যে জায়গায় সবার চেয়ে পিছিয়ে তামিম-সাকিবরা

গত চার বছরে সাত সেঞ্চুরি পেয়েছেন তামিম ইকবাল। ফাইল ছবি
গত চার বছরে সাত সেঞ্চুরি পেয়েছেন তামিম ইকবাল। ফাইল ছবি
>

এবারের বিশ্বকাপে রান হবে প্রচুর। দলগুলোকে জিততে হবে রানপাহাড় ডিঙিয়েই। সে কারণেই ব্যাটসম্যানদের জন্য অবশ্যকরণীয় হয়ে উঠবে যতটা সম্ভব কম বল খেলে বড় ইনিংস গড়া। এই জায়গাতেই প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা।

দুয়ারে কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ। এবার ইংলিশ কন্ডিশনে মেঘলা আবহাওয়া আর সুইংয়ের বিপক্ষে লড়তে হবে ব্যাটসম্যানদের। ইংল্যান্ডে কোনো টুর্নামেন্ট হলে এটাই প্রচলিত ধারণা। তবে সবার ধারণাই এমন নয়। শচীন টেন্ডুলকার যেমন মনে করছেন, এবার ‘বিশ্বকাপ হবে ব্যাটসম্যানদের’।

টেন্ডুলকারের ভাবনার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে বিশ্বকাপের আগে ইংলিশ কন্ডিশনে বেশ কয়েকটি ম্যাচের দৃশ্যপট। গতকাল অনুষ্ঠিত দুটি ম্যাচের কথাই ধরুন। আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনের সঙ্গে ইংলিশ কন্ডিশনের তেমন পার্থক্য নেই। সেই ডাবলিনে কটরেল, রোচ, হোল্ডারদের বেধড়ক পিটিয়ে সোয়া তিন শর বেশি (৩২৭) রান তুলেছে আয়ারল্যান্ড। এই রান ক্যারিবীয় ব্যাটিং অর্ডার টপকে গেছে ১৩ বল হাতে রেখে। ম্যাচটি দেখতে দেখতে অনেকেই হয়তো ভেবেছেন, ডাবলিনে এই অবস্থা হলে ইংল্যান্ডে কী ঘটবে! সাউদাম্পটনে ইংল্যান্ড-পাকিস্তান ম্যাচে মোট রান হলো ৭৩৪। ইংল্যান্ডের ৩ উইকেটে করা ৩৭৩ রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান থামল ৩৬১-তে। বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো কেমন হবে, তার দুটি নমুনাই যেন দেখা গেল ডাবলিন আর সাউদাম্পটনে।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এবার ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে সাফল্য পাওয়ার টোটকা তাহলে ভালো ব্যাটিং? খানিকটা সংশোধনী দিয়ে দেওয়া যাক। শুধু ভালো ব্যাটিং হলে চলবে না, স্ট্রাইকরেটেও চোখ রাখতে হবে ব্যাটসম্যানদের। এবারের বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করলেই হবে না, সেটি ব্যাটসম্যানদের করতে হবে স্ট্রাইকরেট ঠিক রেখেই।

কালকের ম্যাচের উদাহরণ দিয়েই কারণটা ব্যাখ্যা করা যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আইরিশদের ৩২৭ রান তাড়া করেছে সুনীল আমব্রিসের ১২৬ বলে ১৪৮ রানের ইনিংসে ভর করে। তিন শর বেশি রান তাড়া করতে নেমে কেউ এক শর ওপরে স্ট্রাইকরেট বজায় রেখে সেঞ্চুরি করলে কাজটা সহজ হয়ে যায়। ইংল্যান্ড-পাকিস্তান ম্যাচেও কিন্তু ঝোড়ো সেঞ্চুরির প্রভাব ছিল। ফখর জামানের ১০৬ বলে ১৩৮ রানের ইনিংসে ৩৭৩ রানের পাহাড় ডিঙানোর পথেই ছিল পাকিস্তান। কিন্তু এক আসিফ আলী ছাড়া পরের ব্যাটসম্যানরা সেভাবে সুবিধে করতে না পারায় হারতে হয় পাকিস্তানকে। মূল ব্যাপার দাঁড়াচ্ছে এমন, ইংল্যান্ডে বড় সংগ্রহ গড়তে কিংবা তিন শর বেশি রান তাড়া করতে নামলে একটা ঝোড়ো সেঞ্চুরি খুবই দরকার।

ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল ইংল্যান্ডই তার বড় প্রমাণ। ২০১৫ সাল থেকে ওয়ানডে খেলার ধাঁচই পাল্টে ফেলেছে ইংলিশরা। গত বিশ্বকাপের আগে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে মোট ৩৪ ইনিংসে তিন শর বেশি রান তুলেছে দলটি। কিন্তু ২০১৫ বিশ্বকাপের পর এই চার বছরে ইংল্যান্ড সেই একই কাজ করেছে ৩৫বার! আর ইংলিশদের এই তিন শর বেশি রান তোলাকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলার পেছনে রয়েছে দারুণ এক কৌশল—যত কম বল খেলে রান করা যায়। সেঞ্চুরি করতে হবে সেভাবেই পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সাল থেকে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করতে গড়ে সবচেয়ে কম বল খেলেছে ইংলিশরাই। এ সময় সর্বোচ্চ ৪৯ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পথে প্রতি সেঞ্চুরিতে গড়ে ৯০টি করে বল খেলেছে দলটি।

বাংলাদেশ পিছিয়ে ঠিক এই জায়গাতেই। এমনকি আফগানিস্তান ও পাকিস্তানও এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। এই চার বছরে ৮ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পথে প্রতি সেঞ্চুরিতে গড়ে ১০৫টি বল খেলেছে আফগানরা। পাকিস্তান ৩১ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পথে আফগানদের চেয়ে গড়ে ১টি বল বেশি খেলেছে। বাংলাদেশের সেঞ্চুরিসংখ্যা আফগানদের চেয়ে বেশি; ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২২টি সেঞ্চুরি পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রতি সেঞ্চুরিতে গড়ে ১০৯টি করে বল খেলেছেন ব্যাটসম্যানেরা। বোঝাই যাচ্ছে, ইংল্যান্ডে বড় সংগ্রহ গড়তে কিংবা রানপাহাড় ডিঙোতে উন্নতিটা ঠিক কোথায় করতে হবে।

এই চার বছরে বাংলাদেশের মোট ৮ ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরির মুখ দেখেছেন। তামিম ইকবাল সবচেয়ে ধারাবাহিক তিন অঙ্কের ইনিংস খেলায়। ৭ সেঞ্চুরি পেয়েছেন ৯১.১৪ স্ট্রাইকরেটে। এ সময় ন্যূনতম তিনটি সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মাহমুদউল্লাহর স্ট্রাইকরেট সবচেয়ে কম (৯০.৪৮)। তবে মাহমুদউল্লাহ যে সময় ব্যাটিংয়ে নামেন কিংবা বেশির ভাগ সময় দেখা গেছে চাপের মুখে লড়ছেন। তাই স্ট্রাইকরেট কমাই স্বাভাবিক।

তামিম ওপেনার হওয়ায় তাঁর স্ট্রাইকরেট ভাবাতে পারে। তবে দলের ইনিংস টানার দায়িত্ব যেহেতু তাঁর ওপর, তাই এমন স্ট্রাইকরেট দেখে ভ্রুকুটির কিছু নেই। এই ৮ ব্যাটসম্যানের মধ্যে সৌম্য সরকারের স্ট্রাইকরেট (২ সেঞ্চুরি, ১২০.৭৯ স্ট্রাইকরেট) সবচেয়ে বেশি। ১০৩ স্ট্রাইকরেট নিয়ে তারপরই লিটন দাস। স্বস্তির বিষয়, বিশ্বকাপে যে দুই তরুণকে ‘লাইসেন্স টু কিল’-এর ছাড়পত্র দেওয়ার গুঞ্জন চলছে তাঁরা স্ট্রাইকরেটে এক শর ওপরে। ঠিকই ধরেছেন সৌম্য ও লিটন। তবে স্ট্রাইকরেট বাড়ানোর দায়িত্ব শুধু এ দুজনের ওপরে নয়। ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে তা বর্তায় উইকেটে থাকা যেকোনো ব্যাটসম্যানের কাঁধে।

বিশ্বকাপে কেউ তা ভুলে না গেলেই ভালো।