বৃষ্টি আর ফিজ ভাবাচ্ছে বাংলাদেশকে

>
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বৃষ্টি নিয়ে ভাবনায় বাংলাদেশ। ফাইল ছবি
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বৃষ্টি নিয়ে ভাবনায় বাংলাদেশ। ফাইল ছবি

ডাবলিনে আজ স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। তবে এ ম্যাচে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বৃষ্টি। 

আয়ারল্যান্ডের ক্যালেন্ডার কি ‘২৫শে বৈশাখ’ চেনে? কাল দিনভর ডাবলিনের ঝিরিঝিরি বৃষ্টি গৃহকাতর যেকোনো বাঙালিকে গীতবিতান-এর শুকনো পাতায় বরষার গান ছড়িয়ে দেওয়া কবিকে মনে করাবে। ক্রিকেট পরিসংখ্যান বোঝে, কাব্য নয়। বৃষ্টি নিয়ে ক্রিকেটে কাব্য নেই; ডার্কওয়াথ-লুইস সাহেবের গোলমেলে জটিল গাণিতিক হিসাব আছে। আছে বাইলজ। বাংলাদেশের জন্য আজকের ম্যাচে যেটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

ত্রিদেশীয় সিরিজের পয়েন্ট টেবিলের দিকে তাকালে যেকোনো ষড়যন্ত্রীৎসু বাঙালি হইচই শুরু করে দিতে পারে। ক্যারিবীয়দের ৫ পয়েন্ট, বাংলাদেশের ৪! হেরে যাওয়ার জন্যও এক পয়েন্ট নাকি? তা নয়। সেটি বোনাস পয়েন্ট। প্রথম ম্যাচে বোনাস পয়েন্ট পাওয়ার শর্তগুলো পূরণ করায় জয়ের জন্য ৪ পয়েন্টের পাশাপাশি অতিরিক্ত বোনাস পয়েন্টও পেয়েছে তারা।

বাংলাদেশেকে আজকের ম্যাচটি তাই জটিল হিসাবের দিকে ঠেলে দিতে পারে। ডাবলিনের বিরামহীন বৃষ্টি আজও চলবে। ঝরঝর মুখর বৃষ্টি অবশ্য নয়; ইলশেগুঁড়ি। কিন্তু এই বৃষ্টিতে ফুটবল হতে পারে, ক্রিকেট নয়। আয়ারল্যান্ডের ‘সামার’ই নাকি এ রকম।

বাংলাদেশের জন্য ম্যাচ ভেসে যাওয়া মানে সম্ভাব্য ৩ পয়েন্ট হারানো। টুর্নামেন্টের বাইলজ অনুযায়ী, ম্যাচ পরিত্যক্ত হলে ২ পয়েন্ট, বাংলাদেশের চেষ্টা থাকবে বোনাস পয়েন্টসহই জেতার। সামনের দিনগুলোতেও আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস, তাতে এক-দুই পয়েন্টও মহামূল্য হয়ে যেতে পারে ফাইনালে ওঠার পথে। দুই বছর আগে যে ত্রিদেশীয় সিরিজ বাংলাদেশ খেলে গিয়েছিল এখানে, তাতে ফাইনাল ছিল না। এবার আছে।

ওই সিরিজে মালাহাইডের প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল। এবারের সিরিজ হচ্ছে দুটি মাঠে। এবার বাংলাদেশ এখনো মালাহাইডের স্বাদ পায়নি। গতকাল অনুশীলন ছিল, ম্যাচের আগের দিন সব দলই ভেন্যুতে গা গরম করতে চায়। বৃষ্টিতে সব ভেস্তে গেছে। বাংলাদেশ দল হোটেলেই ছিল। সকালে হালকা জিম হয়েছে। কেউ এর মধ্যে আশপাশে ঘুরতে বেরিয়েছেন।

বাংলাদেশের টিম হোটেলটি বেশ জাঁকালো। বাংলাদেশ দলের নিকটতম প্রতিবেশী আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আর প্রেসিডেন্ট। পাশেই ফিনিক্স পার্ক, যেটি পুরো ইউরোপেরই বৃহত্তম উদ্যান। কিন্তু ডাবলিনের সিটি সেন্টার বেশ দূরে। আর ইউরোপের কোনো শহরের স্বাদটা ঠিকভাবে নিতে চাইলে শহরকেন্দ্রের বিকল্প কী?

সাকিব আল হাসানকে একটু বিরক্তই মনে হলো। সোনার খাঁচাতেই বা কে বন্দী হয়ে থাকতে চায়!

সাকিব সেই মতবাদে বিশ্বাসী, যা তোমার হাতে নেই, তা নিয়ে মাথা ঘামানোই বা কেন। ফলে কন্ডিশন, আবহাওয়া, বৃষ্টি, রিস্ট স্পিনারের অভাব-এসব নিয়ে কাঁদুনি গাইতে চাইলেন না। কালকের ম্যাচেও বাংলাদেশের মূল লক্ষ্যটা পরিষ্কার বলে দিলেন, ‘যেকোনো সিরিজ-টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচটা গুরুত্বপূর্ণ থাকে বাকি সময়ের ছন্দ ঠিক করে দেয় বলে। সেদিক দিয়ে অবশ্যই আমাদের জন্য এটা ভালো যে সহজে জিততে পেরেছি। পরের ম্যাচে আত্মবিশ্বাস দেবে। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া আসলে মানসিক ব্যাপার। দুই-তিন দিন অবশ্যই কষ্ট হবে।’

প্রথম ম্যাচে শেষ পর্যন্ত বোলাররা ঘুরে দাঁড়ালেও বোলিং নিয়ে দুশ্চিন্তা পুরোপুরি কি কাটছে? বিশেষ করে গত দুই ওয়ানডেতে ১৭৭ রান দেওয়া মোস্তাফিজকে নিয়ে চিন্তা আরও বাড়ছে। সাকিব অবশ্য মোস্তাফিজকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন, ‘শুধু তো ওর রান দেওয়াটা দেখলে হবে না, ও কোথায় বোলিং করছে, সেটাও দেখতে হবে। ওই রকম সময়ে (ডেথে) বোলিং করলে যে কেউ ৩০-৪০ রান দিতে পারে।’ প্রশ্নটা হলো, এই রকম পরিস্থিতিতে বল করে রান দিতেন না বলেই তো এত দ্রুত বিশ্বজোড়া পরিচিতি পেয়েছিলেন ফিজ।

মোস্তাফিজ অবশ্য আজও সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলাদেশ উইনিং কম্বিনেশন ভাঙতে চাইবে না। মোস্তাফিজকে আরও বেশি সময় দিয়ে হারানো আত্মবিশ্বাস যত দ্রুত সম্ভব ফেরানো জরুরি। একই একাদশ খেলালেও ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যাটিং অর্ডারে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। তবে এর আগে ম্যাচটা মাঠে গড়াতে তো হবে।

ম্যাচ মাঠে গড়াবে কি না, এ নিয়ে অবশ্য স্থানীয় বাংলাদেশিদের মধ্যেই দুশ্চিন্তা বেশি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ-বাংলাদেশ নিয়ে তেমন একটা আগ্রহ তাদের ছিল না। এই ম্যাচ নিয়ে আছে। দুটোই যে তাদের দেশ। তবে কোন দেশের জন্য তারা বেশি গলা চড়াবে, সে আর বলে না দিলেও চলছে।