বাংলাদেশের 'দ্বাদশ খেলোয়াড়' হতে চান? আজ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আসুন

ফাইনালের আগে অনুশীলনে বাংলাদেশের মেয়েরা। ছবি: বাফুফে
ফাইনালের আগে অনুশীলনে বাংলাদেশের মেয়েরা। ছবি: বাফুফে
>

অনূর্ধ্ব-১৯ বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফাইনালে আজ লাওসের মুখোমুখি হবে স্বাগতিক বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা ছয়টায়। প্রতি ম্যাচের মতো খেলাটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে

‘এমন খেলা দেখতে প্রতিদিন-ই মাঠে আসা যায়।’

সেমিফাইনালে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলা দেখে গ্যালারি ছাড়ার সময় খুব উচ্ছ্বাস নিয়ে কথাটি বলছিলেন এক দর্শক। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ৩-০ গোলের জয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের মেয়েরা পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন অপূর্ব সব গোলের । মনিকা চাকমা, মার্জিয়া আক্তারদের দৃষ্টিনন্দন গোলে গ্যালারিতে দর্শকদের উচ্ছ্বাসও ছিল বাধভাঙা। গ্যালারির দর্শকেরাও যেন অলক্ষ্যে ‘দ্বাদশ খেলোয়াড়’ হিসেবে ছিলেন মাঠে। ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’-র চোখ রাঙানি সত্ত্বেও ফাইনালে আশা করা যেতেই পারে গ্যালারি ভর্তি দর্শক। বাংলাদেশের ‘দ্বাদশ খেলোয়াড়’-দের একজন হতে আজ আপনি থাকছেন তো গ্যালারিতে?

ছয় জাতির এই টুর্নামেন্টে যোগ্য দুই দল ফাইনালে উঠেছে, এ নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। গ্রুপপর্বে মাঠের পারফরম্যান্সে কিছুটা পিছিয়ে ছিলেন মিসরাত জাহান মৌসুমিরা। কিন্তু সেমিফাইনালে তাঁদের খেলায় মন ভরেছে সমর্থকদের। ফাইনালে উঠতে তাঁদের মধ্যে যে তীব্র বাসনা দেখা গিয়েছিল, আজ সেখান থেকে শুরু করতে পারলেই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আরও একটি উচ্ছ্বাসময় দিনের দেখা পেতে পারে স্বাগতিক সমর্থকেরা। এই লক্ষ্যপূরণে দর্শকদের পাশে চেয়েছেন অধিনায়ক মৌসুমি, ‘আমরা খুব খুশি যে দর্শক মাঠে এসে আমাদের সমর্থন ও উৎসাহ দেয়। আশা করি ফাইনালে আরও অনেক বেশি দর্শক মাঠে আসবে এবং আমাদের উৎসাহ দেবে।’

ঘরের মাঠের খেলার সুবিধে বাদ দিলে বাংলাদেশের তুলনায় দলীয় ও ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে লাওসকে এগিয়ে রাখতেই হবে। ফাইনালে ওঠার আগ পর্যন্ত প্রতি ম্যাচে প্রচুর গোল করেছে দলটি। তিন ম্যাচে গোলসংখ্যা ১৮! মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ৫-০, তাজিকিস্তানের বিপক্ষে ৬-০ এবং সেমিফাইনালে কিরগিজদের ৭-১ গোলে হারিয়েছে লাওসের মেয়েরা। সে তুলনায় ৩ ম্যাচে বাংলাদেশের গোলসংখ্যা ৭। আরব আমিরাতকে ২-০ গোলে হারিয়ে শুরু। দ্বিতীয় ম্যাচে কিরগিজদের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয় আর সেমিফাইনালে মঙ্গোলিয়ার জালে ৩ গোল করেছে মেয়েরা।

গোলের পরিসংখ্যান বিবেচনায় ফাইনালে লাওসকে এগিয়ে রাখাই যায়। কিন্তু ম্যাচটা তো ফাইনাল। শিরোপা জয়ের মঞ্চে গ্রুপপর্বের হিসেব কোনো কাজে আসে না। সে সুবাদেই কিনা লাওস কোচ ভংমিসে সোবোখামকের চোখে ফাইনালে দুই দলের সম্ভাবনা ‘ফিফটি-ফিফটি’। লাওস অধিনায়ক আফতাসালা অবশ্য শিরোপা জিততে মরিয়া, ‘ফাইনালে উঠে এখন শিরোপা জয় ছাড়া কিছুই ভাবছি না। শিরোপা জয়ের সব সামর্থ্য আমাদের আছে।’

লাওসের প্রথম শিরোপার হাতছানি, আর বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বাংলাদেশের শিরোপা আছে ছয়টি। ফলে ফাইনালে কীভাবে চাপমুক্ত থেকে খেলা যায়, সেটা মৌসুমিদের চেয়ে ভালো জানা থাকার কথা নয় লাওসের মেয়েদের। বাড়তি সুবিধা হিসেবে যোগ হয়েছে ঘরের মাঠে নিজেদের দর্শকদের সামনে খেলার স্বস্তি। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানি নিজের দলকেই এগিয়ে রাখছেন, ‘ স্বাগতিক হিসেবে আমরা নিজেদের ফেবারিট ভাবছি। আশা করছি ফাইনাল জিতে দেশকে ট্রফি উপহার দিতে পারব।’

সবকিছু মিলিয়ে দুর্দান্ত এক লড়াইয়ের আভাসই পাওয়া যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দুর্দান্ত কিছু গোল ও মুভ দেখার আশা নিয়ে আসতেই পারেন। কিংবা দেখতে পারেন, মাঝমাঠ থেকে মনিকার চাকমার দুর্দান্ত ভলি বা রক্ষণচেরা কিছু দুর্দান্ত থ্রু অথবা লেফট উইঙ্গার শামসুন্নাহারের ট্রেডমার্ক ‘ক্রুইফ টার্ন’। এ ছাড়া লাওস দলে আছেন ‘কমপ্লিট ফরোয়ার্ড প্যাকেজ’খ্যাত—কেওটা পে। তিন ম্যাচে ৮ গোল করে টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা। শুধু সময়মতো ঘর থেকে বেরিয়ে চলে আসুন মাঠে, আপনার জন্য ছুটির দিনে সন্ধ্যায় অপেক্ষা করছে দুর্দান্ত এক ফুটবল লড়াই।