তাসকিন-ফরহাদদের তবে বয়ে বেড়ানো কেন?

আয়ারল্যান্ড সফরে অতিরিক্ত চার খেলোয়াড়ের অন্তর্ভুক্তির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ফাইল ছবি
আয়ারল্যান্ড সফরে অতিরিক্ত চার খেলোয়াড়ের অন্তর্ভুক্তির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ফাইল ছবি
>বিশ্বকাপ দলের সঙ্গে অতিরিক্ত দুজন। আয়ারল্যান্ড সফরের দুদিন আগে যোগ হলো আরও দুজন। চার অতিরিক্ত খেলোয়াড়ের কারও এখনো খেলা হয়নি আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে। ফাইনালে তাঁদের কারও সুযোগ মিলবে, সেটিও ভাবার সুযোগ নেই। তবে চারজন অতিরিক্ত খেলোয়াড় নেওয়ার যুক্তি কী?

তাসকিন আহমেদের কি ওই গানটা খুব মনে পড়ছে? ‘আশায় আশায় দিন যে গেল, আশা পূরণ হলো না...।’ শুধু তাসকিন কেন, ফরহাদ রেজা, ইয়াসির আলী, নাঈম হাসানেরও মনে পড়বে। বড় আশা নিয়ে হয়তো গিয়েছিলেন আয়ারল্যান্ড সফরে। ডাবলিনের টিম হোটেল, মাঠে টুকটাক অনুশীলন আর সাইডবেঞ্চে বসে থাকা ছাড়া তাঁদের আর কিছুই করা হলো না। আজ আইরিশদের বিপক্ষে আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচেই যখন খেলা হয়নি, ফাইনালে তাঁদের খেলার সম্ভাবনা থাকে কী করে!

তাঁদের দিয়ে কিছুই যখন হবে না, তবে কেন আয়ারল্যান্ডে বয়ে বেড়াল বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট? শুধু নয়নাভিরাম আয়ারল্যান্ডের হাওয়া খেতে নিশ্চয়ই নেওয়া হয়নি! বিশ্বকাপ দলে থাকা ১৫ জনের সঙ্গে ইয়াসিরকে নেওয়া প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বেশ জোর দিয়ে বলেছিলেন, ‘ওকে মাত্র তো দল দিয়েছি, অবশ্যই খেলানো হবে। খেলানো হবে না কেন?’

নাঈমকে দলের সঙ্গে রেখে পরিচর্যা করা হচ্ছে গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে। যেমনটা লম্বা সময়জুড়ে করা হয়েছে নাজমুল হোসেনকে। তাসকিন আহমেদকে নেওয়া হয়েছে স্টিভ রোডসের চাহিদা আর সংবাদমাধ্যমে তুমুল আলোচনা হওয়ায়। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত খেলার পুরস্কার হিসেবে আয়ারল্যান্ডে ‘পিকনিক’ সফরের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে ফরহাদকে। স্কোয়াডে থাকলেই যে একাদশে নিতে হবে, এটির কোনো নিশ্চয়তা নেই। পরিস্থিতি অনুযায়ী তাৎক্ষণিকভাবে অনেক নতুন সিদ্ধান্ত হয়। আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়। সবই ঠিক আছে। কিন্তু আয়ারল্যান্ড সফরটা যে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সফর, এটা তো আগ থেকেই জানা ছিল। এ প্রস্তুতিতে বিশ্বকাপের খেলোয়াড়দের আগে সুযোগ দেওয়া হবে, সেটি স্বাভাবিক। আর সেটি করতে করতে পুরো সিরিজই শেষ হয়ে যেতে পারে—সব জেনেও বিশাল লটবহর টানার কী অর্থ?

হ্যাঁ, আর্থিকভাবে বিসিবি অনেক শক্তিশালী ক্রিকেট বোর্ড। চারজন খেলোয়াড় বয়ে বেড়ানো তাদের কাছে কোনো ব্যাপার না–ও মনে হতে পারে। কিন্তু সমস্যাটা অন্যখানে, অতিরিক্ত খেলোয়াড় নেওয়া হয়েছে বলেই নানা গুঞ্জন ছড়াল গত কিছুদিনে। বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯ থেকে এ বাদ পড়বে, ও আসবে—বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের আগে এসব আলোচনার সুযোগ হলো অতিরিক্ত খেলোয়াড় নেওয়ায়। দলের এক খেলোয়াড় মুঠোফোনে সেদিন কথায় কথায় বলছিলেন, ‘দলটা খুব স্থিতিশীল অবস্থায় আছে, ভালো খেলছে। বিশ্বকাপের প্রস্তুতিও ভালো হচ্ছে। এর মধ্যে কেন এসব আলোচনা হবে?’

এমনকি বিশ্বকাপের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ১৯ জনের লটবহর নিয়ে অনুশীলন করাটাও যে কঠিন, সেটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন কোচ স্টিভ রোডস, ‘এটা ঠিক যে বিশ্বকাপের ১৫ জনের সঙ্গে আরও চারজন বেশি আছে। তাদের দেখভালও করতে হচ্ছে। কাজটা যেকোনো কোচের জন্যই কঠিন। এতজন থাকলে হয় কি, নেটে সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। কী আর করা! একটা ভালো দিক হলো, আমি একসঙ্গে অনেককে সামনে থেকে দেখতে পাচ্ছি।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ড্রেসিংরুমের আবহ কেমন হতে পারে কিংবা কঠিন কন্ডিশনের সঙ্গে পরিচয় করে দিতে নতুন মুখ হিসেবে অতিরিক্ত এক-দুজনকে নেওয়া যেতেই পারে। তবে আয়ারল্যান্ডে অতিরিক্ত খেলোয়াড়ের তালিকাটা অহেতুক বেশি করা হয়েছে। দুয়ারে বিশ্বকাপ বলেই এটি আরও বেশি চোখে লাগছে!