সৌম্য সরকার

নাম

সৌম্য সরকার

জন্ম

ফেব্রুয়ারি ২৫, ১৯৯৩, সাতক্ষীরা

ধরন

ওপেনিং ব্যাটসম্যান

অভিষেক

বনাম জিম্বাবুয়ে, ডিসেম্বর ০১, ২০১৪

২০১৫ বিশ্বকাপ। বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। বাংলাদেশ হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরছে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার। বেশ কয়েকজনকে দিয়ে চেষ্টা করে দেখা হয়েছে বটে, তবে ঠিক সুবিধা করে উঠতে পারেননি কেউই। এমনই এক পরিস্থিতিতে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হলো সৌম্য সরকারকে, যিনি একজন ওপেনার এবং মাঝেমধ্যে ডিবলি-ডবলি পেসে দলকে সাহায্য করতে জানেন। সেই সৌম্যই এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের কত বড় ভরসার নাম!

জন্মগতভাবে সৌম্য ঠিক বাঁহাতি ছিলেন না। সৌরভ গাঙ্গুলি এবং ব্রায়ান লারাকে দেখেই হঠাৎ একদিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, বাঁহাতিই হতে হবে। ব্যস, সেদিন থেকে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বনে গেলেন সৌম্য। তবে বোলিংটা ডান হাতে বহাল তবিয়তে রইল।

২০০৬ সালে কোচ আখিনুর জামান অদ্ভুত এক সমস্যার মধ্যে পড়লেন। বিকেএসপিতে তাঁর সবচেয়ে পছন্দের ছাত্রদের একজন খেলাধুলা ছেড়ে দিয়ে বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে শিক্ষক বনে যেতে চায়! কেন? বাসা থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে থাকাটা সে একদমই সহ্য করতে পারছে না! শেষ অবধি অবশ্য সৌম্যকে বিকেএসপিতেই থেকে যেতে হয়েছিলেন, আর ভাগ্যের পরিবর্তনের শুরুটাও হলো সেখানেই।

২০১২ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে কুয়েতের বিপক্ষে ১৩৫ বলে ২০৯ করেছিলেন সৌম্য। সেখানেই প্রথম নজরে আসা। এরপর অবশ্য আরেকবার শিরোনাম হয়েছিলেন ২০১২ যুব বিশ্বকাপে অস্ট্রেলীয় উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান জিমি পিয়ারসনকে মানকাড করে।

২০১৩ সালের নভেম্বরে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে ডাক পেয়েছিলেন বটে, তবে সুযোগ হয়ে ওঠেনি মাঠে নামার। তবে নজরে ছিলেন বরাবরই। ২০১৪ সালের মে মাসে বাংলাদেশের তখনকার কোচ চণ্ডিকা হাতুরুসিংহে সৌম্যকে। দ্রুতই জাতীয় দলের দরজা খুলে গেল তাঁর জন্য। ওই যে, একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার ভীষণই দরকার বাংলাদেশের।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকটাও হয়ে যায় তাঁর। বোলিং না করলেও ব্যাট হাতে ১৮ বলে ২০ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে জানান দিয়েছিলেন নিজের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের। তবে লাইমলাইটে এলেন বিশ্বকাপের মঞ্চেই, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আগ্রাসী এক ফিফটি, সঙ্গে ফিল্ডিংয়ে চার ক্যাচ নিয়ে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ক্যাচের রেকর্ডে নাম বসালেন ভারতের মোহাম্মদ কাইফের পাশে। তবে সেবার সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছিল তাঁর ‘পেরিস্কোপ শট’। এই পেরিস্কোপই এক সময় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য ছিল লজ্জার। সৌম্য সেটিকে বিস্ময়কর গৌরবে পরিণত করেন।

২০১৫ বিশ্বকাপটা অসাধারণ না গেলেও একেবারে মন্দ কাটেনি সৌম্যের, ৬ ম্যাচে এক ফিফটিসহ ২৯.১৬ গড়ে করেছিলেন ১৭৫ রান। তবে নিজের সেরাটা বোধ হয় লুকিয়ে রেখেছিলেন বিশ্বকাপ পরবর্তী সিরিজগুলোর জন্য।

পাকিস্তান, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে হোম সিরিজে একে একে পরাজিত করে বাংলাদেশ। আর সেই জয়ের পথে ৯ ম্যাচে ৭১ গড়ে সৌম্য তোলেন ৪৯৭ রান। স্ট্রাইকরেটও দুর্দান্ত, ১০৮! ‘পেরিস্কোপ শট’কে রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন তত দিনে। মরকেল-রাবাদার আগুনে বোলিংয়ের সামনে যেভাবে স্রেফ ‘হ্যান্ড-আই কোঅর্ডিনেশন’ দিয়েই রাজত্ব করেছেন জমিয়ে, বাংলাদেশ দলের ভবিষ্যৎ তারকা হিসেবেই দেখা হচ্ছিল তাঁকে।

কিন্তু হঠাৎই নক্ষত্র পতন, খেই হারিয়ে ফেললেন সৌম্য। মাঝেমধ্যেই লম্বা কিছু ইনিংস খেলছিলেন বটে, তবে সেই শুরুর সৌম্যকে ঠিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে ফিরলেন সময়মতোই, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে ইমরুল কায়েসের সঙ্গে জুটি বাঁধলেন, করলেন দারুণ এক সেঞ্চুরি। এরপর ঘরোয়া লিগেও ভালো শুরু করছিলেন, কিন্তু হুট করেই আউট হয়ে যাচ্ছিলেন।

অগত্যা শরণাপন্ন হলেন ভারতের সাবেক ওপেনিং ব্যাটসম্যান ওয়াসিম জাফরের। এরপর ভোজবাজির মতোই বদলে গেলেন সৌম্য, করে বসলেন শতক। জাতীয় দলের কোচ স্টিভ রোডস বললেন, সেঞ্চুরি করেই তৃপ্ত না হয়ে বরং ইনিংস বড় করার চেষ্টা করতে। যেই কথা সেই কাজ, সৌম্য করে বসলেন ডাবল সেঞ্চুরি!

স্রেফ আত্মবিশ্বাসের জোরে সৌম্য বরাবরই নজরকাড়া পারফর্ম করে এসেছেন। আর বৃহস্পতি তুঙ্গে নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছেন এবার, আত্মবিশ্বাস হয়েছে পর্বতপ্রতীম। ব্যাটে-বলে সেরা ফর্মের সৌম্য যে কী করতে পারেন, সেটা সকলেরই জানা। সম্ভাবনা ও সামর্থ্যের কতটুকু এবারের ২০১৯ বিশ্বকাপে প্রমাণ করতে পারবেন, সেটা বলা শক্ত। তবে সাতক্ষীরার সৌম্য ‘শান্ত’ সরকার শেষ পর্যন্ত ‘অশান্ত’ হয়েই বাংলাদেশকে পথ দেখাবেন, এই ভরসাতেই বুক বেঁধেছেন ক্রিকেটভক্তরা।

[সকল তথ্য-উপাত্ত এই বিশ্বকাপের আগপর্যন্ত]