আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচে বাংলাদেশের অনায়াস জয়

তামিম-লিটনের উদ্ধোধনী জুটিতে এসেছে শতাধিক রান। ছবি: এএফপি
তামিম-লিটনের উদ্ধোধনী জুটিতে এসেছে শতাধিক রান। ছবি: এএফপি
>ত্রিদেশীয় সিরিজে আয়ারল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ। শুক্রবার ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ

হেসেখেলে জয়? তা বলাই যায়। তিন শ ছুঁইছুঁই রান তাড়া করতে নেমে ৬ উইকেটের জয়। সেটাও ৪২ বল হাতে রেখে। এই জয় সহজ না তো কী? ২৯২ রান তাড়া করতে নামা বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে কখনোই মনে হয়নি দল জয়ের পথ হারাতে পারে। বরং চলতি ত্রিদেশীয় সিরিজে রান তাড়া করতে নেমে অনায়াস জয়ের ধারাই বজায় রাখল মাশরাফি বিন মুতর্জার দল। উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাস নিয়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শুক্রবার ফাইনাল খেলতে নামছে বাংলাদেশ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আগের দুটি ম্যাচেই আড়াই শ-র আশপাশের সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে কোনো কিছু বুঝতে দেননি তামিম-সৌম্যরা। আজ তিন শ ছুঁইছুঁই সংগ্রহ তাড়া করার লক্ষ্য পেয়ে সমর্থকদের একটু দুশ্চিন্তা হওয়াই স্বাভাবিক। আগেই ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ায় এই ম্যাচ স্রেফ আনুষ্ঠানিকতার লড়াইয়ে পরিণত হলেও প্রতিপক্ষ তো আয়ারল্যান্ড। তাদের কাছে কোনোভাবেই হারা যাবে না—এমন একটা পণ তো থাকেই। তামিম (৫৭), লিটন (৭৬) ও সাকিব (৫০) মিলে সেই প্রতিজ্ঞা ভালোভাবেই পূরণ করেছেন।

তবে সাকিব আল হাসান একটু দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছেন। ৩৬তম ওভার শেষে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন এ অলরাউন্ডার। তার আগে খেলেছেন ৫১ বলে ৫০ রানের জমাট ইনিংস। সাকিব ঠিক কী কারণে মাঠ ছাড়লেন তা পরিষ্কার জানা যায়নি। আগের চোট থাকায় একটু সমস্যা তো হয়ই। ফাইনালের আগে সম্ভবত এই চোট নিয়ে বিপদ আর বাড়াতে চান না বলেই মাঠ ছেড়েছেন সাকিব। আর বাংলাদেশ দলও তখন জয়ের সুবাস পাচ্ছিল। ৮৪ বলে দরকার ছিল মাত্র ৪৬ রান। সাকিব আউট না হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরও হাতে ছিল ৬ উইকেট।

মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেক জুটি এখান থেকে শেষ করে আসতে পারতেন। বিশেষ করে আগের দুই ম্যাচে একাদশে সুযোগ না পাওয়া মোসাদ্দেকের আজ শেষ করে আসতে হতো। কিন্তু দল ৫৬ বলে ১৫ রানের দূরত্বে থাকতে আউট হন মোসাদ্দেক (১৪)। আগের দুটি ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ না পাওয়া সাব্বির রহমানকে নিয়ে বাকি পথটুকু পারি দেন মাহমুদউল্লাহ। দুয়ারে বিশ্বকাপ কড়া নাড়ায় এবং সামনে চলতি সিরিজের ফাইনাল থাকায় সাব্বিরের আক্ষেপ হতেই পারে, ব্যাটিং অনুশীলনটা ঠিকমতো করা হলো না!

এর আগে উদ্ধোধনী জুটিতে দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। সৌম্য সরকারের জায়গায় দলে সুযোগ পাওয়া লিটন ৭৬ রান করে বুঝিয়ে দেন বিশ্বকাপের জন্য তিনিও প্রস্তুত। তাঁর আউট হওয়ার আগে ফিরেছেন তামিম। ১৭তম ওভারে তামিম আউট হওয়ার আগে উদ্ধোধনী জুটিতে যোগ হয়েছে ১১৭ রান। দুজনের ইনিংস নিয়ে আক্ষেপও আছে। তাঁদের কেউ-ই যে ইনিংস আরও লম্বা করতে পারেননি। তিনে সাকিব নেমে রানের গতি ধরে রাখার সঙ্গে ব্যাটিংয়েও বেশ মনোযোগী ছিলেন। টপ অর্ডারে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের ফিফটি দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য সত্যিই চোখ জুড়ানো দৃশ্য।

প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের কাছ থেকেই এসেছে দুই অঙ্কের ইনিংস। মুশফিকুর রহিম ফিরেছেন ৩৫ রানে। একই রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন মাহমুদউল্লাহ। দুর্দান্ত এই জয়ে দলের ব্যাটিংয়ে আফসোস বলে যদি কিছু থাকে সেটি মাত্র দুটি বিষয়—এই সিরিজে দলের ওপেনিং জুটি দুর্দান্ত করলেও কেউ সেঞ্চুরি পাননি। আর মোসাদ্দেক ও সাব্বিরের সেভাবে ব্যাটিং করতে না পারা। মোসাদ্দেক তো আজ সুযোগ পেয়েও শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেননি। সাব্বির যখন ব্যাটিংয়ে নামলেন জয়ের জন্য দরকার ১৫ রান। এর মধ্যে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৭ রান। মন্দের ভালো হিসেবে সাব্বির ভাবতে পারেন, ব্যাটিংয়ের সুযোগ সেভাবে না পেলেও জয়টা পেয়েছেন চার মেরে!

বাংলাদেশ দুর্দান্ত খেলেই উঠল ফাইনাল। এখন সেই পুরোনো আফসোসটা দূর করতে পারলেই হয়—শিরোপা জয়!