সুন্দর টুর্নামেন্টের প্রশ্নবিদ্ধ সমাপ্তি

যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দ বাংলাদেশ দলের। ছবি: প্রথম আলো
যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দ বাংলাদেশ দলের। ছবি: প্রথম আলো
বৃষ্টির কারণে বাতিল হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের ফাইনাল। সে সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হয়েছে এটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে

ম্যাচ শুরুর নির্ধারিত সময়ের আধঘণ্টা আগ থেকেই প্রেস বক্সে গুঞ্জন ‘ফাইনাল হচ্ছে না’। শেষ পর্যন্ত সবাইকে বিস্মিত করে ম্যাচ বাতিলের ঘোষণা দেন আয়োজকেরা। প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয় দুই ফাইনালিস্ট বাংলাদেশ ও লাওসকে।

আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট সফল করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তার সবকিছুই ছিল অনূর্ধ্ব-১৯ বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে। স্বাগতিক বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশের খেলোয়াড়দের সুষ্ঠু নিরাপত্তা ব্যবস্থা, গ্যালারিতে দর্শকের আগমন, আধুনিক প্রচার ব্যবস্থা—কোনো কিছুরই কমতি ছিল না। সে টুর্নামেন্টের শেষটা হলো এমন? ফাইনালে বল মাঠে না গড়িয়েই! বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গ্যালারিতে বসা দর্শকেরা বাড়ি ফিরেছেন হতাশা নিয়ে, উপযুক্ত পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও খেলা না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে।

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সকাল থেকেই ঢাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি। এর মধ্যেও বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ফুটবলপ্রেমীরা উপস্থিত হয়েছিলেন শিরোপার লড়াই দেখতে। বৃষ্টিতে মাঠের টাচলাইনে কিছু অংশে পানি জমলেও খেলা শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগে মাঠ খেলার জন্য পর্যাপ্ত উপযুক্ত হয়ে ওঠে। দুই দল ওয়ার্মআপ করে ড্রেসিংরুমে ফিরে গিয়েছিল। ম্যাচ অফিশিয়ালরাও খেলা চালানোর প্রস্তুতি নিয়ে অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকের ওপর এসে দাঁড়ান। বৈরী আবহাওয়া কেটে যাওয়ায় ম্যাচ শুরু হওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনেছেন গ্যালারির দর্শকেরা। সে অপেক্ষা তাঁদের শেষ হয়েছে হতাশায়।

সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটের দিকে বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি ও বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ আন্তর্জাতিক নারী কমিটির আহ্বায়ক সালাম মুর্শেদী সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করলেন, ‘ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় টুর্নামেন্ট কমিটি কর্তৃক সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফাইনাল খেলাটি বাতিল করা হলো। আর উভয় দলকে যৌথ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হচ্ছে।’

ফাইনালের নির্ধারিত সূচি ৩ মে পরিবর্তন করে ৪ মে নেওয়া হয়েছিল প্রথমে। পুনরায় আবার সূচি পরিবর্তন করে নিয়ে আসা হয় ৩ তারিখেই। দুই দফায় ফাইনালের তারিখ পরিবর্তন যেহেতু করা গেছে, তবে ম্যাচ কয়েক ঘণ্টা এগিয়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো না কেন? কিংবা দুর্যোগের কথা জেনেও ম্যাচ বাতিলের সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তে দেওয়া হলো কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে ধোঁয়াশা কাটাতে পারেননি বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি, ‘আমরা প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা ঘরোয়া কোনো টুর্নামেন্ট নয় যে ইচ্ছেমতো খেলার সূচি পরিবর্তন করা যাবে।’

বাফুফে শুরু থেকেই বলে এসেছে, এএফসির অনুমোদন রয়েছে এই টুর্নামেন্টে। এএফসির নিয়মানুযায়ী ম্যাচ বাতিলের সিদ্ধান্ত দেন রেফারি-ম্যাচ কমিশনার। আয়োজক কমিটির প্রধান সালাম মুর্শেদির দাবি, ‘ম্যাচ কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এর আগে অনেক বৃষ্টির মধ্যেও আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছে। গত বছর এএফসি কাপে আবাহনী লিমিটেড বনাম মোহনবাগানের মধ্যকার ম্যাচে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় সাময়িকভাবে খেলা বন্ধ হলেও পরে আবার ঠিকই ম্যাচটি শেষ হয়। এ ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী বল মাঠের পানিতে ভাসলেই খেলা বাতিল করা যেতে পারে। সে তুলনায় আজকের পরিস্থিতি ম্যাচ বাতিল হওয়ার মতো ছিল না। এরপরও কেন ম্যাচ বাতিলের সিদ্ধান্ত, সে প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন বাফুফের এই শীর্ষ কর্তা।

টুর্নামেন্টের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান কে স্পোর্টসের সিইও ফাহাদ করিম অবশ্য বলছেন, মাঠের পরিস্থিতির সঙ্গে টুর্নামেন্টের সমাপ্তির খুব একটা সম্পর্ক নেই, ‘টুর্নামেন্টের এমন সমাপ্তি অবশ্যই কাম্য না। দেশের ১৯টি জেলা ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে পড়েছে ইতিমধ্যে। সবাই দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রার্থনারত। এমন অবস্থায় রাজধানীতে ফুটবল ম্যাচ খেলাটা শোভনীয় নয়। বাফুফে আমার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমিও স্পনসরদের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারাও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।’

এই ম্যাচের জন্য যাঁরা টিকিট কেটেছিলেন তাঁরা টিকিটের অংশ দেখিয়ে বাফুফের কাছ থেকে অর্থ নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি।