প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সেরা মৌসুম এটিই?

সিটি-লিভারপুল নাটকের শেষ অঙ্ক আজ। ছবি : টুইটার
সিটি-লিভারপুল নাটকের শেষ অঙ্ক আজ। ছবি : টুইটার
>

ম্যানচেস্টার সিটি না লিভারপুল, এ মৌসুমে কার ভাগ্যে জুটবে প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার তকমা — জানা যাবে আজকে।

শুরুতেই এমন একজনের নাম নিতে হচ্ছে, এবারের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপাদৌড়ের সঙ্গে যার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই।

তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক ম্যানেজার স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। যাকে একবাক্যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সর্বশ্রেষ্ঠ ম্যানেজার বললেও ভুল কিছু বলা হবে না। ১৯৯২ সালে ইংল্যান্ডের প্রথম বিভাগের নাম ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ হওয়ার পর থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ১৩টি লিগ শিরোপা জিতিয়েছেন এই ভদ্রলোক। এই ১৩ বারের মধ্যে ফার্গুসনকে লিগ জেতার জন্য সবচেয়ে ‘কষ্ট’ করতে হয়েছিল ১৯৯৯-০০ মৌসুমে, ২০ দলের লিগে সেবার ৯১ পয়েন্ট পেয়ে লিগ জিতেছিল তারা। এ ছাড়া ৭৯-৮০ পয়েন্ট নিয়েও লিগ জেতার নজির আছে ইউনাইটেডের।

এসব উদাহরণ দেখে সবচেয়ে কষ্ট লাগবে হয়তো লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের! ৭৯-৮০ পয়েন্ট তো বটেই, ৯৪ পয়েন্ট নিয়েও যে লিভারপুল লিগ জিততে পারছে না! কোনো মৌসুমেই শিরোপা জেতার জন্য এত কষ্ট করতে হয়নি স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনকে।

এর পেছনের কারণ আরেক ভদ্রলোক। পেপ গার্দিওলা। বায়ার্নে মিউনিখ আর বার্সেলোনায় থাকার সময় যার সহকারী ম্যানুয়েল এস্তিয়ার্তে বলেছিলেন, লোকটাকে ফুটবলের বাইরে ৩২ মিনিটের বেশি রাখা যায় না। এটার একটা সুন্দর নামও দিয়েছিলেন এস্তিয়ার্তে — ‘দ্য রুল অব ৩২ মিনিটস (৩২ মিনিটের বিধান)’। আপনি লোকটাকে ফুটবলের বাইরে টেনে এনে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে যান, বা কোনো একটা দাওয়াতে নিয়ে যান, ফুটবলকে ভুলে সর্বোচ্চ ৩২ মিনিট থাকতে পারবেন লোকটা। এর পরে তিনি ফিরে যাবেন নিজের ফুটবল-জগতে। নিজের অবচেতন মনে ফুটবল নিয়ে ভাবা শুরু করবেন টাক মাথার সেই লোকটা। মনের গহিনে পর্যালোচনা করা শুরু করবেন প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা, নিজের খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ উপযোগিতা পাওয়ার উপায় নিয়ে।

ম্যানচেস্টার সিটিতে নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তোলার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর এই গার্দিওলা। গতবার ১০০ পয়েন্ট নিয়ে লিগ জেতার পরেও যার তৃষ্ণা একটুও কমেনি। যার জিগীষা হ্রাস পায়নি বিন্দুমাত্র। এই গার্দিওলাই ৯৫ পয়েন্ট নিয়ে ৯৪ পয়েন্ট পাওয়া ক্লপের ঘুম হারাম করে দিয়েছেন। ফার্গুসনের সবসেরা মৌসুমের চেয়ে ৩ পয়েন্ট বেশি পেয়েও যে কারণে স্বস্তিতে নেই ক্লপ।

যথাক্রমে ৯৫ ও ৯৪ পয়েন্ট পেতে ম্যানচেস্টার সিটি ও লিভারপুলের খেলতে হয়েছে ৩৭ ম্যাচ। ৩৮ ম্যাচের লিগে সাধারণত অন্যান্য মৌসুমে ৩৭ ম্যাচ শেষ হয়ে গেলে মোটামুটি বোঝা যায় লিগ পেতে যাচ্ছে কোন দল! এবার এখনো সেটি নির্ধারিত হয়নি। আজ রাত আটটায় নিজ নিজ ম্যাচ খেলতে মাঠে নামছে দুই দল। ম্যানচেস্টার সিটি যাচ্ছে ব্রাইটনের মাঠে, নিজেদের মাঠে লিভারপুল খেলবে উলভারহ্যাম্পটনের সঙ্গে। নিজেদের ম্যাচটা ঠিকঠাক জিতলে শিরোপা সিটির ঘরে যাচ্ছে, এটা নিশ্চিত। কিন্তু, ম্যাচ না জিতে সিটি যদি হারে বা ড্র করে, আর ওদিকে লিভারপুল যদি নিজেদের ম্যাচটা জিতে যায়, তাহলে ২৯ বছরের লিগ-খরা এবার ঘোচাবে লিভারপুল। এমন নখ কামড়ানো উত্তেজনার মৌসুমকে প্রিমিয়ার লিগের সর্বশ্রেষ্ঠ মৌসুম বলবেন না তো কোনটাকে বলবেন?

যদিও এমন নখ কামড়ানো উত্তেজনায় থেকে লিগ জেতার অভিজ্ঞতা আছে সিটির। ২০১১-১২ মৌসুমের শেষ ম্যাচের আগে সমান পয়েন্ট ছিল সিটি ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। ৩৭ ম্যাচ শেষে ৮৬ পয়েন্ট ছিল দুই দলেরই। শেষ দিনে নিজ নিজ ঘরের মাঠে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নেমেছিল স্যান্ডারল্যান্ডের বিপক্ষে, ম্যানচেস্টার সিটি নেমেছিল কুইন্স পার্ক রেঞ্জারসের বিপক্ষে। দুই দলের পয়েন্ট সমান থাকলেও গোল ব্যবধানে এগিয়ে ছিল সিটি। ফলে নিজ নিজ ম্যাচ জিতলেও সিটির ঘরে শিরোপা যাওয়ার কথা। ওয়েইন রুনির গোলে স্যান্ডারল্যান্ডকে হারিয়ে নিজেদের কাজটা ঠিক ঠিক করে রাখে ইউনাইটেড। ইউনাইটেডের ম্যাচে কোনো নাটক না হলেও, শিরোপাদৌড়ের সকল নাটক সেদিন জমেছিল সিটির মাঠে। ম্যাচের ৮৯ মিনিট পর্যন্ত ২-১ গোলে পিছিয়ে থাকা সিটি কিউপিআরের কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে যাচ্ছে, না হারলেও অন্তত ড্র করছে, এটা ভেবে ফার্গুসন-রুনি-গিগসরা হালকা পাতলা শিরোপাজয়ের উৎসবও শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ে সিটির দুই স্ট্রাইকার এডিন জেকো ও সার্জিও আগুয়েরো দুই গোল করে সিটিকে জিতিয়ে দেন। শিরোপা যায় সিটির কাছে!

এমন কোনো উত্তেজনাময় মুহূর্ত কি আজকে অপেক্ষা করছে ফুটবল-ভক্তদের জন্য? আসুন, দেখা যাক!