বিশ্বকাপের জন্য কতটা প্রস্তুত আফগানিস্তান?

কাল আফগানিস্তানকে অনায়াসে হারিয়েছে আয়ারল্যান্ড।
কাল আফগানিস্তানকে অনায়াসে হারিয়েছে আয়ারল্যান্ড।
আফগানিস্তান বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে এ মুহূর্তে আয়ারল্যান্ড সফরে আছে। গতকাল স্বাগতিকদের কাছে ৭২ রানে হারা ম্যাচে কেমন যেন অচেনা মনে হয়েছে দলটিকে।


২০০৭ সালে অভিষেকের পর এই প্রথম বিশ্বকাপে নেই আয়ারল্যান্ড। তাই বলে তারা যে বিশ্বকাপের আঁচ পাচ্ছে না সেটি বল যাবে না। ইংলিশ কন্ডিশনে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সারতে এরই মাঝে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে গেছে। এখন আতিথ্য নিয়েছে আফগানিস্তান।

প্রকৃত অর্থে আতিথ্য পায়নি আফগানিস্তান। দুই ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৭২ রানে হেরেছে তারা। ব্যাটিং ও বোলিং—দুই ক্ষেত্রেই আফগানদের চেয়ে চেয়ে ভালো পারফরম্যান্স ছিল আয়ারল্যান্ডের।

ম্যাচের আগেই কোচ ফিল সিমন্স বলেছিলেন, বিশ্বকাপের আগে অধিনায়ক পরিবর্তনের নাটক যেন খেলায় প্রভাব না ফেলে সেদিকে নজর রাখছে দল। তবে কোচ নিজেই বিশ্বকাপের পর চলে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কাল। এমন দুটি ঘটনার প্রভাবে কি না কে জানে, গতকাল আফগানিস্তান দলকে একদমই অপরিচিত ঠেকেছে। গত কয়েক বছরে দারুণ খেলা এ দলটি কাল একদমই গুছিয়ে খেলতে পারেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাছাইপর্বে হারিয়ে আসা দলটি উইন্ডিজে গিয়ে সিরিজ ড্র করে এসেছে। এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে। ভারতের সঙ্গে টাই করেছে, পাকিস্তানের কাছে একটুর জন্য হেরে গিয়েছে। সে দলটি কাল বলা যায় রীতিমতো আত্মসমর্পণ করেছে।

২ উইকেটে ১৩৪ রান তুলে ফেলা আয়ারল্যান্ডকে ২১০ রানে অলআউট করে আফগানিস্তান বোলাররা নিজেদের কাজটা ঠিকভাবেই করেছিলেন। তবে এর মাঝেও রশিদ খানের বোলিং একটু হলেও চিন্তায় ফেলে দেবে দলকে। কালও দুই উইকেট পেয়েছেন রশিদ, মাত্র ৪১ রান দিয়েছেন। কিন্তু ফর্মে থাকা পল স্টার্লিং তাঁকে অনায়াসে খেলেছেন। যে গুগলি দিয়ে বিশ্বের তাবৎ ব্যাটসম্যানদের বিপাকে ফেলতেন রশিদ, সে গুগলিই পা ব্যবহার করে অনায়াসে খেলেছেন স্টার্লিং। পেস বান্ধব কন্ডিশনে রশিদকে কীভাবে সুইপ করে খেলতে হয় তার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে স্টার্লিং। বিশ্বকাপে খেলা দলগুলোর ব্যাটসম্যানরা কালকে ম্যাচের ভিডিও থেকে শিক্ষা নিতেই পারেন।

আফগানিস্তানের জন্য মূল চিন্তার বিষয় হলো তাদের ব্যাটিং। অতিমাত্রায় আগ্রাসী বলে আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা অননুমেয়। সেটা আয়ারল্যান্ডের বোলারদের বিপক্ষে আরও ভালোভাবে বোঝা গেছে। ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নখদন্তহীন মনে হওয়া আইরিশ বোলাররাই কাল আফগানিস্তানকে ভুগিয়েছে। অভিজ্ঞ মুরতাগের প্রত্যাবর্তন অবশ্যই ভূমিকা রেখেছে। তাঁর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে দুই আক্রমণাত্মক ওপেনার মোহাম্মদ শেহজাদ ও হজরতউল্লাহ জাজাই দম ফেলার ফুসরতই পাচ্ছিলেন না। ১৪ বলে ২ করে ফিরেছেন শেহজাদ। টি-টোয়েন্টিতে রেকর্ড ভেঙে একাকার করে দেওয়া জাজাই ১৪ রান তুলতে খেলেছেন ৪০ বল! আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান ভরপুর আফগান দলও তাই প্রথম ১৬ ওভারে মাত্র ২ বাউন্ডারি মারতে পেরেছে।

এরপরও ম্যাচে ফিরতে পারত আফগানিস্তান। কিন্তু ওই যে আক্রমণকেই মূল মন্ত্র ভাবে দলটি। মোহাম্মদ নবী ও আসগর আফগান ভিত্তি গড়ার কাজটাও আক্রমণেই সেরেছেন। এরপরই ধৈর্য হারিয়ে উইকেট খুঁইয়ে এসেছেন দুজন। অধিনায়ক ও সহ অধিনায়ক গুলবদিন নাইব-রশিদ ঠান্ডা মাথায় ইনিংস গড়ার চেয়ে দু-চারটি ছক্কা মেরেই সমস্যার সমাধান খুঁজেছেন। ১৩৮ রানে গুটিয়ে যাওয়া বলছে ওভাবে সমাধান মেলেনি আফগানিস্তানের। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে আফগানিস্তান ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে আসলেই কতটা কি করতে পারে, প্রশ্ন তাই উঠেই যাচ্ছে।