ধর্ষণের অভিযোগ, নেইমারের দাবি ফাঁদে ফেলা হচ্ছে তাঁকে

ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নেইমার। ছবি: এএফপি
ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নেইমার। ছবি: এএফপি
>ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার একদিন পর একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন নেইমার। কোপা আমেরিকার প্রস্তুতির ব্যস্ততার মাঝেও ইনস্টাগ্রামে এক ভিডিও প্রকাশ করেছেন। সেখানে দাবি করেছেন, ফাঁদে ফেলা হচ্ছে তাঁকে

শনিবার ব্রাজিলের গণমাধ্যমগুলোতে খবর বেরোয়, গত মাসে প্যারিসে এক নারীকে ধর্ষণ করেছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার। ধর্ষণের শিকার নারী নিজেই সাও পাওলো পুলিশের কাছে নেইমারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও আজ রোববার নেইমার মুখ খুলেছেন। ধর্ষণের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে নেইমার বলেছেন, তাঁকে ফাঁদে ফেলা হচ্ছে।

নিজের সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন নেইমার। এই বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত অভিযোগকারী নারীর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে তাঁর যেসব খুদে বার্তা আদান-প্রদান হয়েছে, সেগুলো মিলিয়ে এই ভিডিওটি বানিয়েছেন। ফাঁদে ফেলার জন্যই যে এসব হচ্ছে, সেটির প্রমাণ হিসেবেই এই ভিডিও শেয়ার করেছেন বলেও জানিয়েছেন নেইমার।

অভিযোগকারী নারী সাও পাওলো পুলিশকে জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে খুদে বার্তা আদান-প্রদানের পর ফ্রান্সে নেইমারের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। গাল্লো নামে পিএসজি তারকার এক প্রতিনিধি তাঁকে প্যারিসে আসার টিকিট কিনে দেন এবং হোটেলে থাকার ব্যবস্থাও করেন। অভিযোগকারী নারীর ভাষ্য, নেইমার ‘পুরো মাতাল’ হয়ে হোটেলে আসেন এবং তারা ‘একজন আরেকজনকে স্পর্শ করলেও একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে নেইমার আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন এবং তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন’। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ঘটনার দুদিন পর প্যারিস ছাড়েন সেই নারী। মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় তখন প্যারিসের পুলিশের কাছে অভিযোগ করেননি।

এ অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন ব্রাজিল ও পিএসজি তারকা নেইমার। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে নেইমার বলেছেন, ‘ওই নারীর সঙ্গে আমার যেসব কথোপকথন হয়েছে, তার পুরোটাই আমি শেয়ার করছি। আমাদের মধ্যে কী ঘটেছে সেটি প্রকাশ্যে আনা জরুরি। সে কারণেই এই ভিডিওটি শেয়ার করছি আমি।’

ঘটনার দিন যা ঘটেছে সেটিকে ‘নারী-পুরুষের স্বাভাবিক সম্পর্ক’ বলেই দাবি করেছেন ২৭ বছর বয়সী নেইমার, ‘সেদিন যা হয়েছিল, সেটি চার দেয়ালের মধ্যে একজন নারী ও পুরুষের স্বাভাবিক সম্পর্ক ছাড়া আর কিছুই নয়। সব নারী-পুরুষের মধ্যেই এই সম্পর্ক হয়। এমনকি ঘটনার পরদিনও আমাদের মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাক ছিল, আমরা একে অপরকে খুদে বার্তাও পাঠিয়েছি।’

ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় তিনি যে ব্যথিত হয়েছেন, সেটিও বলেছেন নেইমার, ‘আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি খুবই গুরুতর অভিযোগ। এমন অভিযোগে আমি বিস্মিত হয়েছি। এমন অভিযোগ শোনা সত্যিই কষ্টের, কারণ যারা আমাকে চেনেন, তারা আমার চরিত্র সম্পর্কে জানেন। আমি এমন কিছু করতে পারি না, এটাও জানেন তারা।’

এরপরই নেইমার বলেছেন, ফাঁদে ফেলা হচ্ছে তাঁকে, ‘এটা পুরোটাই একটা ফাঁদ ছিল, এবং আমি সেই ফাঁদে পা দিয়েছি। তবে এই ঘটনা আমার ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা হয়ে থাকবে।’

শুধু নেইমার নন, এমন অভিযোগে তাঁর পরিবারও যে ব্যথিত, সেটিও জানিয়েছেন কোপা আমেরিকা খেলতে ব্রাজিলে থাকা নেইমার, ‘শুধু আমি নই, এই ঘটনা আমার পুরো পরিবারকে কষ্ট দিয়েছে। আমার পরিবার আমাকে এমন শিক্ষা দেয়নি।’

এর আগে নেইমারের বাবাও বলেছিলেন, এটি একটি সাজানো ঘটনা। তাঁর ছেলেকে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে, এমন প্রমাণ তাঁর হাতে আছে বলেও জানিয়েছেন। ধর্ষণের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে নেইমার সিনিয়র বলেছেন, অভিযোগকারী নারীর সম্মতিতেই তাঁর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক হয়েছিল নেইমারের। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর সেই নারীর আইনজীবী এখন নেইমারকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করছেন। ব্রাজিলের একটি টিভি চ্যানেলকে নেইমার সিনিয়র বলেছিলেন, ‘সময়টা কঠিন। দ্রুত সত্য জানাতে না পারলে এটা আরও বড় হবে। সেই নারীর সঙ্গে নেইমারের হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা প্রকাশের প্রয়োজন হলে আমরা তা করব।’

নেইমার সিনিয়রের দাবির একদিন পরেই ওই নারীর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা প্রকাশ্যে আনলেন নেইমার। ধর্ষণের অভিযোগ সত্য না কি তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে সেটি তদন্ত শেষের আগে জানার উপায় নেই। তবে মাঠে ও মাঠের বাইরে সময়টা সত্যিই ভালো যাচ্ছে না নেইমারের। সপ্তাহখানেক আগেই জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব হারিয়েছেন। এর আগে পিএসজি ফ্রেঞ্চ কাপের ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর এক সমর্থকের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির মধ্যে ঘুষি বাগিয়েও তেড়ে গিয়েছিলেন নেইমার।

আরও পড়ুন: