আইপিএল খেলে কি ক্লান্ত কোহলিরা?

>
আইপিএল ক্লান্ত করে দিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটারদের? ছবি: সংগৃহীত
আইপিএল ক্লান্ত করে দিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটারদের? ছবি: সংগৃহীত

শেষ হলো আইপিএল। এখন বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। আইপিএলে টানা খেলার জন্য কোহলিরা কি সত্যিই ভীষণ ক্লান্ত থাকবেন?

১৯৯২ বিশ্বকাপ শুরুর কিছুদিন আগের কথা। সদ্যই অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে ফিরেছে ভারত। সেখানে পাঁচ টেস্ট ও ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের দল ভীষণ ক্লান্ত। এতটাই যে বিশ্বকাপ শুরুর কদিন আগে দলের একজন বলে বসলেন, ‘আগামী কদিন দলের কয়েকজন ক্রিকেট ব্যাটের চেহারা।’

দৃশ্যটি এখনো পাল্টায়নি। ২৭ বছরের ব্যবধানে আরও একটি বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছে ভারত। ক্রিকেটাররা যথারীতি ভীষণ ক্লান্ত। আইপিএলে গত দেড় মাসে ১৪ থেকে ১৭টি করে ম্যাচ খেলেছেন বিশ্বকাপ দলের খেলোয়াড়রা। এতে একধরনের ‘ভারত-দর্শন’ও হয়ে গেছে কোহলি-ধোনিদের। ভেন্যুগুলো যে নানা রাজ্যের শহরে। টানা খেলার সঙ্গে ভ্রমণক্লান্তি যোগ হলে কী ঘটে, তা মহেন্দ্র সিং ধোনিকে দেখলে বোঝা যায়। চেন্নাই সুপার কিংসের সঙ্গে বিমানবন্দরের লাউঞ্জে ধোনিকে ঘুমোতে দেখার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার খোরাক।

শুধু শারীরিক ক্লান্তি নয়, মানসিক অবসাদেও ভোগার কথা কোহলিদের। বিশ্বকাপ খেলতে আগামী বুধবার ইংল্যান্ডের উদ্দেশে উড়াল দেবে ভারত। তার আগে দলের কিছু ক্রিকেটারের স্পনসরদের সঙ্গেও বসতে হবে। একবার ভেবে দেখুন, আইপিএলে টানা খেলা ও ভ্রমণক্লান্তির ধকল পোহানোর পর স্পনসরদের সঙ্গে সেই খেলা নিয়েই রফা শেষে আবার ফিরতে হবে ক্রিকেটে—তাও যেনতেন টুর্নামেন্ট নয়, রীতিমতো বিশ্বকাপ জয়ের চাপ নিতে হবে।

একটি নেতিবাচক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০০৯ আইপিএল মৌসুম শেষে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পায়নি ভারতীয় দল। দিন দশেক পরই উড়াল দিতে হয়েছিল ইংল্যান্ডে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের শিরোপাটা তাঁরা ধরে রাখতে পারেনি। বিদায় নিতে হয়েছিল সুপার এইট থেকেই।

এবার আইপিএল শুরুর আগে বিসিসিআই জানিয়েছিল, বিশ্বকাপ দলে থাকা খেলোয়াড়দের ওপর থেকে চাপ কমানোর ব্যাপারে ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলোর সঙ্গে কথা বলা হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। পেসারদের চোটে পড়ার ভয় থাকে সবচেয়ে বেশি। সেই পেসাররাও ম্যাচ খেলেছেন টানা। আর এবার বিশ্বকাপের সূচিও খেলোয়াড়দের শরীরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার মতো। গ্রুপ পর্ব ১০টি দল একে অপরের বিপক্ষে খেলবে, এরপর সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। শিরোপা জিততে টানা ভালো করার বিকল্প নেই। সে জন্য খেলোয়াড়দের ফিট থাকতে হবে শারীরিক ও মানসিকভাবে। আইপিএলের জন্য কি তা ঠিকঠাকমতো হয়েছে—প্রশ্নটা ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের।

ভারতের সাবেক অধিনায়ক দিলীপ ভেংসরকার এর মধ্যে টেনে আনলেন আরেক দুশ্চিন্তা। টি-টোয়েন্টি সংস্করণ থেকে ওয়ানডে সংস্করণে মানিয়ে নেওয়ার পরীক্ষাও দিতে হবে কোহলিদের। ‘এটা সম্পূর্ণ আলাদা সংস্করণ। ৪ ওভার নয়, ১০ ওভার বল করতে হবে। টি-টোয়েন্টি মানসিকতা পাল্টে ওয়ানডেতে যত দ্রুত সম্ভব মানিয়ে নিতে হবে’—বলেন ভেংসরকার। তবে এর বিরুদ্ধমতও আছে। বিশ্বকাপে ৫ জুন প্রথম ম্যাচ খেলবে ভারত। আইপিএলের ফাইনাল থেকে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ পর্যন্ত প্রায় ২৪ দিনের এ সময়কে খেলোয়াড়দের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য যথেষ্ট বলেই মনে করছেন অনেকে।

ভারতের সাবেক উইকেটরক্ষক ও প্রধান নির্বাচক কিরণ মোরে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘মনে হয় না খেলোয়াড়েরা ক্লান্তিতে ভুগবে। সেই দিন আর নেই। এখন সবাই শীর্ষস্থানীয় ফিজিও পাচ্ছে। আমাদের ফিজিও, ট্রেনার ও চিকিৎসকেরা রাত দুটো পর্যন্ত দলের সঙ্গে ব্যস্ত থাকে।’

২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে ইংলিশ কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ইংল্যান্ডে ওয়ানডে সিরিজ খেলছে পাকিস্তান। আর আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারতীয় দল বিশ্বকাপের আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশের বিপক্ষে। এই প্রস্তুতি পর্যাপ্ত কি না, সে প্রসঙ্গে আইপিএলের ফর্মকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন ভারতের প্রধান নির্বাচক এমএসকে প্রসাদ, ‘আমরা খুশি যে বিশ্বকাপ দলের ৮০ শতাংশ ক্রিকেটার ফর্মে আছে। আইপিএলে চাপের মুহূর্তে অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগবে। আইপিএলে ভালো ফর্ম অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

প্রধান নির্বাচকের কথায় ভারতীয় সমর্থকেরা তাহলে স্বস্তি পেতে পারেন। আইপিএলের ভালো ফর্ম নিয়েই যে বিশ্বকাপে যাবেন কোহলিরা। কিন্তু ক্লান্তির বিষয়টি একদম উড়িয়েও দেওয়া যায় না। ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্মৃতি নিশ্চয়ই অনেকের মনে আছে?