সৌম্য যাদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন

ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে সৌম্য। প্রথম আলো ফাইল ছবি
ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে সৌম্য। প্রথম আলো ফাইল ছবি
>সৌম্য সরকার আছেন দারুণ ছন্দে। আয়ারল্যান্ডে রওনা দেওয়ার আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে রান পেয়েছেন। ত্রিদেশীয় সিরিজের শুরুটাও হয়েছে তাঁর ভালো

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে রান পাচ্ছিলেন না বলে কথা শুরু হয়ে গিয়েছিল সৌম্য সরকারকে নিয়ে। একজন ব্যাটসম্যান ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক ব্যর্থ—এরপরও কীভাবে তিনি নির্বাচকদের চোখে ‘অটোমেটিক চয়েস’ থাকেন, এমন অপ্রিয় প্রশ্নও শুনতে হয়েছে বাঁহাতি ওপেনারকে। প্রিমিয়ার লিগের শেষ দিকে হতাশমুখে একদিন বলছিলেন, ‘কদিন আগে নিউজিল্যান্ড সফরেও তো আমি সেঞ্চুরি করেছি। প্রিমিয়ার লিগে আমার কী যে হয়...।’

ঠিক পরের দিনই পেলেন সেঞ্চুরি। আরও একদিন পর ডাবল সেঞ্চুরি—অপরাজিত ২০৮ রানের ইনিংসটা তাঁর নামটা তুলে দিলে একেবারে রেকর্ড বইয়ে। সৌম্যর এই দুর্দান্ত দুটি ইনিংস দেখে বিসিবির এক পরিচালকের রসিকতা, ‘ইশ...সৌম্য ইনিংস দুটো যদি জমিয়ে রাখত...সে তো দুর্দান্ত ইনিংস খেলেই ২০-২৫ ম্যাচ পর পর! এখানেই দুর্দান্ত ইনিংসের কোটা পূরণ করে ফেললে আয়ারল্যান্ডে খেলবে কী?’ এ নির্মম রসিকতা সৌম্যকে স্পর্শ করেনি। তবে পরিসংখ্যান তিনি বেশ মনে রাখেন। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটা এসেছিল ২০১৫ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে। দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরিটাও পেলেন গত অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে রান পেলেন একেবারে শেষ দিকে।

যেহেতু শেষ দিকে এসে তাঁর ব্যাট হাসে, আয়ারল্যান্ড সফর কিংবা বিশ্বকাপেও যদি রান পেতে পেতে দেরি হয়ে যায়, তখন কী হবে? আয়ারল্যান্ডে রওনা দেওয়ার আগে প্রশ্নটা শুনে সৌম্য হাসেন, ‘নাহ, আশা করি ওখানে দেরি হবে না। শুরু থেকেই ভালো খেলব।’ কথা রেখেছেন। কাল ত্রিদেশীয় সিরিজের শুরু থেকেই ভালো খেলেছেন সৌম্য। ৬৮ বলে ৭৩ রান করে দলকে ভালো অবস্থানে নিতে সহায়তা করেছেন। তামিম ইকবালের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে গড়েছেন ১৪৪ রানের জুটি। ধারাবাহিক ভালো খেলছেন, এখন তাঁকে নিয়ে প্রশংসা হবে। কিন্তু ছন্দ হারিয়ে ফেললেই তাঁর দিকে আবার ছোড়া হবে সমালোচনার তীর। যারা নেতিবাচক কথা বলে, সৌম্য অবশ্য তাদের থেকে ১০০ হাত দূরে থাকার চেষ্টা করেন, ‘নেতিবাচক কথা সবাইকে আঘাত করে। নেতিবাচক কথা যদি কারও বলে ভালো লাগে। আমার তো শুনতে খারাপই লাগে। চেষ্টা করি এসব এড়িয়ে চলতে। নিজের ইতিবাচক দিকগুলো মাথায় রাখতে। নেতিবাচক কথা যারা বলে, তাদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি।’

নেতিবাচক কথা থেকে না হয় দূরে থাকলেন, কিন্তু কাল সুযোগ পেয়েও কেন সেঞ্চুরিটা ওভাবে ফেলে আসা? সম্ভাবনা জাগিয়েও তিন অঙ্ক ছুঁতে না পারার আফসোস সৌম্যরও আছে। তবে তিনি আশা দিচ্ছেন, সামনে এমন সুযোগ পেলে হাতছাড়া করবেন না, ‘অবশ্যই রান করতে সব সময়ই ভালো লাগে। যদি সেঞ্চুরি করতে পারতাম, আত্মবিশ্বাস আরও বেশি পেতাম। সুযোগ ছিল, মিস করেছি। যদি সামনে সুযোগ আবার আছে, সামনে যে কটা ম্যাচ আছে, চেষ্টা করব ভালো করতে।’

নিজের সেঞ্চুরি হাতছাড়া ছাপিয়ে সৌম্য ভীষণ খুশি দলের জয়ে। ডাবলিনের তীব্র শীত, প্রস্তুতি ম্যাচে আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের কাছে হার—কত কথাই হয়েছে দুদিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে দুর্দান্ত শুরু করে বাংলাদেশ বার্তা দিয়েছে, মূল মঞ্চে তারা ভালো খেলতে জানে। সৌম্য মনে করেন, এ জয় সামনে এগোতে তাঁদের আত্মবিশ্বাস জোগাবে, ‘অবশ্যই জয় তো সব সময় সবাইকে আত্মবিশ্বাসী করে। আমরা সবাই এখন আত্মবিশ্বাসী। আর কন্ডিশন আমরা পরিবর্তন করতে পারব না। এটা নিয়ে চিন্তা না করে সবাই সবার সেরাটা দিয়ে যতটুকু এগোনো যায়, সেটাই করতে হবে।’