লাইভ রিপোর্ট: টেলরকেও ফিরিয়ে দিলেন মোসাদ্দেক, আশা বাড়ছে বাংলাদেশের

কী একটা রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল! সাকিবের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছে সব। ছবি: রয়টার্স
কী একটা রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল! সাকিবের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছে সব। ছবি: রয়টার্স

বিনিয়োগ উঠল না! আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ইনিংসের গল্পটা এমনই। বড় বড় নামগুলো প্রচুর বল খেলে থিতু হয়ে যখনই হাত খুলে মারবেন মনে হচ্ছিল, তখনই আউট। রান আর বলের ব্যবধানটা তাই আর কমানো গেল না। তার প্রভাব পড়ল সামগ্রিক স্কোরে। ২৪৪ রানে অলআউট হলো টসে হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ। সাকিবের জোড়া শিকার হয়ে গাপটিল ও মানরো ফিরেছেন। ২৪ ওভার শেষে ১২৭ রানে ২ উইকেট নিউজিল্যান্ডের। মুশফিকের শিশুতোষ ভুলে রান আউটের হাত থেকে বেঁচে গেছেন নিউজিল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যান কেন উইলিয়ামসন। ৬১ রানে তৃতীয় উইকেটটা পড়ে গেলে ম্যাচের গল্পটাই অন্য রকম হতো হয়তো!

ডে-নাইট ম্যাচে এই স্কোর নিয়ে লড়াই করাও কঠিন। কিন্তু বাংলাদেশ লড়ছে। এর মূলেও আছেন সাকিব। ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে এসেই ফিরিয়েছেন ফর্মের তুঙ্গে থাকা গাপটিলকে। এরপর নিজের তৃতীয় ওভারে কলিন মানরোকে ফিরিয়েছেন, তাতে অবশ্য বড় কৃতিত্ব মিরাজের দারুণ এক লো ক্যাচে। এই চাপের মুখে পড়ে সাকিবের ওভার মানেই ভুল করে বসছিল কিউইরা। সাকিবের চতুর্থ ওভারে টেলর স্ট্রাইকিং প্রান্ত থেকে পালাতে পারলে বাঁচেন এমন একটা শট খেলে রান হয় না এমন পরিস্থিতিতে দৌড় দেন। উইলিয়ামসন কিছুতেই নিরাপদে পৌঁছাতে পারতেন না। সরাসরি থ্রোয়ে বল স্টাম্পের দিকেই যাচ্ছিল। মুশফিক প্রথম ভুল করেন স্টাম্পের পেছনে অবস্থান নিয়ে। সেই ভুলটা শোধরাতে গিয়ে করেন আরেকটি ভুল। গ্লাভস বাড়িয়ে স্টাম্পের সামনে থেকে বল ধরতে গিয়ে হাত লাগিয়ে বেলই ফেলে দেন! তখনো তিন ফুট দূরে কেন উইলিয়ামসন!

এমনই একটা রান আউট বাংলাদেশের তৃতীয় উইকেট জুটি ভেঙেছিল। দায়টা মুশফিকেরই ছিল। কিন্তু তার প্রায়শ্চিত্ত করতে গিয়ে মুশফিক আরও বড় ভুল করে বসলেন। ওই ওভারের শেষ বলে স্টাম্পিংয়ের সুযোগটাও মিস করলেন, টেলর বেঁচে গেল!

দিনটা আসলেই ভালো গেল না আগের ম্যাচে জয়ের অন্যতম নায়ক মুশফিকের। ৬০ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন সাকিবের সঙ্গে দারুণ এক জুটি গড়ে। ফার্গুসনের প্রথম স্পেল শেষ হয়ে যাওয়ার পর ইনিংস গড়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল। ৫০ রানের একটি জুটিও বেঁধে ফেলেছিলেন। প্রথম ম্যাচেও দুজনের রেকর্ড জুটি পথ দেখিয়েছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু এবার যখনই রানের গতি বাড়ানোর সময়, তখনই দুর্ঘটনা।

কভারে বল ঠেলে দিয়েই দৌড় দিলেন মুশফিক। অন্যপ্রান্তে সাকিব যে একটু এগিয়েই থেমে গেছেন, খেয়াল করেননি। সঙ্গীর কথা শুনে যখন ফিরলেন ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৪তম বারের মতো রান আউট হলেন মুশফিক, বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে যা সবচেয়ে বেশি রান আউটের রেকর্ড। হাবিবুল বাশারও অবশ্য সর্বোচ্চ ২৪ বার রান আউট হয়েছেন।

ওভালের প্রথম ম্যাচের মতো আজও উজ্জ্বল ছিলেন সৌম্য। সাইফউদ্দিনও আটে নেমে ২৩ বলে ২৯ করেছেন বলে তবু কিছুটা রক্ষা। তবে বাংলাদেশের ইনিংসের মূল ভিত্তি শেষ পর্যন্ত সাকিবের ৬৪-ই।

আজ ওভালে কিন্তু প্রথম ম্যাচের মতোই শুরুটা হয়েছিল। দারুণ শুরু এনে দিয়েছেন সৌম্য সরকার। নিউজিল্যান্ডের পেসের জবাব বাউন্ডারি দিয়েই দিচ্ছিলেন। কিন্তু ম্যাট হেনরির বলের লাইনে যেতে ভুল করলেন, ২৫ বলে ২৫ রানের ইনিংসটি থামল নবম ওভারে। সঙ্গীহারা তামিমও টিকলেন না বেশিক্ষণ। ১৪তম ওভারে লকি ফার্গুসনের পেসের কাছে হার মানার আগে ২৪ রান এনে দিয়েছেন তামিম।

তামিম তো এখন এমনিতেই ধীরে শুরু করেন। আজ তাঁর ২৪ এল ৩৮ বলে। কিন্তু বাকিরাও বলের পেছনে বিনিয়োগ করে রানের আসলটা আর তুলে নিতে পারেননি। মুশফিক ৩৫ বলে ১৯। মিঠুন ৩৩ বলে ২৬ করেছেন। মাহমুদউল্লাহ ফিরলেন ৪১ বলে ২০ রান করে। মোসাদ্দেক ২২ বলে ১১। পুরো ইনিংসে মাত্র একটি ছক্কা, সাইফউদ্দিনের ব্যাটে। সাকিবও ভালো স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন। তবে এই ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে নিজের টানা দ্বিতীয় ফিফটিকেও সেঞ্চুরির রূপ দিতে না-পারার হতাশা নিয়ে ফিরেছেন উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিয়ে। ৬৮ বলে ৬৪ রানের ইনিংসটা যেভাবে শেষ হলো, তাঁকেই হতাশ দেখাল সবচেয়ে বেশি। নিজের প্রিয় শট স্কয়ার কাট করতে গিয়ে ক্যাচ।

আজ সুযোগ ছিল মিঠুনের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ সাক্ষাতে মিঠুনই তো সবচেয়ে ধারাবাহিক ছিলেন। সেই সফরের স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়ে দারুণ কিছু শট খেলছিলেনও। কিন্তু আবারও যখন বাংলাদেশ ৪০ ওভারের প্রান্তে দাঁড়িয়ে হাত খুলে মারার ছক কষছে, সেই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মিঠুনের বিদায়।

মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেকের জুটিতে নির্ভর করেছে বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়ের অন্যতম কারিগর ছিল যে জুটি। কিন্তু মাহমুদউল্লাহর বিদায় সেই সম্ভাবনা ভেস্তে দিল। মোসাদ্দেকও পেসের বিপক্ষে নিজের দুর্বলতার কথা মনে করিয়ে সাইফউদ্দিনকে দিয়েছেন সেন্টার স্টেজ। সেই সুযোগে এই তরুণ পেসার নিজের ছোট ফন্টের ‘অলরাউন্ডার’ পরিচয়টার হরফের আকার একটু বাড়িয়ে নিলেন।

তাতেও বাংলাদেশের আড়াই শ হলো না। ব্যাটের পর সাকিব বলেও কাঁধ চওড়া করে দলের ভারটা নিলেন। সাকিবকে দেখলে কিউইরা ভূত দেখার মতো চমকে যায়। আজও কী আতঙ্কটাই না তৈরি করেছিলেন। কিন্তু সেই চাপ থেকে বেরিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড। ম্যাচটাও এখন বেরিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের হাত থেকে! অথচ মুশফিকের গ্লাভসই তা মুঠোয় পুরে দিতে পারত! উইলিয়ামসন শেষ পর্যন্ত আউট হয়েছেন ৪০ রানে। নিউজিল্যান্ডের স্কোর ততক্ষণে ৩ উইকেটে ১৬০। সে ওভারেই টম লাথামকে আউট করেছেন মিরাজ। মোসাদ্দেকের বলে টেলর (৮২) ফিরে যাওয়া আশা ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের স্কোর ৫ উইকেটে ১৯২।

৮২[লাইভ ম্যাচ রিপোর্টে তাৎক্ষণিক আপডেটের কারণে শিরোনামের সঙ্গে মূল খবরের কিছুটা পার্থক্য থেকে যেতে পারে। পাঠকের বিবেচনা প্রার্থনীয়]

বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড স্কোর

টস: নিউজিল্যান্ড

বাংলাদেশ

রান

বল

তামিম ক বোল্ট ব ফার্গুসন

২৪

৩৮

সৌম্য ব হেনরি

২৫

২৫

সাকিব ক ল্যাথাম ব ডি গ্রান্ডহোম

৬৪

৬৮

মুশফিক রান আউট

১৯

৩৫

মিঠুন ক ডি গ্রান্ডহোম ব হেনরি

২৬

৩৩

মাহমুদউল্লাহ ক উইলিয়ামসন ব স্যান্টনার

২০

৪১

মোসাদ্দেক ক গাপটিল ব বোল্ট

১১

২২

সাইফউদ্দিন ব হেনরি

২৯

২৩

মিরাজ ক ল্যাথাম ব বোল্ট

মাশরাফি ক বোল্ট ব হেনরি

মোস্তাফিজ অপরাজিত

অতিরিক্ত

১৮

 

 

 

মোট (৪৯.২ ওভারে, অলআউট)

২৪৪

 

 

 

উইকেট পতন: ৪৫/১ (সৌম্য ৮.৩), ৬০/২ (তামিম ১৩.২), ১১০/৩ (মুশফিক২৩.৫), ১৫১/৪ (সাকিব ৩০.২), ১৭৯/৫(মিঠুন ৩৭.১ ), ১৯৭/৬(মাহমুদউল্লাহ ৪২.৩ ), ২২৪/৭ (মোসাদ্দেক ৪৬.২), ২৩৫/৮(মিরাজ ৪৮.২ ), ২৪৪/৯ (মাশরাফি ৪৯.১ ), ২৪৪/১০ (সাইফউদ্দিন ৪৯.২)

বোলিং: হেনরি ৯.২-০-৪৭-৪, বোল্ট ১০-০-৪৪-২, ফার্গুসন ১০-০-৪০-১, গ্র্যান্ডহোম ৮-০-৩৯-১, নিশম ২-০-২৪-০, স্যান্টনার ১০-১-৪১-১