মেসি-রোনালদো ছাড়া চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল!

স্কোরলাইন ও মেসির এ ছবিই সব দিচ্ছে। ফাইনালে ওঠার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বার্সা তারকার। ছবি: টুইটার
স্কোরলাইন ও মেসির এ ছবিই সব দিচ্ছে। ফাইনালে ওঠার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বার্সা তারকার। ছবি: টুইটার
>চ্যাম্পিয়নস লিগে এবার ফাইনালে দেখা যাবে না লিওনেল মেসি কিংবা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে

প্রথম লেগ শেষে বার্সেলোনার অনেক সমর্থকই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন। পুরোটাই তো দেখা হলো, ফিরতি লেগ দেখার কিছু নেই। তিন গোলের ব্যবধান ঘুচিয়ে জয় তুলে নেওয়া মামা বাড়ির আবদার নয়! হোক না ঘরের মাঠ, খেলতে হবে আক্রমণভাগের দুই তারকা ছাড়াই। ফাইনালটা তাই হাতছোঁয়া দূরত্বে রেখে ফিরতি লেগ শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। বটে! সমর্থকদের নিয়ে ফুটবলের নিষ্ঠুর রসিকতা নতুন কিছু নয়। পুরোটা দেখে ফেলেছি ভাবলে স্রেফ বোকা বানিয়ে দিতে পারে ফুটবল।

তবে ভাবনাটা দোষের কিছু নয়। বার্সার মতো দল প্রথম লেগেই ৩ গোল ব্যবধানে এগিয়ে। কাল ফিরতি লেগ ছিল লিভারপুলের ‘দুর্গ’ অ্যানফিল্ডে। ওখানে জয় পাওয়া কঠিন তবে অসাধ্য নয়। আর ঝুলিতে তো ৩ গোল ছিলই। বোনাস হিসেবে যোগ হয়, চোটের কারণে লিভারপুলের দুই তারকা ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহ ও রবার্তো ফিরমিনোর অনুপস্থিতি। এর সঙ্গে যোগ করুন, মেসি-সুয়ারেজদের আক্রমণভাগ একটা গোল করলেই সব সমীকরণ প্রায় জল-কাদা হয়ে যাবে। আর ইংলিশ ক্লাবগুলোর বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগে মেসির গোলসংখ্যা (২৬) যে কারও চেয়ে বেশি। অথচ, মেসি তো মেসি বার্সার কেউ একটা গোল পর্যন্ত করতে পারল না!

উল্টো, চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ৩ গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও ফাইনালে উঠেছে লিভারপুল। অবিশ্বাস্য, রূপকথা কিংবা জাদুকরি রাত যাই বলুন না কেন ক্লপের দল কিন্তু বুঝিয়ে দিল মরার আগে মরতে নেই। কাল অ্যানফিল্ডে ৪-৩ গোলের জয়ে লিভারপুল কিন্তু শুধু ফাইনালেই ওঠেনি, নিশ্চিত করেছে মেসি-রোনালদো ছাড়া ফাইনালও। সবশেষ এমন নজির দেখা গিয়েছে ২০১৩ ফাইনালে (বায়ার্ন-ডর্টমুন্ড)। এরপর টানা পাঁচ মৌসুম ফাইনালে দেখা গেছে মেসি অথবা রোনালদোকে। এবার তা হচ্ছে না।

মেসি কাল নিজেকে নিংড়ে দিয়েই খেলেছেন। দুই অর্ধ মিলিয়েই সুযোগ পাওয়ার সঙ্গে তৈরিও করেছেন। প্রথমার্ধে তাঁর একটি শট আলিসন বেকার তো দুর্দান্ত দক্ষতায় রুখে না দিলে আর্জেন্টাইনের খরা ঘুচতে পারত। বেশি না ছয় বছরের গোলখরা। ভ্রুকুটির কিছু নেই। আগে পুরোটা শুনুন—চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল ‘অ্যাওয়ে ম্যাচ’ থেকে ধরলে মেসি প্রতিপক্ষের মাঠে গোল পাচ্ছেন না ছয় বছর চলছে। ২০১৩ কোয়ার্টার ফাইনালে পিএসজির মাঠে গোল পেয়েছিলেন বার্সা তারকা। এরপর ছয় মৌসুম চলছে শেষ আট থেকে প্রতিপক্ষের মাঠে মেসির পায়ে গোলের দেখা নেই।

চোটের কারণে কাল মোহাম্মদ সালাহ খেলতে পারেননি। দলের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন দেখেছেন গ্যালারিতে বসে। উত্তেজনায় কখনো নেমে এসেছেন সতীর্থদের কাছেও। সালাহর টি-শার্টে লেখা ছিল ‘নেভার গিভ আপ’—কখনো হাল ছেড়ো না। ম্যাচ শেষে সতীর্থদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে দাঁড়ানো সালাহর ছবি টুইটারে পোস্ট করে লিভারপুলের তরফ থেকে লেখা হয়, ‘আমরা কখনো হাল ছা্ড়িনা, মো!’ আর ম্যাচটি যাঁরা দেখেছেন তাঁরা জানেন, শেষ বাঁশি বাজার পর অ্যানফিল্ডে কী আবেগমথিত দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল।

অনেকটা হলিউডের সাই-ফাই সিনেমার মতো। অসম্ভব কোনো মিশন শেষ করে ফেরার পর সবার ভালোবাসা ও করতালির বৃষ্টিতে যেভাবে সিক্ত হয় আরকি। গোলপোস্টের সামনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ালেন খেলোয়াড় থেকে স্টাফরা। আর গ্যালারির সমস্ত দর্শক দাঁড়িয়ে এক সুরে গাইছে—‘ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন’ গানটি। তাঁদের সঙ্গে গলা মেলাচ্ছেন খেলোয়াড়েরাও। কী অপূর্ব দৃশ্য! বার্সা ঠিক তখন এর বিপরীতে দাঁড়িয়ে। মেসি-সুয়ারেজদের চোখেমুখে বিধ্বস্ত ভাব। অবশ্য এ স্বাদ তাঁদের জন্য নতুন নয়।

বেশি দিন আগের কথা নয়, গত মৌসুমের কোয়ার্টার ফাইনাল স্মরণ করুন। মঞ্চ, স্কোরলাইন, গোলদাতা ও ক্লাবের নামে যা পার্থক্য, বাকি সব একই। এএস রোমার বিপক্ষে ঘরের মাঠে ৪-১ গোলে জিতল বার্সা। অর্থাৎ ৩ গোল ব্যবধানে এগিয়ে ছিল আর্নেস্তো ভালভার্দের দল। কিন্তু রোমার মাঠে গিয়ে হজম করল ৩ গোল! ‘অ্যাওয়ে গোল’ নিয়মের খাঁড়ায় পরে বার্সাকে বিদায় নিতে হয় শেষ আট থেকে। এবার শেষ চার থেকে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে বার্সাই প্রথম দল যারা নকআউট পর্বে ৩ গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও হারল, একবার নয় দু-দুবার!