অভিনন্দন সাকিব আল হাসান

নির্মলেন্দু গুণ
নির্মলেন্দু গুণ

আমার ক্রিকেটসমগ্র বইটি আজ থেকে আট বছর আগে প্রকাশিত হয়েছিল। গত আট বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের প্রত্যাশিত সাফল্য আসেনি, এ কথা ঠিক। কিন্তু ৫০ ওভার বা ২০ ওভারের ক্রিকেটে আমাদের একটা বটমলাইন তৈরি হয়েছে। সীমিত ওভারের এক দিনের ক্রিকেট ম্যাচে (ওডিআই ফরম্যাটে) বাংলাদেশ এখন বিশ্বের যেকোনো দেশের জন্যই হুমকিস্বরূপ।

চলতি ২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের তৃতীয় ম্যাচে (বাংলাদেশের জন্য প্রথম এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য দ্বিতীয়) ২ জুন, শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পর বিশ্বের ক্রিকেট বিশ্লেষকেরা নড়েচড়ে বসেছেন।

বাংলাদেশ এবার বিশ্বকাপে একটির বেশি ম্যাচ জিতবে না, তা-ও বড়জোর জিতবে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে, বিশ্বকাপের শুরুতে বাংলাদেশ সম্পর্কে অযাচিতভাবে এরূপ বিরূপ মন্তব্য যিনি করেছিলেন, সেই ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হা হা হা। খুব মজা পেলাম।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জিতবে, জয় দিয়েই শুরু হবে আমাদের চলতি বিশ্বকাপ, এ কথা লিখেছিলাম আমি। আমার ধারণা সঠিক বলে প্রমাণিত হওয়ায় আমি খুশি হয়েছি। তবে ম্যাচটি যে এতটা ক্লোজ ম্যাচ হবে, তা ভাবিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আমাদের ব্যাটিং বিশ্বমানের হয়েছে। বোলিংও চলেবুল, কিন্তু ফিল্ডিং ছিল খুবই নিম্নমানের। মাধ্যাকর্ষণের টানে আকাশ থেকে মাটিতে নামার পথে বলগুলোর একটিও আমরা তালুবন্দী করতে পারিনি। ওই দিকটায় আমাদের আরও দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

উইকেটকিপার হিসেবে মুশফিকুর রহিম কিছু স্টাম্পিং মিস করেছেন। অন্তত তিনটি বাউন্ডারি প্রতিপক্ষ পেয়েছে মুশফিকের ভুলে। আমি মনে করি ফর্মে থাকা লিটনকে উইকেট কিপিংয়ের ভার দিলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে।

শুরুতেই বলেছি, আমার ক্রিকেটসমগ্র বইটির প্রথম সংস্করণ শেষ হয়নি। এই বইয়ের উৎসর্গপত্রটি ছিল এ রকম: যাঁরা ক্রিকেট খেলেন, যাঁরা ক্রিকেট লেখেন ও যাঁরা ক্রিকেট ভালোবাসেন-ক্রিকেটসমগ্র তাঁদের জন্য।

আলোচ্য গ্রন্থের প্রচ্ছদটি আমি নিজেই করেছিলাম। আমার প্রিয় সব বইয়ের প্রচ্ছদই আমি নিজের পরিকল্পনামতো তৈরি করি। মূল আইডিয়াটা থাকে আমার। ওই আইডিয়াটাকে মুদ্রণযোগ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল সাপোর্ট প্রফেশনাল প্রচ্ছদকারদের কাছ থেকে নিয়ে থাকি আমি। ক্রিকেটসমগ্র বইয়ের ফ্রন্ট ও ব্যাক কভারে আমি বিশ্ব ক্রিকেটের উল্লেখযোগ্য ৪০ জনের ছবি ছেপেছিলাম। সেখানে বাংলাদেশের প্রতি কিছুটা পক্ষপাত ছিল আমার। সেই কারণে আমি বাংলাদেশের চারজনের ছবি ব্যবহার করেছিলাম। সেই চারজন হলেন আকরাম খান, হাবিবুল বাশার, মোহাম্মদ আশরাফুল ও সাকিব আল হাসান। আশরাফুল যে এমন করুণভাবে ক্রিকেট থেকে ছিটকে পড়বেন, কে জানত তা? ১৯৯ ম্যাচ খেলে, ২৫০ উইকেট এবং ৫০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করে সাকিব আল হাসান চলতি বিশ্বকাপের শুরুতেই আমাদের বুঝিয়ে দিলেন, কেন বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার তিনি। ধন্যবাদ সাকিব। আপনাকে অভিনন্দন।