মেসিকে সবাই কত ভালোবাসে, দেখল তাঁর ছেলে

আর্জেন্টিনার কিছু মানুষ সব সময় বাবার সমালোচনা করে, ব্যাপারটা ভালো লাগে না থিয়াগোর। ছবি : টুইটার
আর্জেন্টিনার কিছু মানুষ সব সময় বাবার সমালোচনা করে, ব্যাপারটা ভালো লাগে না থিয়াগোর। ছবি : টুইটার
>

বার্সেলোনায় রাজার আসনে আসীন হলেও নিজের দেশ আর্জেন্টিনায় মেসিকে উঠতে-বসতে সমালোচনার শিকার হতে হয়। এর পেছনে কারণ হিসেবে কাজ করে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে শিরোপা জিততে না পারার ব্যর্থতা। মেসির ছয় বছরের ছেলে থিয়াগো বাবার প্রতি এই বিদ্বেষের অর্থ খুঁজে পায় না। কিন্তু সম্প্রতি সেও বুঝল, আর্জেন্টাইন এই তারকাকে দেশের লোকজন কত ভালোবাসে!

‘আর্জেন্টিনায় তোমাকে ওরা কেন ক্রুশবিদ্ধ করে?’

সহজ-সরল একটা প্রশ্ন, কিন্তু এর মধ্যে কতই–না কষ্ট লুকিয়ে আছে! দেশের জার্সি পরে শিরোপা না জেতার কারণে মেসিকে শূলে চড়তে হয় প্রায়ই। ব্যাপারটা নজর এড়ায় না বড় ছেলে থিয়াগো মেসির । কিন্তু সে বুঝে উঠতে পারে না, কেন তার বাবার প্রতি আর্জেন্টিনার মানুষের এত বিদ্বেষ। এসব দেখে কষ্ট পায় সে। তবে আশার কথা, গুটিকয়েক নিন্দুক ছাড়া দেশের সবাই-ই বোঝেন, মেসি তাঁর দেশের জার্সি গায়েও শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করেন। বোঝেন, মেসি আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় সম্পদ। গতকাল এই সত্যটা বুঝল থিয়াগোও। মেসির ছেলের ভুল ধারণা ভাঙার জন্য আর্জেন্টিনার চ্যানেল টিওয়াইসি স্পোর্টস একটা ভিডিও বানিয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, থিয়াগোর মতো ছয় বছর বয়সী কিছু ছেলেমেয়ে মেসির প্রতি তাদের মুগ্ধতার কথা প্রকাশ করছে। থিয়াগোর বাবা যে তাদের চোখে কত বড়, কত মহান, তারা যে থিয়াগোর বাবাকে কত ভালোবাসে, ভিডিওতে সেটাই থিয়াগোকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে তারা।

ভিডিওটা ছেলের সঙ্গে দেখেছেন মেসিও।

ভিডিওতে এক ছেলেকে বলতে দেখা যায়, ‘থিয়াগো, তোমার বাবা বিশ্বের সেরা। চিন্তা কোরো না। তোমার বাবাকে আমরা সবাই অনেক ভালোবাসি আর্জেন্টিনায়।’


আরেক খুদে ভক্ত বলে, ‘থিয়াগো, তোমার বাবার জন্য তোমার গর্বিত হওয়া উচিত। তোমার বাবা ফুটবলকে অন্তরে ধারণ করেন। আর সেটা ছুঁয়ে যায় সকল আর্জেন্টাইনকে। আমি বড় হয়ে তোমার বাবার মতো হতে চাই।’


ফেলিপে নামের এক শিশু বলে, 'থিয়াগো, আমি ফেলিপে। আমি বলতে চাই যে তোমার বাবাকে ও আর্জেন্টিনার জাতীয় দলকে আমরা সবাই ভালোবাসি।'

কিছুদিন আগে আর্জেন্টিনার রেডিও স্টেশন ক্লাব অক্টুব্রে ৯৪.৭–কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেসি জানিয়েছেন বড় ছেলে থিয়াগো মেসির এই কষ্টের কথা।

ডিয়েগো ম্যারাডোনার পর মেসিকে ঘিরেই আর্জেন্টিনা স্বপ্ন বুনেছে। ক্লাবের হয়ে সব জেতা ফরোয়ার্ডই জাতীয় দলকে কোনো শিরোপা এনে দিতে পারেননি। এ হতাশা অনেক আর্জেন্টাইনই মেনে নিতে পারেন না। আবার মেসি অবসর নেওয়ার পর তারাই আকুল আবেদন করে রাগ ভাঙিয়েছেন। খাদের কিনারে থাকা আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপে নিয়ে গেছেন মেসি। কিন্তু বিশ্বকাপে ভালো ফল না করায় আবার মেসিরই সমালোচনা হয়েছে। সে সমালোচনা বিস্মিত করেছে মেসির ছয় বছর বয়সী ছেলে থিয়াগোকেও। বিশ্বকাপের পর স্বেচ্ছা অবসর কাটিয়ে কদিন আগেই ফিরেছেন। সাক্ষাৎকারে ফেরার কারণটা জানিয়েছেন মেসি, ‘খুব করেই জাতীয় দলে কিছু জিততে চাই। ফিরে এসে সব বড় ম্যাচেই খেলতে চেয়েছিলাম আমি।’ কিন্তু তাঁর প্রত্যাবর্তন নিয়েও আর্জেন্টিনায় হয়েছে সমালোচনা। তা নিয়ে কথা বলতে গিয়েই ছেলের প্রশ্নের কথা জানালেন মেসি, ‘আমি ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর অনেকেই সেটির সমালোচনা করেছে। আমার ছয় বছর বয়সী ছেলে আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, ‘‘বাবা, আর্জেন্টিনায় তোমাকে ওরা কেন ক্রুশবিদ্ধ করে?’’ আমি ওকে বলেছি, এটা গুটিকয়েক লোকের কাজ। আর্জেন্টিনার হয়ে খেলতে প্রবল ইচ্ছাটা আমি আগেও দেখিয়েছি, এ নিয়ে কারও কাছে আমার কিছু প্রমাণের নেই।’

টিআইসি স্পোর্টস তাই নিজ উদ্যোগে থিয়াগোকে দেখানোর জন্য ভিডিওটা বানিয়েছে, যাতে সে বুঝতে পারে, তার বাবাকে দেশের সবাই কত ভালোবাসে। তার মতো কত ছেলেমেয়ের আইডল তার বাবা। ভিডিওটা থিয়াগোর মনোজগতে কেমন প্রভাব ফেলতে পেরেছে, কে জানে!