বিলেতে ক্রিকেটারদের ঈদ

তামিম, মাশরাফি, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক ও সাকিব। ছবি: মুশফিকুর রহিমের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে
তামিম, মাশরাফি, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক ও সাকিব। ছবি: মুশফিকুর রহিমের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে
>দেশে থাকলে ক্রিকেটাররা ঈদ উদ্‌যাপন করেন যে যাঁর পরিবারের সঙ্গে। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপ সতীর্থদের সঙ্গে ঈদ করার সুযোগ করে দিল তাঁদের।

নীলচে রঙের বিশাল বাসটা যেন স্বপ্নের বাহন—যেটি শহর থেকে শহর ঘুরছে, ঘুরবে বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে। অবশ্য বাসটা দেখে কখনো কখনো ভ্রম হয়—এটা টিম বাস তো? বিশেষ করে দল যখন এক টিম হোটেল থেকে আরেক টিম হোটেলে রওনা দেয়। বাসে খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে নারী–শিশুও। দেশে থাকলে বাংলাদেশ টিম বাসে এ দৃশ্য সাধারণত দেখা যায় না।

যেহেতু সফরটা দীর্ঘ, খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফদের বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অনুমতি দিয়েছে পরিবার সঙ্গে রাখতে। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তাঁর পরিবার আছে আয়ারল্যান্ড সিরিজ থেকেই। ওয়ানডে ক্রিকেটের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের মায়েরও আসার কথা যুক্তরাজ্যে। কার্ডিফে দেখা গেল মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন ইংল্যান্ডে নিয়ে এসেছেন তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে। প্রধান কোচ স্টিভ রোডস, ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি, ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়নেও সঙ্গে রেখেছেন পরিবার।

মাশরাফি বিন মুর্তজার কাছে জানা গেল, তাঁর পরিবারের ইংল্যান্ডে আসার কথা ৩০ মে। মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহর পরিবারও আসবে একই তারিখে। তামিম ইকবাল অবশ্য খেলার সময় কখনো পরিবার সঙ্গে রাখেন না। এবারও রাখছেন না।

লন্ডন থেকে এই ছবি ইনস্টাগ্রামে দিয়েছেন সাকিব আল হাসান
লন্ডন থেকে এই ছবি ইনস্টাগ্রামে দিয়েছেন সাকিব আল হাসান

যেহেতু বেশির ভাগ জ্যেষ্ঠ খেলোয়াড়ের পরিবার এসেছে ইংল্যান্ডে, বিদেশ বিভূঁইয়ে এবারের ঈদটা খারাপ কাটার কথা না তাঁদের। বেশির ভাগ খেলোয়াড়ের বিদেশে ঈদ করার অভিজ্ঞতা যদিও নতুন নয়। বরং অন্যবারের তুলনায় এবার বিদেশে ঈদটা দুর্দান্ত কাটার কথা। সঙ্গে পরিবার তো থাকছেই, আর লন্ডনে আছে প্রচুর বাংলাদেশি—দেশের ‘ফিল’ পেতে কোনো সমস্যা নেই! তবে মাশরাফির ভাবনায় ঈদের চেয়ে বেশি কাজ করছে খেলা। ইংল্যান্ডে ঈদ যদি হয় ৫ জুন, ঠিক ওই দিনই বাংলাদেশকে খেলতে হবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ঈদ হতে পেরে ভেবে ম্যাচটা দিবারাত্রির করেছেন আয়োজকেরা। বাংলাদেশ দলকে হয়তো সকালে ঈদের নামাজ পড়ে দুপুরে খেলতে যেতে হবে মাঠে। কার্ডিফে এক আড্ডায় ঈদ প্রসঙ্গ উঠলে মাশরাফি বলছিলেন, ‘ঈদ নিয়ে কি এত চিন্তাভাবনার সময় আছে? সবার মাথায় ম্যাচ। শুরুতে আবার সব কঠিন প্রতিপক্ষ। তবে পরিবার সঙ্গে থাকবে অনেকের, উৎসবের সময় দেশের বাইরে থাকলে যতটা খারাপ লাগার কথা, এবার হয়তো তা হবে না।’

দেশের বাইরে একসঙ্গে ঈদ করলে কি জুনিয়রদের সালামি দেওয়ার রেওয়াজ আছে বাংলাদেশ দলে? গত বুধবার কার্ডিফের হোটেল পার্ক প্লাজার লবিতে যখন তামিম ইকবালকে প্রশ্নটা করা হলো, বাঁহাতি ওপেনার মুচকি হাসলেন, ‘না, আমাদের এভাবে তো একসঙ্গে খুব একটা ঈদ করা হয় না। আর দলের সিনিয়র–জুনিয়র সবাই সালামি দিয়েই অভ্যস্ত।’ দলের তরুণ সদস্য মেহেদী হাসান মিরাজকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, এবার ঈদে মাশরাফি–সাকিবদের কাছ থেকে সালামি নেবেন না? মিরাজ এমনভাবে তাকালেন, যেন এর চেয়ে মজার প্রশ্ন আর শোনেননি! সতীর্থদের তুলনায় বয়সে যতই ‘ছোট’ হন, ক্রিকেটার হিসেবে তিনি তো প্রতিষ্ঠিত। বাড়িতে ঈদ করলে পরিবারে তাঁকেই বেশি সালামি দিতে হয়। আর এখানে তিনি নেবেন সালামি! ‘সালামির ব্যাপারে পরে বলব’—লাজুক হাসেন ২১ বছর বয়সী অলরাউন্ডার।

ক্রিকেটারদের মাথায় এখন ম্যাচের ভাবনা
ক্রিকেটারদের মাথায় এখন ম্যাচের ভাবনা

নিউজিল্যান্ডের ঘটনার পর ক্রিকেটাররা একসঙ্গে ঈদের নামাজ পড়তে যাবেন কি না, এটা নিয়ে অবশ্য অনিশ্চয়তা আছে। ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার পর এখন জুমার নামাজে পর্যন্ত যেতে দ্বিধায় ভোগেন ক্রিকেটাররা। অনেক সময় মাঠেই আদায় করেন নামাজ। দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ অবশ্য বললেন, ঈদগাহে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁরা আয়োজকদের জানিয়েছেন এবং সে অনুযায়ী নিরাপত্তাব্যবস্থাও চাওয়া হয়েছে। শুধু নিরাপত্তার ব্যাপারটাই নয়, আরও একটি বিষয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচের আগে খেলোয়াড়েরা সাধারণত নিজেকে সবকিছু থেকে গুটিয়ে নেন। মনোযোগ শুধুই ম্যাচে রাখতে একপ্রকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এখন ঈদের দিন যদি ম্যাচ থাকে, উৎসবে যোগ দেওয়া মাশরাফিদের কঠিনই হয়ে যাবে। উৎসব যদি করতেই হয়, তাঁরা সেটি করতে চান একবারে ম্যাচ জিতে।

২০০৩ বিশ্বকাপে ডারবানের সেই দুঃসহ স্মৃতি নিশ্চয়ই ভোলেনি বাংলাদেশ। ২০০৩ সালের ঈদুল আজহা বাংলাদেশের কাছে বিষাদে পরিণত হয়েছিল কানাডার মতো দলের কাছে হেরে! পরাজিত ওই দলের একজনই আছেন বর্তমান দলে—মাশরাফি। তিক্ত সেই অভিজ্ঞতা থেকে অধিনায়ক চান লন্ডনের এ ঈদ অন্তত স্মরণীয় করে রাখতে।