ম্যাথুসকে নিয়ে জয়াবর্ধনের আক্ষেপ

মাহেলা জয়াবর্ধনে। রয়টার্স ফাইল ছবি
মাহেলা জয়াবর্ধনে। রয়টার্স ফাইল ছবি

মাহেলা জয়াবর্ধনে আর কুমার সাঙ্গাকারা ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলেই বিদায় বলেছিলেন। গত চার বছর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট মানেই এই দুজনের বিরাট শূন্যতা। জয়াবর্ধনের হাত থেকে অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। কিন্তু সেটি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। অধিনায়কত্বটা যেন ‘মিউজিক্যাল চেয়ারে’ পরিণত হয়েছিল। ম্যাথুসের হাত থেকে দিনেশ চান্ডিমাল, থিসারা পেরেরা, লাসিথ মালিঙ্গা, চামারা কাপুগেদারা—বেশ কয়েকটি হাতেই ঘুরেছে লঙ্কান দলের নেতৃত্ব। এবারের ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার অধিনায়কত্বের ব্যাটন এখন দিমুথ করুণারত্নের হাতে। তিনি যে খুব অভিজ্ঞ সেটিও বলা চলে না। খেলেছেন মাত্র ১৮টি ওয়ানডে। অধিনায়কত্বের এই হাত বদল, কিংবা অধিনায়কত্ব নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা যথেষ্ট ভুগিয়েছে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটকে। জয়াবর্ধনে নিজে এই অবস্থার জন্য দায়ী করেন ম্যাথুসকেই।

সানডে টাইমসের কাছে সাবেক এই লঙ্কান অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমি আর সাঙ্গাকারা তাঁকে (ম্যাথুস) কেবল একটিই পরামর্শ দিয়েছিলাম, লঙ্কান ক্রিকেটের রাজনীতির কাছে হার না মানার পরামর্শ। তাঁর আরও শক্তিশালী নেতা হয়ে ওঠার দরকার ছিল, খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল। কিন্তু সে রাজনীতির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। সে বাইরের মানুষদের সিদ্ধান্ত নিতে দিয়েছে, হস্তক্ষেপ করতে দিয়েছে। নিজের খেলোয়াড়দের পাশেও দাঁড়াতে পারেনি।’
ম্যাথুসকে জয়াবর্ধনে তাঁর ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন, ‘আমি একটা কথাও বানিয়ে বলছি না। এমনকি এই কথাগুলো আমি ম্যাথুসকেও বলেছি, এবং সে এটা মেনেও নিয়েছে। রাজনীতির কাছে আত্মসমর্পণ না করলে হয়তো আজ এই অবস্থায় থাকতে হতো না ওকে। এই একটা ছাড়া ওর বিরুদ্ধে আমার আর কোনো অভিযোগ নেই।’

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লঙ্কান ক্রিকেটের রাজনীতি সম্পর্কেও একটা ধারণা দিয়েছেন জয়াবর্ধনে, ‘শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের প্রথম নিয়ম হলো, অধিনায়ক হলে আপনাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে এবং বাইরের কাউকে আপনার কাজে হস্তক্ষেপ করতে দেওয়া চলবে না। আমরা এভাবেই টিকে ছিলাম। কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। অনেক অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে আপনাকে। কিন্তু যদি আপনি শক্ত মানসিকতার হন, তাহলে এগুলো কোনো কিছুই আপনার বাধা হবে না। ম্যাথুস একজন অসাধারণ ক্রিকেটার, মানুষ হিসেবেও সে দুর্দান্ত। কিন্তু এই পরিস্থিতিগুলো সে ভালোভাবে সামলাতে পারেনি। ক্রিকেট বিশ্বকাপে ওরই অধিনায়ক হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু দোষটা আসলে ওরই।’

শুধু ম্যাথুস নয়, সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনে পরবর্তী যুগে লঙ্কান ক্রিকেটের কান্ডারি ভাবা হচ্ছিল যাকে, সেই দিনেশ চান্ডিমালকে নিয়েও একই অভিযোগ তাঁর, ‘আমার মনে হয়, চান্ডিমালও এই রাজনীতির আরেক শিকার। ম্যাথুসের মতো তাঁর সামনেও সুযোগ ছিল শক্তিশালী নেতা হয়ে ওঠার, দলের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেওয়ার।’

দিমুথ করুণারত্নেকে অধিনায়ক করে বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা। জয়াবর্ধনের দাবি, বিশ্বকাপে লঙ্কান থিঙ্কট্যাঙ্কের অংশ হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তাঁকেও। কিন্তু তিনি রাজি হননি। কারণটাও জানিয়েছেন তিনি। লঙ্কান বোর্ডের পরিকল্পনাহীনতার কারণেই তিনি দায়িত্ব নিতে রাজি হননি,‘আমাকে বেশ কয়েকবার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমার অন্য জায়গায় প্রতিশ্রুতি দেওয়া ছিল। তবে তার চেয়েও বড় ব্যাপার, দলে আমার ভূমিকা সম্পর্কেই আমি পরিষ্কার ছিলাম না। লঙ্কান ক্রিকেটের পুরো কাঠামো সম্পর্কে কথা বলার অধিকার না থাকলে শুধু দলের সঙ্গে আমাকে রাখার কোনো মানে নেই।’

১ জুন কার্ডিফের নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে শ্রীলঙ্কা।