শেষ ১০ ওভারে ব্যাট হাতে বিশ্বকাপ মাতাবেন কারা?

বিশ্বকাপে বড় পার্থক্য গড়ে দেবে শেষ দশ ওভারে ব্যাট হাতে পারফরম্যান্স। ফাইল ছবি
বিশ্বকাপে বড় পার্থক্য গড়ে দেবে শেষ দশ ওভারে ব্যাট হাতে পারফরম্যান্স। ফাইল ছবি
>

জস বাটলার, আন্দ্রে রাসেল, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, থিসারা পেরেরা, বেন স্টোকসদের মতো খ্যাতনামা হার্ড হিটাররাই বিশ্বকাপ মাতাবেন? নাকি আবির্ভাব হবে নতুন কোনো সুপারস্টারের?

শুরুর আগেই এই বিশ্বকাপের গায়ে অনেকে ‘রানপ্রসবা’ তকমা লাগিয়ে দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত রানপ্রসবা বিশ্বকাপের দেখা পাওয়া যাবে কি না, সেটি এখনই বলা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেলেও শেষ দশ ওভারে যে ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে চাইবে দলগুলো, সেটা নিশ্চিত। কাগজে–কলমে দলগুলোর শক্তিমত্তা যেমনই হোক, মাঠের ফলাফলে পার্থক্য গড়ে দেবে ‘ডেথ ওভারের’ পারফরম্যান্সই। বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯ শুরুর আগে তাই দেখে নেওয়া যাক, শেষ ১০ ওভারে ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে প্রস্তুত কারা।

২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ২০১৯ বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত, এই চার বছরের পারফরম্যান্সের হিসাব কষা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। ডেথ ওভারের ব্যাটিংয়ের সে পরিসংখ্যান বলছে, গত চার বছরে শেষ ১০ ওভারে রান তোলার দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে ইংল্যান্ড। এ সময়ে ডেথ ওভারে মোট ৬২ ইনিংসে ব্যাট করেছে ইংল্যান্ড। ইনিংসের এ অংশে গড়ে ৮৩.৫ রান তুলেছে তারা। অর্থাৎ ওভারপ্রতি ৮.৩৫ রান তুলেছে হার্ড হিটারে ভর্তি দলটি।

দ্রুততালে রান তোলার জন্য বলটাকে সীমানার বাইরে ফেলতে জানাটা জরুরি। সেখানেও এগিয়ে ইংল্যান্ড। ইনিংসের শেষভাগে এসে প্রতি ৬.২ বলে একটি করে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানেরা। গত চার বছরে ১২ বার ডেথ ওভারে ১০০–এর বেশি রান তুলেছে ইংল্যান্ড। শুধু জস বাটলার, বেন স্টোকস কিংবা মঈন আলী নন, প্রয়োজনের সময় টম কারেন, আদিল রশিদ কিংবা লিয়াম প্লাঙ্কেটরাও চার-ছয় হাঁকাচ্ছেন। ইংল্যান্ডকে যে অন্যতম ফেবারিট ধরা হচ্ছে, তার পেছনে অন্যতম কারণও হলো ইংলিশদের লম্বা ব্যাটিং লাইনআপ।

ইংলিশদের পরের স্থানটি দক্ষিণ আফ্রিকানদের। ফাফ ডু প্লেসি, ডেভিড মিলাররা ডেথ ওভারে ব্যাট চালিয়ে গড়ে ৭৯.৩ করে রান তুলেছেন। প্রতি ৬.৭ বলে একটি করে বাউন্ডারি মেরেছেন তাঁরা। দক্ষিণ আফ্রিকার পরেরই হাত ধরাধরি করে আছে দুই প্রতিবেশী দেশ নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। কিউই ব্যাটসম্যানেরা শেষ ১০ ওভারে গড়ে ৭৭.৮ রান তুলেছেন। প্রতিবেশীদের চেয়ে অস্ট্রেলিয়ানরা পিছিয়ে আছে দশমিক ৩ ব্যবধানে।

ইংল্যান্ডের পাশাপাশি ফেবারিট হিসেবে উচ্চারিত হচ্ছে যাদের নাম, সেই ভারত কিন্তু এদিক থেকে বেশ পিছিয়ে। রোহিত-কোহলিরা যেদিন ইনিংস বড় করতে পেরেছেন, সেদিন শেষ ১০ ওভারে বেশ বড় সংগ্রহই দাঁড় করিয়েছে ভারত। কিন্তু টপ অর্ডার ব্যর্থ হয়েছে—এমন ম্যাচে বেশির ভাগ সময়েই শেষ দিকে কাঙ্ক্ষিত রান তুলতে পারেনি ভারত দল। এর ছাপ রয়েছে পরিসংখ্যানেও। গত চার বছরে শেষ ১০ ওভারে গড়ে ৭৬.৬ করে রান তুলেছে ভারত।

শেষ দিকে ঝড় তোলার এসব কথাবার্তা অবশ্য খুব একটা স্বস্তি দেবে না বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। শেষ ১০ ওভারে সবচেয়ে কম রান তুলেছে যে দুটি দল, তাদের মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশ। ডেথ ওভারে গড়ে মাত্র ৬৭ রান তুলতে পেরেছে বাংলাদেশ। ইনিংসের যে পর্যায়ে এসে রানের গতি বাড়ানোর কথা, সেই সময়েই প্রতি ১৬ বলে একটি করে উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। ৮.৩ বলে একটি বাউন্ডারি হাঁকানো বাংলাদেশ চাইলে একদিক থেকে স্বস্তি নিতে পারে, কাগজে-কলমে ছক্কা মারায় বিখ্যাত ক্যারিবীয়রা (৮.৯) এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে তাদের চেয়েও। দুই দিক থেকেই বাংলাদেশের পেছনে আছে শ্রীলঙ্কা। শেষ ১০ ওভারে লঙ্কানদের গড় সংগ্রহ ৬৫.৭ রান। এক একটি বাউন্ডারি মারতেও দেড় ওভার (৯.২ বল) লাগছে তাদের।

শেষ ১০ ওভারে কাকে বল করতে ভয় পাবেন বোলারেরা? গত চার বছরে ডেথ ওভারে বোলারদের সবচেয়ে বেশি ‘জ্বালিয়েছেন’ রোহিত শর্মা। ডেথ ওভারে অন্তত ১০ ইনিংসে ব্যাট করেছেন, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেট ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মার। ১০ ইনিংসে প্রায় ২০০ স্ট্রাইক রেটে ৩১৩ রান করেছেন রোহিত। এই সময়ে প্রতি ৩.৬ বলে একটি করে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন রোহিত। বলপ্রতি বাউন্ডারি মারায় রোহিতকে টপকাতে পারেননি কেউ।

বোলারদের জন্য আরেক ত্রাস হতে পারেন ইংলিশ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান জস বাটলার। গত চার বছরে ডেথ ওভারে বাটলারের চেয়ে বেশি রান করতে পারেননি আর কেউ। ২৫ ইনিংসে ব্যাট করে ১৮১.১২ স্ট্রাইক রেটে ৯০২ রান করেছেন বাটলার। রানের দিক থেকে বাটলারের ধারেকাছেও কেউ নেই। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫১৭ রান আছে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের।

ব্যাট করতে নেমে শেষ ১০ ওভারে কোনো ব্যাটসম্যানের ১০০ এর বেশি রান করার ঘটনা গত চার বছরে মাত্র তিনবার দেখেছে ক্রিকেট। এই তিনবারের মধ্যে দুবারই করেছেন বাটলার। ২০১৫ সালে দুবাইতে পাকিস্তানের বিপক্ষে চতুর্থ ওয়ানডেতে ৪০ ওভার শেষে বাটলারের রান ছিল ১১ বলে ১২ রান। আর ইনিংস শেষে তাঁর সংগ্রহ দাঁড়িয়েছিল ৫২ বলে ১১৬! এই বছরই সেন্ট জর্জেসেও এ রকম তাণ্ডব তুলেছিলেন বাটলার। উইন্ডিজ বোলারদের বিপক্ষে শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৩৫ বলে ১০৫ রান তুলেছিলেন, ইনিংসের শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে করেছিলেন ৭৭ বলে ১৫০ রান!

তাঁরা ছাড়াও শেষ দিকে ঝড় তুলতে পারেন আরও কিছু ব্যাটসম্যান। কিছুদিন আগেই আইপিএল মাতিয়ে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেল, ভারতের হার্দিক পান্ডিয়া, ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস, অস্ট্রেলিয়ার মার্কাস স্টয়নিসদের ভয়ে থাকেন অধিকাংশ বোলার। তবে এরা ছাড়াও নিজেদের দিনে নিউজিল্যান্ডের জিমি নিশাম, শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা কিংবা আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবীরাও কম যান না। কে জানে, বাংলাদেশের সাব্বির রহমান বা মোসাদ্দেক হোসেনও হয়ে যেতে পারেন শেষ ওভারের রাজা!