বিশ্বকাপেই সেরাটা ফিরে পাবেন মোস্তাফিজ

মোস্তাফিজুর রহমান। প্রথম আলো ফাইল ছবি
মোস্তাফিজুর রহমান। প্রথম আলো ফাইল ছবি
>

ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেই ফিরে পাওয়া যাবে হারানো মোস্তাফিজকে। বাঁহাতি পেসারের সাম্প্রতিক বোলিং দেখে এমনই আশা বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের

২০১৯ বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দলে ‘এক্স ফ্যাক্টর’ কে হবেন? সংবাদ সম্মেলনের একেবারে শেষ প্রশ্ন। এর আগ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রশ্নে কোর্টনি ওয়ালশ যা যা বললেন, ওই এক প্রশ্নে যেন সেসবের উপসংহারে পৌঁছে যেতে চাইলেন প্রশ্নকর্তা বিদেশি সাংবাদিক।

শুনে ওয়ালশের গম্ভীর মুখেও হাসি ছড়িয়ে পড়ল। প্রশ্নটাতে খুব মজা পেয়েছেন মনে হলো। উত্তর দেওয়ার ভঙ্গিতেও মজা নেওয়ার ভাব, ‘এটা তো আমাদের গোপন অস্ত্র। আমরা চাই না প্রতিপক্ষ এটা জেনে যাক। কারণ তারা তখন আমাদের টার্গেট করা শুরু করবে। দলে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ই আছে, যারা খেলাটা আমাদের দিকে নিয়ে আসতে পারে।’

ওয়ালশ না বললেও ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষরা বাংলাদেশ দলের কাদের নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা আঁটছে, সেটি অনুমান করা কঠিন কিছু নয়। পেস বোলারদের মধ্যে প্রথমেই থাকবেন মোস্তাফিজুর রহমান। তাঁর উইকেট শিকারি কাটারের প্রতিরোধক বিশ্বকাপের সব কোচের ল্যাপটপেই আলাদা ফোল্ডার করে রাখার কথা। কিন্তু বাঁহাতি এই পেসারকে নিয়ে একটা প্রশ্ন যে বাংলাদেশের ক্রিকেট আবহেই ছড়িয়ে পড়েছে কিছুদিন ধরে। মোস্তাফিজের বোলিং কি আর আগের মতো আছে!

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে প্রশ্নটার জবাব মোস্তাফিজ আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজেই কিছুটা দিয়ে দিয়েছেন। এরপরও কারও মনে সংশয় থাকলে কার্ডিফে ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচের খোঁজ নিতে পারেন। বলে ছিল দুরন্ত গতি। লাইন-লেংথ নিখুঁত। মানসিকতায় উইকেট সংহারী ক্ষুধা। যেন বহুদিন পর আসল মোস্তাফিজকে ফিরে পেল বাংলাদেশ। ওয়ালশ আশাবাদী, বিশ্বকাপে মোস্তাফিজের অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনা যাবে আরও সশব্দে।

মোস্তাফিজকে নিয়ে এই আশাটা ওয়ালশের সব সময়ই। যখন কাঁধের চোটে পড়লেন, পেস বোলিং কোচ তখনই বলেছিলেন, এটা পুরো ভালো হয়ে তাঁর আগের অবস্থায় আসতে বেশ সময় লাগবে। বোলিং দেখে সেই ওয়ালশেরই আবার এখন মনে হচ্ছে, মোস্তাফিজ তাঁর সংগ্রামী সময়টা পেরিয়ে এসেছেন, ‘অনেকে বলছেন, মোস্তাফিজ আগের অবস্থায় আর আসবে না। কিন্তু আমি বলি, ও সঠিক পথেই এগোচ্ছে। যদি সামগ্রিক মানসিকতা এবং শারীরিক ফিটনেসের কথা বলেন, তাহলে সম্ভবত এখনই ও আগের অবস্থায় আসার মতো সেরা সময়ে আছে। এটা যেমন ওকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে, ফিরে আসবে তার সহজাত বিষয়গুলোও। আমার বিশ্বাস, এই বিশ্বকাপেই মোস্তাফিজ তার সেরাটা ফিরে পাবে।’

কাফ মাসলের ছোটখাটো একটা সমস্যায় মোস্তাফিজ এখনো ভুগছেন। কিন্তু আধুনিক ক্রিকেট পেসারদের এ রকম ছোটখাটো চোট দাবি করেই। শরীরে এ রকম দু-একটি সমস্যা না থাকলে আবার পেসার কিসের! ওয়ালশ হয়তো সে কারণেই তেমন পাত্তা দিচ্ছেন না এসবকে। বিশ্বকাপে মোস্তাফিজকে ৯০ ভাগ ফিট পেলেই খুশি ক্যারিবীয় গ্রেট, ‘মোস্তাফিজ বিশ্বকাপে তার সেরাটা দিতে পারলে সেটা তার এবং বাংলাদেশ দলের জন্যও হবে দারুণ ব্যাপার। এখন ওর সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে। টুকটাক সমস্যা থাকলেও সে ৯০-৯৫ ভাগ ফিট থাকলেই আমি খুশি। সে সব সময়ই চায় খেলাটায় আরও উন্নতি আনতে। কাজের প্রতি তার নিবেদন অসাধারণ।’

মোস্তাফিজের বোলিংয়ের বাড়তি তোপ বোঝা গেছে কাল ওভালের নেট প্র্যাকটিসেও। গতি, বাউন্স এবং নিয়ন্ত্রণ—সবই নিখুঁত। সবই ঝামেলায় ফেলেছে ব্যাটসম্যানদের। কালকের এই বোলিংয়ের পর যদি কাফ মাসলের সমস্যা আর না বাড়ে, আজ সবকিছুর মাত্রা আরেকটু বাড়িয়েই বোলিংটা করবেন মোস্তাফিজ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কালকের ম্যাচের জন্য সেটাই হবে তাঁর চূড়ান্ত প্রস্তুতি।

কিন্তু মোস্তাফিজকে নিয়ে এত কিছু বলে কোর্টনি ওয়ালশকে পরোক্ষে ওই বিদেশি সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরটাই দিয়ে দিলেন! তুরুপের তাস হতে পারেন, এ রকম ক্রিকেটার হয়তো কয়েকজনই আছেন বাংলাদেশ দলে। কিন্তু ইংল্যান্ডের এই কন্ডিশনে ‘এক্স ফ্যাক্টর’ কি মোস্তাফিজই নন!