'সুখহাসি আরো হবে উজ্জ্বল'

কবি নির্মলেন্দু গুণ প্রথম আলোয় লিখেছেন, ‘এই খেলাটা আমার চেয়ে কে বেশি বোঝেন, আমি জানি না।’ আমি বলব, ক্রিকেট এবং নারীর মন আমার চেয়ে কে কম বোঝেন, আমি জানি না। আর উৎপল শুভ্র এবার বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা থেকে বিরত থেকেছেন। ২৭ মে প্রথম আলোয় তিনি লিখেছেন, ‘“ফ্রিথ” হওয়ার কী দরকার!’ উইজডেনের মাসিক পত্রিকায় ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপের আগে সম্পাদক লেখক ডেভিড ফ্রিথ নাকি লিখেছিলেন, বিশ্বকাপের পরে ভারতের উচিত হবে আবার আইসিসি কোয়ালিফায়িং ম্যাচ খেলতে যাওয়া। সেবারই কপিল দেবের নেতৃত্বে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়। তারপর এক পাঠক ওই পত্রিকায় চিঠি লেখেন, ফ্রিথকে বলেন, নিজের কথা নিজেই গিলে ফেলো। পরের সংখ্যায় ফ্রিথ সেই চিঠি ছাপিয়ে দেন। তিনি তাঁর লেখা যে কাগজে মুদ্রিত হয়েছিল, সেই কাগজটা খাচ্ছেন, সে রকম একটা ছবিও প্রকাশ করেন। এসব বলে এবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে কে চ্যাম্পিয়ন হবে বলা থেকে কৌশলে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন উৎপল শুভ্র।

আমরা যাঁরা শুধুই সমর্থক, মোটেও বোদ্ধা নই, আমাদের এত সব দায় নেই। আগে যখন বাংলাদেশ খেলত না, তখন তো এই দেশে বিশ্বকাপ ক্রিকেট বেশ একটা গরমাগরম ব্যাপারই ছিল। অনেকটা বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল নিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় আমরা মেতে থাকি। দেশ হলুদ আর নীল–সাদা রঙে ছেয়ে যায়।

আগে আমাদের ক্রিকেট বিশ্বকাপও সে রকম ছিল।

পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি

এ জীবন মন সকলি দাও,

তার মতো সুখ কোথাও কি আছে?

আপনার কথা ভুলিয়া যাও।

পরের কারণে মরণেও সুখ...

এই দেশের মানুষ আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের জন্য কয়েকজন করে মারাও যায়!

পরের কারণে মরণেও, আহা, কী সুখ! কিন্তু বাংলাদেশ বিশ্বকাপে গিয়ে এখন ব্যাপারটা হয়ে গেছে দেশাভিমান, প্রবল জাতীয়তাবাদী জোশ।

দেশ জিতলে আমরা আত্মহারা, দেশ হেরে গেলে আমাদের মন খারাপ; সাকিব কাঁদলে আমরা কাঁদি। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘সুখহাসি আরো হবে উজ্জ্বল,/ সুন্দর হবে নয়নের জল।’ ক্রিকেটের কারণে আমাদের ব্যক্তিগত সুখ–দুঃখগুলো সমষ্টির হয়ে ওঠে, ওই অশ্রুই সবচেয়ে সুন্দর, এই হাসিই মর্ত্যের বুকে স্বর্গের হাসি। তাই ক্রিকেটকে বলি, তোমার আপন হাতের দোলে দোলাও আমার হৃদয়।

ইংল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা খেলা দেখেছি। হুম। বেন স্টোকসের এক হাতে ধরা ক্যাচটা অলৌকিক। অতিমানবিক! ইউ ক্যান নট ডু দ্যাট, বেন। তবে আমাদের ম্যাশও কিন্তু মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে এক হাতে একটা দর্শনীয় ক্যাচ ধরেছিলেন এশিয়া কাপে, তাতেই শোয়েব মালিক আউট, বাংলাদেশ ফাইনালে। বেশি দিন আগের কথা নয়, সেপ্টেম্বর ২০১৮।

আমাদের বিশ্বকাপ উপভোগে এটাই হবে সমস্যা। নিজের সন্তান যদি মঞ্চে থাকে, নাটক আর উপভোগ করা হয় না, চোখ থাকে শুধু সন্তানের ওপরে। আমরা মন খুলে সব খেলা উপভোগ করতে পারব না, বারবার মনে হবে, মাশরাফির চোট সেরেছে তো, তামিম ফিট তো, মোস্তাফিজ সেই প্রথম দিককার মোস্তাফিজ হয়ে উঠছেন তো!

আমাদের বিশ্বকাপ এবার হবে স্মরণীয়তম, এটা তো আশা করাই যায়। চলুন, উপভোগ করি।