লজ্জার, হতাশার, বিব্রতকর

ক্ষণিকের ঝড়ে আশা জাগিয়ে ফিরে যাচ্ছেন জিয়াউর, আফগানিস্তানের জয়টা দাঁড়াল এক পা দূরে। পাশে দাঁড়িয়ে উল্লসিত তাই আফগান উইকেটকিপার শাহজাদ। এই উল্লাস পরে মিশেছে দেশটির ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়ের উদ্যাপনে  প্রথম আলো
ক্ষণিকের ঝড়ে আশা জাগিয়ে ফিরে যাচ্ছেন জিয়াউর, আফগানিস্তানের জয়টা দাঁড়াল এক পা দূরে। পাশে দাঁড়িয়ে উল্লসিত তাই আফগান উইকেটকিপার শাহজাদ। এই উল্লাস পরে মিশেছে দেশটির ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়ের উদ্যাপনে প্রথম আলো

লজ্জার, হতাশার, না বিব্রতকর? বাংলাদেশের পরাজয়ের জন্য উপযুক্ত বিশেষণ হতে পারত যেকোনোটিই। মুশফিকুর রহিম বেছে নিলেন সব কটিই, ‘এই হার যেমন হতাশার, তেমনি লজ্জার ও বিব্রতকরও। গত এক মাসে আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলিনি। তার পরও বিশ্বাস ছিল আফগানিস্তানের সঙ্গে জিতব।’
অবশ্য এভাবে মুখে না বললেও চলত। অপ্রতাশিত পরাজয়ের ধাক্কার প্রভাবটা বোঝা যাচ্ছিল মুশফিককে দেখেই। চোখে-মুখে রাজ্যের হতাশা। কথাবার্তায় এমনিতে যিনি দারুণ সপ্রভিত, সেই তিনিই কথা বলছিলেন ম্রিয়মাণ হয়ে। যেন কোনো সুদূর থেকে ভেসে আসছে কণ্ঠ। ভুল থেকে শিক্ষা না নেওয়া, দলের বাজে শরীরী ভাষা—এসব প্রসঙ্গে বারবারই বেরিয়ে আসছিল অধিনায়কের হতাশা।
তবে কালকের ছবিটা কিন্তু আগেই দেখে ফেলেছিলেন মুশফিক। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হারের পরই বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘আমরা যদি এভাবেই খেলতে থাকি, তাহলে এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের সঙ্গে জিততে পারি কি না সন্দেহ।’ কাল সেই কথা মনে করিয়ে দেওয়ার পর ভবিষ্যদ্বাণী ‘সফল’ হওয়ার হতাশা ঝরল অধিনায়কের কণ্ঠে, ‘শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারেও যদি কারও খারাপ না লাগে, তাহলে বলতে হবে, তার ক্রিকেট খেলাই উচিত নয়। আমার মনে হচ্ছে, আমাদের কেউ কেউ ব্যাপারটা সেভাবে অনুভব করছে না।’ সেই তাঁদের জন্য একটি সতর্কবার্তাও শুনিয়ে দিলেন অধিনায়ক, ‘কেউ যদি না পারে, তার বদলি আসবে। কারণ, এটা দেশের ব্যাপার, কারও ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়। আমরা যদি যথেষ্ট ভালো না হই, তবে পরিবর্ত ক্রিকেটার আসবে।’
সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো, ব্যাটিং-বোলিংয়ের মতো ফিল্ডিংয়েও বাজে সময় আসছে নিয়মিত। ক্যাচ মিস আর বাজে ফিল্ডিংয়ের মহড়া ছিল কালও। কিন্তু ফিল্ডিংটা তো একদমই নিজেদের হাতে! কারণ জিজ্ঞাসায় অধিনায়ক মেনে নিলেন অসহায় আত্মসমর্পণ, ‘কারণটা যদি আমি জানতাম, তাহলে তো প্রথম ম্যাচের পরই ঠিক করে ফেলতাম। বুঝতে পারছি না কেন বাজে ফিল্ডিং হচ্ছে। ফিল্ডিংয়ে টানা এতটা বাজে সময় সম্ভবত আর কখনো আসেনি।’
বিব্রতকর পরাজয় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে কম নেই। ২০০৩ সালে কানাডার বিপক্ষে লজ্জাজনক সেই হারে ছিলেন না মুশফিকুর রহিম। তবে আয়ারল্যান্ডের কাছে হার দেখেছেন, গত বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ রানের ম্যাচে ছিলেন, ২০১০ সালে গ্লাসগোয় হল্যান্ডের কাছে হারে তিনি আউট হয়েছিলেন প্রথম বলে। তবে বিব্রতকর হারের র‌্যাঙ্কিংয়ে মুশফিক শীর্ষে রাখলেন কালকের হারকেই, ‘এটিই সবচেয়ে বাজে, সবচেয়ে লজ্জাজনক হার। একটি সেকেন্ডের জন্যও কখনো আমার মনে হয়নি, আমরা আফগানিস্তানের কাছে হারতে পারি। শেষ পর্যন্ত বোঝা গেল, আমরা যথেষ্ট ভালো নই।’ স্বাভাবিকভাবেই উল্টো ছবি আফগান শিবিরে। বাংলাদেশকে তলানিতে ঠেলে আফগানিস্তান উঠেছে চূড়ায়। জয়ের নায়ক আসগর স্টানিকজাই এটিকে বলছেন আফগান ক্রিকেটের সেরা জয়, ‘এটি আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক জয়, স্মরণীয় জয়। আমরা প্রতিটি দলকেই কঠিন সময় উপহার দিতে চেয়েছিলাম। তবে বাংলাদেশ যেহেতু বাকিগুলোর চেয়ে খানিকটা দুর্বল, ওদের দিকে দৃষ্টি ছিলই। টেস্ট দলগুলোর বিপক্ষে চতুর্থ ওয়ানডেতেই আমরা জিতলাম, মনে হয় না আর কোনো সহযোগী দেশ এমনটি করতে পেরেছে। অসাধারণ এক জয় এটি।’
আফগানরা সাধারণত জয় উদ্যাপন করে তাদের ঐতিহ্যবাহী ‘আথান’ নাচ দিয়ে। এই নাচেও নেতৃত্ব দেন স্টানিকজাই, সঙ্গে শাপুর জাদরান। কাল আফগানরা যখন আথান নাচছেন, বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে নিশ্চয়ই কবরের নিস্তব্ধতা। সেখানে আনন্দময় কোলাহল কি শোনা যাবে শিগগিরই!