বড়দেরটার অপেক্ষায় ছোটদের মিরাজ

‘বড়’দের বিশ্বকাপ খেলার অপেক্ষায় মিরাজ। ছবি: লেখক।
‘বড়’দের বিশ্বকাপ খেলার অপেক্ষায় মিরাজ। ছবি: লেখক।
>ক্যারিয়ারের শুরুতেই দুটি যুব বিশ্বকাপ খেলেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই প্রথমবারের মতো খেলতে যাচ্ছেন আসল বিশ্বকাপ। এই স্পিন অলরাউন্ডার জানিয়েছেন বিশ্বকাপে দলকে সেবা দেওয়াই লক্ষ্য তাঁর।

দুটি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। আবার একটি বিশ্বকাপও খেলার অভিজ্ঞতা নেই। দুই আর শূন্যের এই গোলকধাঁধায় পড়ার দরকার নেই। রহস্য আর কিছুই না। মেহেদী মিরাজ যুব বিশ্বকাপ খেলেছেন দুটি। তবে আসল যে বিশ্বকাপ, সেটি এখনো খেলা হয়নি। এখন বড়দের সেই বিশ্বকাপের অপেক্ষাতেই আছেন এই স্পিন অলরাউন্ডার।

এক দিক দিয়ে বিশ্বকাপ শব্দটাই তাঁর জন্য আক্ষেপের। ২০১৬ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন। ৬ ম্যাচে ২৪২ রান আর ১২ উইকেট নিয়ে ব্যাটে-বলে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সামনে থেকে। কিন্তু নিজেদের মাঠে আয়োজিত সেই বিশ্বকাপের আসরে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন থেমে গিয়েছিল সেমিফাইনালে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে। পরে বাংলাদেশ প্লে অফ খেলে টুর্নামেন্টের তৃতীয় সেরা দল হয়। কিন্তু সেই আসরের কথা তুললে এখনো মিরাজের বুকের কোথাও চিনচিন করে ওঠে।

ওই যুব বিশ্বকাপের দারুণ পারফরম্যান্স অবশ্য দ্রুতই জাতীয় দলের দরজা খুলে দেয় তাঁর জন্য। ওই বছরেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক। অভিষেকেই ৫ উইকেট। অভিষেক সিরিজেই সিরিজ সেরা খেলোয়াড়। স্বপ্নের মতো অভিষেক যাকে বলে! মিরাজের এখনো মনে হয়, এই তো সেদিনের কথা। অথচ প্রায় তিন বছর হয়ে গেল!

এর মধ্যে জাতীয় দলের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছেন। যদিও তাঁর অফস্পিন এই কন্ডিশনে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয়টা বাড়ছিল। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচের পর সিরিজে নিজেদের প্রথম ম্যাচেও দারুণ বল করেছেন মিরাজ। ক্যারিবীয়রা তাঁর স্পিনে রীতিমতো হাঁসফাঁস করেছে। ১০ ওভারে উইকেট একটি নিলেও দিয়েছেন মাত্র ৩৮ রান। ডট বল করেছেন ২৮টি। বাউন্ডারি হজম করেছিলেন মোটে দুটি। সাকিবের সঙ্গে বেশ জমে উঠেছিল তাঁর বোলিং।

এই কঠিন কন্ডিশনে ভালো বল করতে পারলে বিশ্বকাপে তরতাজা আত্মবিশ্বাস নিয়ে যেতে পারবেন মিরাজ। বড়দের আসল বিশ্বকাপের জন্য ছোটবেলা থেকেই যে অপেক্ষা বাড়ছিল তাঁর। মিরাজ বলছিলেন, ‘আসল বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন সবারই থাকে। আমারও ছিল। আশা করি সেই স্বপ্ন পূরণ হবে। এখানে আমার নিজের ব্যক্তিগত কোনো লক্ষ্য নেই। আমার চাওয়া হলো দলকে যেন ঠিকমতো সার্ভিসটা দিতে পারি। আশা করছি ভালো কিছুই করতে পারব।’

কিন্তু বোলিং সত্তার কাছে তাঁর ব্যাটসম্যান পরিচয়টা ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাচ্ছে কি না, এমন একটা আলোচনাও তো আছে। ওয়ানডেতে ১৬ ইনিংসে ২৯১ রান আর একটা মাত্র ফিফটি—তিনি তো এর চেয়ে অনেক ভালো ব্যাটসম্যান। জাতীয় দলে আট আর নয়ে ব্যাট করে এর চেয়ে ভালো কিছু করা তাঁর জন্য যে কঠিন! মিরাজ অবশ্য রান সংখ্যা দিয়ে নিজের ব্যাটসম্যান ভূমিকাটা বিচার করতে চান না, ‘ব্যাটিং নিয়ে যেটা চিন্তা করি, বাংলাদেশ দলে হয়তো সুযোগ সেভাবে হয় না, কিন্তু শেষদিকে আমার ওই ভূমিকাও কিন্তু অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। শেষদিকে ৪০-৫০ রানের ইনিংস খেলতে পারলে দলের জন্য অনেক ভালো হবে। দলও তা আশা করে। ইনিংসটা আরও একটু বড় করার আশা করছি। ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের আগে এ নিয়ে আরও কাজ করতে চাই।’