হেমন্ত ফিরলেন, তবে ডিফেন্ডার হয়ে

২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গোল করে সমালোচকদের চুপ করিয়ে দিয়েছিলেন হেমন্ত ( মাঝে)। আবার কী পারবেন নিজেকে প্রমাণ করতে?। ফাইল ছবি
২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গোল করে সমালোচকদের চুপ করিয়ে দিয়েছিলেন হেমন্ত ( মাঝে)। আবার কী পারবেন নিজেকে প্রমাণ করতে?। ফাইল ছবি

‘৮ নম্বর জার্সি গায়ে কে খেলে, হেমন্ত না? ও কি রাইটব্যাকে খেলছে?’

আবাহনী-বসুন্ধরা অলিখিত ফাইনালে প্রেসবক্সে এক সহকর্মীর তোলা প্রশ্নে বিস্ময়টা টের পাওয়া যাচ্ছিল অনায়াসে। হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাসকে রাইটব্যাক হিসেবে মাঠে দেখলে চোখ তো কচলাতেই হয়। তবে সে বিস্ময় কাটিয়ে হেমন্ত মাঠে ফিরেছে, সে খবরেই স্বস্তি পেয়েছে দেশের ফুটবল।

বাংলাদেশের ম্লান ফুটবলের দিনগুলিতে হঠাৎ আলোর ঝলকানি দেখিয়ে হেমন্তর আগমন। যেমন তাঁর প্রতিভা, তেমন শারীরিক যোগ্যতা। যেকোনো ফুটবল কোচের প্রথম দর্শনে তাঁর ফুটবলীয় দক্ষতায় প্রেমে পড়ে যাওয়ার কথা। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক লোডভিক ডি ক্রুইফও পড়েছিলেনও। অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দল থেকে তরুণ হেমন্তকে মূল জাতীয় দলে নিয়ে গায়ে তুলে দিয়েছিলেন ১০ নম্বর জার্সি। ডাচ কোচ ক্রুইফের নম্বর টেন হিসেবে প্রতিভার ঝলক দেখিয়ে হেমন্তও দিচ্ছিলেন প্রতিদান। কিন্তু কয়েক বছর ধরে হেমন্তর পায়ে ফুটবলের সুরভি নেই। মাঝে মাঝে মাঠের বাইরের নেতিবাচক খবরের সুবাদেই শিরোনামে আসেন বারবার।

এবারের লিগে হেমন্ত বসুন্ধরার জার্সিতে খেলছেন, সেটা অনেকের অজানা। কারণ খেলোয়াড়ের চূড়ান্ত তালিকায় নেই তাঁর নাম। মাঝখানে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ক্লাব থেকে বহিষ্কার হওয়ার উপক্রম হয়েছিল এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের। লিগের প্রথম পর্বের একটি ম্যাচেও মাঠে নামার সুযোগ হয়নি। অবশেষে গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে এসে লিগের দ্বিতীয় পর্বে হেমন্তর দেখা মিলল। তবে মিডফিল্ডার বা ফরোয়ার্ড হিসেবে নয়, মাঠে ফিরলেন রাইটব্যাক হিসেবে। রবিবার আবাহনীর বিপক্ষে একাদশে শুরুই করেছিলেন রাইটব্যাক পজিশনে। এর আগের ম্যাচেও শেখ জামালের বিপক্ষে বদলি নেমেছিলেন একই পজিশনে। বদলি নেমে কোচের আস্থার প্রতিদান দেওয়াতেই আবাহনীর বিপক্ষে একাদশে সুযোগ পাওয়া।

অনেক ঝড়ঝাপটা সামলে মাঠে ফিরতে পেরেছেন, এতেই হেমন্তর জীবনে খানিক বসন্ত। তাই কোনো পজিশনে খেলছেন, তা নিয়ে মোটেও ভাবতে রাজি নন, ‘যেকোনো পজিশনে খেলে হলেও ফিরতে চাচ্ছিলাম আমি। নীলফামারীতে শেখ জামালের বিপক্ষে আমি প্রথম মাঠে নামি সুশান্তের জায়গায়। সেই ম্যাচটা ভালো খেলি। এরপর কোচ আবাহনীর বিপক্ষে এই বড় ম্যাচেও আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। দলের স্বার্থে যেকোনো পজিশনেই এখন আমাকে খেলতে হবে। আমাদের দলের অনেকেই তা করছে। সবাই এটাকে ইতিবাচকভাবেই নিয়েছে যে, প্রতিভা থাকলে যেকোনো পজিশনেই ভালো করা সম্ভব।’

বসুন্ধরার স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন আক্রমণের পূজারি। তাঁর একাদশে সাধারণ প্রথাগত ডিফেন্ডার থাকে দুজন। বাকি দল সাজিয়ে থাকেন আক্রমণের ভাগের খেলোয়াড় নিয়ে। বিশেষ করে ফুলব্যাক হিসেবে দ্রুতগতির আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের বেশি পছন্দ স্প্যানিশের। হেমন্তের আগে রাইটব্যাক হিসেবে খেলেছেন জাতীয় দলের স্ট্রাইকার মাহবুবুর রহমান সুফিল। সে অসুস্থ হওয়ায় তাঁর জায়গায় হেমন্ত এসেছেন। সবকিছু পেছনে ফেলে সামনে তাকাচ্ছেন হেমন্ত, ‘সব মিলিয়ে হতাশার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। ক্লাবে একটা পর্যায়ে কোচ আমাকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। অনুশীলন থেকে বাইরে রাখেন। এরপর আমারও বোধোদয় হয় যে আমাকে ফিরতে হবে। আমি তখন দ্বিগুণ পরিশ্রম শুরু করি। অবশেষে অনেক পরিশ্রম করে কোচকে সন্তুষ্ট করেই ফিরতে পেরেছি। মনে হচ্ছে সামনের ম্যাচগুলোও একইভাবে ভালো করতে পারব।’