কলসিন্দুর স্কুল পুড়েছে, হৃদয় পুড়ছে সানজীদাদের

কলসিন্দুর স্কুলে আগুন লেগে পুড়েছে সব স্বীকৃতির সনদ, পদক। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান এই স্কুলের ছাত্রী, নারী ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য সানজীদা । ফাইল ছবি, প্রথম আলো
কলসিন্দুর স্কুলে আগুন লেগে পুড়েছে সব স্বীকৃতির সনদ, পদক। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান এই স্কুলের ছাত্রী, নারী ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য সানজীদা । ফাইল ছবি, প্রথম আলো
>কলসিন্দুর স্কুলে আগুন লেগে পুড়ে গেছে খেলাধুলায় মেয়েদের সব অর্জন। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছেন কলসিন্দুর স্কুল ও মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলের দুই তারকা সানজীদা ও মারিয়া

বাংলাদেশের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল কেবল ফুটবলের জন্য কতটা বিখ্যাত হতে পারে, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রাম তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। মেয়েদের জন্য আয়োজিত বঙ্গমাতা প্রাথমিক স্কুল ফুটবলে কলসিন্দুর স্কুল হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়ে গোটা দেশে আলোড়ন তুলেছিল। পরবর্তী সময়ে এই স্কুলের মেয়েরাই বাংলাদেশের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দল ও জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বঙ্গমাতা স্কুল টুর্নামেন্টের পাশাপাশি কলসিন্দুর স্কুল জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা প্রতিযোগিতায় তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি, সাফল্যের সেই স্বীকৃতিগুলো এখন আর নেই। গতকাল আগুনে পুড়ে গেছে স্বীকৃতির সনদ ও পদকগুলো। 

গতকাল মঙ্গলবার স্কুলের অফিসকক্ষে আগুন লাগে। দুঃসংবাদটি পেয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে ক্যাম্পে থাকা কলসিন্দুর গ্রামের মেয়েরা। স্বীকৃতির সনদ আর পদকগুলোর জন্য আক্ষেপ করছেন সানজীদা আকতার, মারিয়া মান্দারা। বিহ্বল হয়ে তাঁরা জানতে চাচ্ছেন, কেন এমন হলো। সর্বনাশা আগুন কীভাবে গ্রাস করল তাঁদের অর্জনগুলোকে। সানজীদা তো এই ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্রই দেখছেন, ‘সকালেই ছোটন স্যারের কাছ থেকে শুনলাম আমাদের মেডেল–সার্টিফিকেট কারা যেন পুড়িয়ে দিয়েছে। শুনে সকাল থেকেই খুব কষ্ট লাগছে। ওই স্কুল থেকে জেএসসি, ম্যাট্রিক (এসএসসি) পাস করেছি। গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। আমাদের স্মৃতিগুলো আর নেই। যাঁরা এই কাজগুলো করেছেন, তাঁদের কঠোর শাস্তি চাই।’

মাধ্যমিক পাসের সঙ্গে সানজীদার কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যায় শেষ হয়ে গেলেও আরেক তারকা খেলোয়াড় মারিয়া এখনো এ প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন। অনূর্ধ্ব-১৬ দলের অধিনায়কের কষ্টটা তাই আরও বেশি, ‘আমাদের মেডেল–সার্টিফিকেট সবকিছুই তো স্কুলেই ছিল। শুনলাম সবকিছু পুড়ে গিয়েছে। আমরা চাই এর সুষ্ঠু বিচার হোক। যাঁরা অপরাধ করেছেন, তাঁদের শাস্তি চাই।’

মেয়েদের সাফল্যের স্বীকৃতিগুলো হারিয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক রতন মিয়াও বিহ্বল, ‘পুড়ে যাওয়া জিনিসের মধ্যে আছে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে উপজেলা পর্যায়ে এই প্রতিষ্ঠানের মেয়েদের অর্জন করা সনদ ও মেডেল।’

এর আগে ধোবাউড়া থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালে স্কুলের অফিসকক্ষ খোলার পরই দেখা যায় যে কাঠের টেবিলের ওপর ও মেঝেতে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, সনদ ও পদক পোড়া অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে একটি কম্পিউটারের ভাঙা অংশও পড়ে ছিল। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে ধোবাউড়া থানার পুলিশ ও হালুয়াঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। স্থানীয় লোকজন জানান, কলসিন্দুর উচ্চমাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজটি জাতীয়করণের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ কাগজে আগুন দেওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক।