রোনালদোর নেই, নেই মেসি-নেইমারেরও, তাঁর আছে

আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো। ফাইল ছবি
আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো। ফাইল ছবি

ইউরোপিয়ান ফুটবলকে পায়ের জাদুতে মুগ্ধ করেছেন, এমন ব্রাজিলিয়ানের সংখ্যা কম নয়। রোমারিও, রিভালদো, রোনালদো নাজারিও, রোনালদিনহোরা দেড় যুগ শাসন করেছেন। নেইমার ও কুতিনহোদের প্রজন্মও যে কম যায় না সেটা দলবদলের বাজারের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। হালের নেরেস কিংবা ভিনিসিয়ুসদের নিয়েও মাতামাতি কম নয়। এদের মাঝে আড়ালেই পড়ে থাকবেন লুকাস মউরা। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাস আজীবন তাঁকেই মনে রাখবে। প্রথম ব্রাজিলিয়ান হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে হ্যাটট্রিক করার অনন্য কৃতিত্ব এখন টটেনহাম হটস্পারের মউরার। 

অমিত সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন ইউরোপিয়ান ফুটবলে। কিন্তু প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে চার মৌসুম কাটিয়েও ফুটবলের বড় তারকাদের মধ্যে আসতে পারেননি। স্বদেশি নেইমারকে দলে টেনে তাঁকে বিক্রি করে দিয়েছে পিএসজি। টটেনহামে থিতু হতে পারছিলেন না ঠিকভাবে। হ্যারি কেইন ও হিউয়েন মিং সনদের আড়ালেই পড়ে ছিলেন। কিন্তু কাল আয়াক্সের মাঠে দ্বিতীয়ার্ধে দলের সবগুলো গোল করে সেই মউরাই এখন নায়ক। গড়ে ফেলেছেন ইতিহাস।

সেমিফাইনালে হ্যাটট্রিক করার অনন্য অর্জন করেছেন মউরা। ছবি: রয়টার্স
সেমিফাইনালে হ্যাটট্রিক করার অনন্য অর্জন করেছেন মউরা। ছবি: রয়টার্স

মউরার অর্জনটা কত বড় সেটা বোঝা যায় দেশের ব্র্যাকেটটা তুলে দিলেই। প্রথম ব্রাজিলিয়ান হিসেবে সেমিফাইনালে হ্যাটট্রিক করেছেন মউরা, দেশ পাত্র সব ভুলে গেলেও মাত্র পঞ্চম ব্যক্তি মউরা। ব্রাজিলিয়ান সব তারকাদের মতোই চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে হ্যাটট্রিকের স্বাদ পাওয়া হয়নি লিওনেল মেসি, থিয়েরি অরি, দ্রিদিয়ের দ্রগবাদের মতো গোল স্কোরারদেরও।

চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে প্রথম হ্যাটট্রিকের দেখা মিলেছে ১৯৯৮ সালে। ১ এপ্রিল মোনাকোর বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল জুভেন্টাস। ৩৫ মিনিটে প্রথম গোল করা আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো ৬২ মিনিটের মধ্যে হ্যাটট্রিক করে ফেললেন। পরে জিনেদিন জিদানের গোলে ৪-১ ব্যবধানে জয় পেয়েছিল জুভেন্টাস।

ইভিকা ওলিচ। ফাইল ছবি
ইভিকা ওলিচ। ফাইল ছবি

ক্রোয়েশিয়ান ফরোয়ার্ড ইভিকা ওলিচের নাম অনেকেই হয়তো ভুলে গেছেন। খুব বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার ছিল সে দাবি হয়তো করা যাবে না। কিন্তু ২০১০ সালের ২৭ এপ্রিলে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন ওলিচ। চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে লিঁওর মাঠে একাই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছেন ওলিচ। দলের তিনটি গোলই ছিল ওলিচের।

অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের পর রোনালদো। ফাইল ছবি
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের পর রোনালদো। ফাইল ছবি

এ ম্যাচের আগেও রবার্ট লেবানডফস্কির নাম জানতেন মানুষ। তবে তাঁকে পৃথিবীর আনাচকানাচে পাঠিয়ে দিয়েছিল একটি হ্যাটট্রিক। ২০১৩ সালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের মাঠে সেমিফাইনাল খেলতে গিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। প্রথমার্ধে লেবানডফস্কি ও রোনালদোর গোলে সমতা ছিল ম্যাচে। দ্বিতীয়ার্ধে রিয়ালকে তছনছ করে দিলেন লেবানডফস্কি। দ্বিতীয়ার্ধেই করলেন তিন গোল! সেমিফাইনালের এক লেগে এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোল লেবানডফস্কিরই (৪ গোল)।

রিয়ালকে তছনছ করে দিয়েছিলেন লেবানডফস্কি। ফাইল ছবি
রিয়ালকে তছনছ করে দিয়েছিলেন লেবানডফস্কি। ফাইল ছবি

লেবানডফস্কির গোল উৎসব মাঠের অন্যপ্রান্তে দেখতে হয়েছিল রোনালদোকে। চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের পরবর্তী হ্যাটট্রিকম্যান হয়েই সে দুঃখ ভুলেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সেটাও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষেই। ২০১৭ সালে নিজেদের মাঠে রোনালদোর তিন গোলেই অ্যাটলেটিকো হারিয়েছিল রিয়াল।

কাল আয়াক্সের বিপক্ষে তিন গোল করে মউরা এই ক্ষুদ্র তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। তবে একটি তথ্য চিন্তায় ফেলবে তাঁকে। চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে হ্যাটট্রিক করে সে মৌসুমে শিরোপার স্বাদ শুধু রোনালদোই পেয়েছেন!