জমিয়ে রাখা রানগুলো সুদাসলে তুলবেন স্মিথ!

সেঞ্চুরির পথে দুর্দান্ত কিছু শট খেলেছেন স্মিথ। ছবি: এএফপি
সেঞ্চুরির পথে দুর্দান্ত কিছু শট খেলেছেন স্মিথ। ছবি: এএফপি
>

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন স্টিভ স্মিথ। দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এ অধিনায়ক। আগে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৯৭ রান তুলেছে অস্ট্রেলিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের টিভি চ্যানেল এনবিসির বানানো বিখ্যাত টিভি সিরিয়াল ‘দি এ টিম’ সহসাই ভুলে যাওয়ার কথা নয়। সেখানে দলনেতা কর্নেল জন স্মিথকে নিশ্চয়ই মনে আছে? দি এ টিম-এর সকল কাজের কাজী আরকি। মিশনে নেমে সতীর্থদের স্মিথ বলতেন, ‘আই লাভ ইট হোয়েন অ্যা প্ল্যান কামস টুগেদার।’ সাউদাম্পটনে আজ প্রস্তুতি ম্যাচে ১১৬ রানের ইনিংস খেলার পর একই কথা ভাবতে পারেন আরেক স্মিথ—স্টিভ স্মিথ!

ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার মাথার মুকুট। বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে সেখান থেকে আশ্চর্য পতন—১২ মাস নিষিদ্ধ। এই শাস্তিতে সঙ্গী হিসেবে ডেভিড ওয়ার্নার ও ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে (৯ মাস) পান সাবেক অধিনায়ক স্মিথ। বিশ্বকাপ দলে তাঁকে রাখা হবে কি না, এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে কয়েক পশলা বিতর্কও হয়েছে মাস দু-এক আগে। শেষ পর্যন্ত স্মিথ-ওয়ার্নারকে রেখেই বিশ্বকাপ দল গঠন করেছে অস্ট্রেলিয়া। আর স্মিথ যে এই বিশ্বকাপ ঘিরে আলাদা পরিকল্পনা করে রেখেছেন সেটি বোঝা যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচে।

অস্ট্রেলিয়ানদের আস্থা ফিরে পেতে নিজের সাধ্যের মধ্যে সম্ভাব্য সবকিছুই করবেন—নিষিদ্ধ থাকতে বলেছিলেন স্মিথ। একজন ব্যাটসম্যানের আস্থা ফিরে পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হলো রান করা, শুধু রান করা। স্মিথ এই রান করার পরিকল্পনায় অন্তত বিশ্বকাপের আগপর্যন্ত সফল। আইপিএল দিয়ে ফিরেছিলেন ক্রিকেটে। সেখানে ১২ ম্যাচে তিন ফিফটি দিয়ে স্মিথকে বিচার করা অনেকেই পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। স্মিথের সমস্ত আবেগ তো অস্ট্রেলিয়ার জার্সি ঘিরে, ওই হলুদ জার্সিতে ফিরে কেমন করেন সেটা ছিল প্রশ্ন।

২২, ৮৯, ৯১, ৭৬ ও ১১৬—এই হলো প্রশ্নের জবাব। ইংল্যান্ডে পা রাখার আগে নিউজিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। ওই তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচের দুটিতে সেঞ্চুরির সুবাস পেয়েছেন স্মিথ। এরপর বিশ্বকাপ খেলতে ইংল্যান্ডে এসে সাউদাম্পটনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে করলেন ম্যাচ জেতানো ৭৬। আর আজ সেই সাউদাম্পটনেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে পেলেন সেঞ্চুরি। ৩ ছক্কা ও ৮ চারে ১০২ বলে ১১৬ রানের ইনিংস দিয়ে স্মিথ যেন প্রতিপক্ষদের বার্তা দিলেন—সাবধান! আমি আগের মতোই আছি।

আর অস্ট্রেলিয়া? স্মিথের সেঞ্চুরিতে ভর করে ৯ উইকেটে ২৯৭ রান তুলেছে অ্যারন ফিঞ্চের দল। ফিঞ্চ তো শুধু কাগজে-কলমেই অধিনায়ক—মানে মোড়ক। তার মধ্যে স্মিথ যে দলের আসল নেতা তা বুঝতে পণ্ডিত হওয়ার দরকার নেই। জাতীয় দলে ফেরার পর স্মিথকে সবাই যেভাবে আপন করে নিয়েছেন সেটি কিন্তু তাঁর প্রতি সতীর্থদের ভালোবাসা ও আনুগত্যের প্রমাণ।

আর দলীয় পরিকল্পনা বিশেষ করে ২০১৯ বিশ্বকাপ ঘিরে অস্ট্রেলিয়ানরা কিন্তু ব্যাটিংয়ে তাঁদের প্রাথমিক পরিকল্পনায় সফল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ার্নার রান না পেলেও মিডল অর্ডার ও ফিঞ্চ নিজে মোটামুটি রানের দেখা পেয়েছিলেন। আজ ওয়ার্নারের ৪৩ ছাড়াও ন্যূনতম ৩০ রানের ইনিংস আছে আরও তিনটি। অর্থাৎ জায়গামতো জ্বলে ওঠার আগে ফুলকি ছড়িয়ে নিচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা। আর এই ফুলকি ছড়ানোয় ‘নেতা’ কে তা না বললেও চলে।

নিষিদ্ধ হওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে রানের ফুলঝুড়ি ছিল স্মিথের ব্যাটে। এত দিন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে না পারার কারণে যত রান জমে গেছে, সব এবার সুদে-আসলে তুলে ফেলবেন বলেই মনে হচ্ছে!