবি। আগে ব্যাট করা দলটি পার্থিব প্যাটেলের ৩৭ বলে ৫৩ রানের ইনিংসে ভালো শুরু পেয়েছিল। কিন্তু পরের ব্যাটসম্যানেরা সেভাবে ভালো করতে না পারায় সংগ্রহটা আরও বড় করতে পারেনি আরসিবি।