এবারের আইপিএলে আলোচিত পাঁচ

>আইপিএল মানেই যত অদ্ভুত ঘটনার সমারোহ। মাত্র শেষ হওয়া আইপিএলের এবারের মৌসুমে আলাচিত ঘটনা কম নয়। তবে হইচই ফেলে দেওয়া ঘটনাগুলো কিন্তু সহজেই আলাদা করা যায়
অশ্বিনের মানকাড আউট। ছবি: টুইটার
অশ্বিনের মানকাড আউট। ছবি: টুইটার

অশ্বিনের মানকাডিং

আইপিএলের তৃতীয় দিনের ঘটনা সেটি। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব প্রথমে ব্যাটিং করে রাজস্থান রয়্যালসের দিকে ছুঁড়ে দিল ১৮৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা। ৭৭ রান দূরে থাকতে পাঞ্জাবের রবিচন্দ্রন অশ্বিন এমন এক ঘটনার জন্ম দিলেন, যেটি আইপিএলের চিরকালীন ইতিহাসে ঠাঁই করে নিল। জস বাটলারের ব্যাটিংয়ে জয়ই দেখছিল রাজস্থান। কিন্তু তাঁকে আউট করতে অশ্বিন যে এমন ছলছাতুরির আশ্রয় নেবেন, সেটা কে ভেবেছিল!
১৩তম ওভারের শেষ বলটি করার সময় অশ্বিন দেখলেন নন–স্ট্রাইকিং প্রান্তে দাঁড়ানো বাটলার বোলিংয়ের সময় ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন। এই সুযোগ আর ছাড়ে কে? অশ্বিনও বিন্দুমাত্র সময় নিলেন না। বল না করে বরং নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তের উইকেট ফেলে দিলেন অশ্বিন। ক্রিকেটীয় চেতনার বিন্দুমাত্র ধার না ধরে বাটলারকে মানকাড আউট করেন অশ্বিন। ৪৩ বলে ৬৯ করে ফিরতে হলো বাটলারকে। ব্যাপারটি নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক হয়েছে। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে অশ্বিনকে।

মাঠে চলে এসেছেন ধোনি। ছবি: এএফপি
মাঠে চলে এসেছেন ধোনি। ছবি: এএফপি

‘কুল’ ধোনি হঠাৎই ‘হট’
মহেন্দ্র সিং ধোনি মানেই ঠান্ডা মাথার এক অধিনায়ক। প্রায় ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে মেজাজ হারানোর ঘটনা নেই বললেই চলে। মাঠে পরিস্থিতি যা-ই হোক, মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য আলাদা খ্যাতি আছে তাঁর। এমনি এমনি তো আর ‘ক্যাপ্টেন কুল’ তকমা পাননি! কিন্তু এই আইপিএল খোলসের বাইরের এক ধোনিকে দেখাল। যে ধোনি মেজাজ হারান, মাঠে নেমে আম্পায়ারেরর সঙ্গে লাগিয়ে দিতে পারেন ঝগড়া!

এটিও রজস্থান রয়্যালসকে ঘিরে ঘটা ঘটনা। জেতার জন্য শেষ ওভারে চেন্নাইয়ের দরকার ছিল ১৮ রান। ওভারের তৃতীয় বলেই আউট হয়ে ফেরেন ধোনি। শেষ তিন বলে দরকার মাত্র ৮। স্টোকসের চতুর্থ বল ছিল ফুল টস। কোমরের ওপরে হওয়ার কারণে তৎক্ষণাৎ সেই বলকে ‘নো বল’ ডাকেন স্ট্রাইক প্রান্তের আম্পায়ার উলহাস গান্ধে। কিন্তু স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে থাকা ব্রুস অক্সেনফোর্ড বাতিল করে দেন সেই সিদ্ধান্ত। বিতর্কের শুরু সেখান থেকেই। তর্কে জড়িয়ে পড়েন মাঠে থাকা দুই ব্যাটসম্যান। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ড্রেসিংরুম থেকে নেমে আসেন ধোনি। তাতেও লাভ হয়নি। নো বল হয়নি— এই সিদ্ধান্তই বলবৎ থাকে।
ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত ধোনির দল জিতেছিল। মিচেল স্যান্টনারের শেষ বলের ছক্কা জয়টা নিশ্চিত হয় তাদের। তবে ম্যাচ ফির ৫০ শতাংশ জরিমানা দিতে হয় ধোনিকে।

নাইজেল লং ও বিরাট কোহলি। ছবি: টুইটার
নাইজেল লং ও বিরাট কোহলি। ছবি: টুইটার

নাইজেল লংয়ের রাগ
বোলিংয়ের সময় উমেশ যাদবের পা ক্রিজের বাইরে পড়েছে কিনা, এ নিয়ে বিতর্ক হয় আম্পায়ার নাইজেল লং আর বিরাট কোহলির। বিতর্কের কারণ, কোহলির দাবি ছিল, যাদবের পা ক্রিজের মধ্যেই ছিল। কিন্তু লং তাঁর সিদ্ধান্ত বদলাননি। বেঙ্গালুরুকে শাস্তি হিসেবে জরিমানা করা হয় ৫ রান।
ম্যাচ শেষে কিছুটা হতাশ লং ড্রেসিং রুমে গিয়েই লাথি মারেন দরজায়। দরজার অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। ভেঙে পড়ে সে দরজা। ঘটনাটি বিতর্ক তৈরি করেছিল। পরে তিনি ক্ষমা চান আর নতুন দরজা লাগিয়ে দেওয়ার খরচ বহন করার প্রস্তাব দেন।

দাদা এবার ছিলেন দিল্লির সঙ্গে। ছবি: টুইটার
দাদা এবার ছিলেন দিল্লির সঙ্গে। ছবি: টুইটার

দিল্লির সৌরভ
সৌরভ গাঙ্গুলী যেন কলকাতার। ভালোবেসে তাঁকে তাঁর জন্ম শহরের মানুষ ডাবে ‘দাদা’। কলকাতার ‘দাদা’ এক সময় হয়ে উঠেছিলেন ভারতের দাদা। প্রথম আইপিএলে তিনি ছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের আইকন ক্রিকেটার। দলটির সঙ্গে আত্মার সম্পর্কই ছিল সাবেক ভারত–অধিনায়কের। কিন্তু মালিকপক্ষের সঙ্গে ঝামেলায় সে সম্পর্কটা টেকেনি। পরে পুনে ওয়ারিয়র্সের হয়ে খেলেছিলেন দুই মৌসুম। কিন্তু আইপিএলে এরপর আর সরাসরি জড়িত থাকেন নি তিনি।
৭ বছর পর আবারও আইপিএলে সরাসরি দলের সঙ্গে যুক্ত হলেন সৌরভ। কিন্তু ফিরলেন দিল্লির হয়ে। আইপিএলের সবচেয়ে দুর্বল হিসেবে বদনাম ছিল দিল্লির। কিন্তু সৌরভ ম্যানেজমেন্টে যোগ দিতেই ভোজবাজির মতো পাল্টে গেল সবকিছু। এই প্রথমবারের মতো প্লে অফ খেলল দিল্লি। ‘ডেয়ারডেভিলস’ নাম পাল্টে ‘ক্যাপিট্যালস’ হওয়া দিল্লির পরামর্শক হিসেবে সৌরভ এবার ছিলেন দুর্দান্ত।

রাসেল মানেই ছিল বল সীমানার বাইরে আছড়ে পড়া। ছবি: টুইটার
রাসেল মানেই ছিল বল সীমানার বাইরে আছড়ে পড়া। ছবি: টুইটার

আন্দ্রে রাসেলের ক্যারিবিয়ান ঝড়
এই মুহূর্তে টি–টোয়েন্টি জগতের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার আন্দ্রে রাসেল। এবারের আইপিএলে রাসেল মাতিয়েছেন দর্শক–গ্যালারি। তাঁর ব্যাটিং–ঝড় এবারের আইপিএলে তাঁকে এনে দিয়েছে মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ারের মর্যাদা।
১৯ বলে ৪৯, ১১ বলে ৪৪, ২৮ বলে ৬২, ১৩ বলে ৪৮, ৪৪ বলে ৫০, ২১ বলে ৪৫— আইপিএলের প্রথম পাঁচ ম্যাচে এই ছিল রাসেলের সংগ্রহ। মাত্র ১৩ ম্যাচে করেছেন ৫১০ রান সঙ্গে ১৪ উইকেট আর ৪ ক্যাচ। কলকাতার সর্বোচ্চ রান করা ব্যাটসম্যানও রাসেলই। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত প্লে অফ খেলার সম্ভাবনা একাই টিকিয়ে রেখেছিলেন রাসেল। তিনি এবারের আইপিএলের অন্যতম সেরা ‘এন্টারটেইনার’।