আবাহনী দলটা যেন 'হাসপাতাল'

অনুশীলনে আবাহনী লিমিটেড। ছবি: প্রথম আলো
অনুশীলনে আবাহনী লিমিটেড। ছবি: প্রথম আলো
>এএফসি কাপের ম্যাচে আগামীকাল ভারতের চেন্নাইয়িন এফসির বিপক্ষে মাঠে নামবে আবাহনী লিমিটেড। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে আবাহনী দলের গুরুত্বপূর্ণ চার খেলোয়াড় ব্যস্ত চোট নিয়ে।

‘শেষ পর্যন্ত না আমাকেও খেলতে হয়!’ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে কথাটি বলে হেসে দিলেন আবাহনী লিমিটেডের কোচ মারিও লেমোস। পর্তুগিজ কোচের মুখের এই হাসিও লুকাতে পারছিল না কণ্ঠের হতাশা ও অসহায়ত্ব।

আগামীকাল এএফসি কাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আবাহনীর প্রতিপক্ষ ভারতের চেন্নাইয়িন এফসি। জিতলে টিকে থাকবে দ্বিতীয় পর্বে খেলার আশা। আর হেরে গেলে বরাবরের মতোই এশিয়ান মঞ্চের প্রথম পর্ব থেকেই বিদায়ের চোখ রাঙানি। এমন একটি ম্যাচের আগেই কি না ঐতিহ্যবাহী দলটি এক প্রকার হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। মূল একাদশের চারজন খেলোয়াড়ের চোট। আবাহনী কোচের জন্য রক্ষণভাগ দাঁড় করানোই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আবাহনীর অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ডিফেন্ডার তপু বর্মণ। টুর্নামেন্টের প্রথম থেকেই পাওয়া যায়নি দেশের অন্যতম সেরা এই সেন্টারব্যাককে। গত মাসে হাঁটুর অপারেশন করিয়ে একেবারেই মাঠের বাইরে চলে গিয়েছেন। তাঁর জায়গায় সেন্টারব্যাকে খেলার কথা ছিল টুটুল হোসেন বাদশার। চোটের জন্য বাদশাও খেলার মতো পুরোপুরি ফিট নন। দুজনের চোটে শেষ দুই ম্যাচে ভারতের মিনার্ভা পাঞ্জাব ও চেন্নাইয়িন এফসির বিপক্ষে ব্রাজিলিয়ান হোল্ডিং মিডফিল্ডার ওয়েলিংটন প্রিওরিকে খেলানো হয়েছিল সেন্টারব্যাকে। মরার ওপর খাঁড়ার ঘা ওয়েলিংটনও এখন চোটে আক্রান্ত।

আবাহনী সমর্থকদের জন্য হতাশার গল্পটা এখানেই শেষ নয়। এত দিন রক্ষণভাগের ওপর ছায়া হিসেবে ছিলেন হোল্ডিং মিডফিল্ডার আতিকুর রহমান ফাহাদ। চোট নিয়ে অপারেশনের টেবিলে যেতে হয়েছে তাঁকে। স্বাভাবিকভাবে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হারিয়ে আবাহনী কোচের এখন মাথার চুল ছেঁড়ার মতো অবস্থা!সোজাসাপটা জানিয়ে দিলেন দল সাজাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, ‘মিথ্যা বলব না তপু ও ফাহাদকে মিস করব। এ ছাড়া আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের চোট আছে। শেষ চার ম্যাচে বাদশাকে পাইনি। সে এখনো খেলার মতো পুরোপুরি ফিট নয়। নতুন করে ইনজুরিতে পড়েছে ওয়েলিংটন। রক্ষণভাগ সাজানোই কঠিন হয়ে গিয়েছে।’

কোচদের হাতে বিকল্পও রাখতে হয়। আগামী ম্যাচে আফগানিস্তানের মাশি সাইগানির সঙ্গে সেন্টারব্যাকে খেলানো হবে রাইটব্যাক রায়হান হাসানকে। আর চোট কাটিয়ে অনেক দিন বাদে রাইটব্যাকে ফিরবেন প্রথাগত ফরোয়ার্ড সাদ উদ্দিন। এ ছাড়া পুরোপুরি ফিট না হওয়া সত্ত্বেও খেলার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে বলা হয়েছে বাদশাকে। ঠিক তেমনি ওয়েলিংটনের খেলার সম্ভাবনাও ফিফটি ফিফটি বলে জানিয়েছেন কোচ। সবকিছু মিলিয়ে আকাশি-নীলদের অবস্থাটা বেশ শোচনীয়।

এত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও খেলার আগে হার মানতে রাজি নন মারিও। নিজেদের সেরাটা দিয়ে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আবাহনী কোচ, ‘ভারতে আমরা ভালো খেলেও আত্মঘাতী গোলে হেরেছিলাম। এর পরে দুই সপ্তাহ অনুশীলন হয়েছে। সুতরাং সমস্যা নিয়ে পড়ে থাকতে রাজি নই। খেলোয়াড়েরা লড়াই করবে বলে আমার বিশ্বাস। আমরা সবাই জানি ম্যাচটি জিততে না পারলে টুর্নামেন্ট থেকে আমাদের ছিটকে যেতে হবে। ফলে ঘরের মাঠে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য মুখিয়ে আছি আমরা।’

গ্রুপের সবচেয়ে শক্তিশালী দল চেন্নাইয়িন। যাদের বিপক্ষে আহমেদাবাদে ১-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নরা। ভালো খেলেও সেই ম্যাচে আবাহনী হেরেছিল ওয়েলিংটনের আত্মঘাতী গোলে। ওই জয়ের ৩ ম্যাচ শেষে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে চেন্নাইয়িন। সমান ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে আছে আবাহনী। এএফসি কাপের গ্রুপপর্বে দক্ষিণ এশিয়ার চার ক্লাব খেলছে ‘ই’ গ্রুপে। অন্য দুইটি দল হলো ভারতের মিনার্ভা পাঞ্জাব ও নেপালের মানাং মার্শিয়াংদি। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিক লড়াই শেষে একটি দল যেতে পারবে দ্বিতীয় পর্বে।